Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কাতারের ৪র্থ বৃহত্তম জনগোষ্ঠী বাংলাদেশী

qatar-bangladeshiমাথাপিছু জিডিপি ও ক্রয়ক্ষমতায় বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী দেশ কাতার। ২০০৩ সালেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির মোট জনসংখ্যা ছিল সাত লাখের নিচে। জনসংখ্যা বেড়ে ২৫ লাখে পৌঁছলেও এর সিংহভাগই প্রবাসী। এর বড় অংশ আবার বাংলাদেশি। ২ লাখ ৮০ হাজার নাগরিক নিয়ে বাংলাদেশিরাই এখন কাতারের চতুর্থ বৃহত্তম জনগোষ্ঠী।

এদিকে সৌদি জোটের অবরোধের মুখেই বিদেশিদের জন্য আকর্ষণীয় প্রস্তাব দিয়েছে কাতার। এখন বিদেশিরা চাইলে কাতারের স্থায়ী নাগরিক হতে পারবেন। দেশটিতে কর্মরত বিদেশি নাগরিকরাও সেই সুবিধা পাবেন।

chardike-ad

কাতারের সরকারি বার্তা সংস্থা কিউএনএ জানিয়েছে, বুধবার মন্ত্রিপরিষদে বিলটি পাস হয়েছে। এতে করে সেখানে বসবাসরত হাজার হাজার বিদেশি স্থায়ী নাগরিকত্ব পেতে যাচ্ছেন।

নতুন এই আইনের ফলে যেসব শিশুর মা কাতারের নাগরিক এবং বাবা বিদেশি, তারাও সুবিধার আওতায় আসবেন। শিশুটির বাবা এখন চাইলে দেশটির নাগরিক হতে পারবেন। যারা কাতারে সরকারি চাকরি করছেন, তারাও এখন সেখানকার নাগরিক হয়ে যাবেন।

বার্তা সংস্থার খবর অনুযায়ী, কিছু ক্ষেত্রে নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যারা নাগরিকত্ব সুবিধা পাবেন, তারা আরও বেশ কিছু সুবিধার আওতায় অাসবেন। দেশটির অন্যান্য নাগরিকদের মতো তারাও সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। তারাও বিনামূল্যে চিকিৎসা ও শিক্ষা নিতে পারবেন।

দেশটির উন্নয়ন পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয়ের (এমডিপিএস) হিসাবে, ৮৭টি দেশের নাগরিকদের বসবাস রয়েছে কাতারে। জনসংখ্যার দিক দিয়ে কাতারে প্রথম অবস্থান ভারতীয়দের। দেশটিতে অবস্থানকারী ভারতীয়র সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখ, যা সেখানকার মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ। এর পরই রয়েছে নেপাল। কাতারের মোট জনসংখ্যার ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ বা সাড়ে তিন লাখ নেপালি। কাতারে বাংলাদেশি রয়েছেন দেশটির মোট জনসংখ্যার ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। আর কাতারের স্থানীয় জনগণ মোট বসবাসকারীর মাত্র ১২ দশমিক ১ শতাংশ, সংখ্যায় যা ৩ লাখ ১৩ হাজার।

খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ ও ভিশন ২০৩০ ঘিরে নানা উন্নয়নমূলক কাজ করছে কাতার। এ কর্মযজ্ঞ চলছে অভিবাসী শ্রমিকদের দিয়ে। এ কারণে গত ১০ বছরে বিপুল সংখ্যক বিদেশী শ্রমিক কাতারে গেছেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে বাংলাদেশও। দেশটিতে অভিবাসী বৃদ্ধির হারে প্রথম অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশি নাগরিকরা।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ সালে দেশটিতে বাংলাদেশি নাগরিকের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার। ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজারে। অর্থাৎ তিন বছরেই কাতারে বাংলাদেশি নাগরিক বেড়েছে ১০৪ শতাংশ।

qatar-bangladeshiআগামীতে এ সংখ্যা আরো বাড়বে বলে মনে করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) জাবেদ আহমেদ। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরেই কাতারে নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে। সামনে আরো বড় নির্মাণ প্রকল্প নেবে দেশটি। এসব কাজের জন্য তাদের নির্মাণ খাতে বিপুল জনশক্তি প্রয়োজন হচ্ছে। বিষয়টি আগেই উপলব্ধি করে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা নিয়েছিল মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অধীনে যেসব কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে, সেগুলোয় নির্মাণ খাতের বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণে জোর দেয়া হয়েছিল। এসব কেন্দ্র থেকে গত কয়েক বছরে আমরা নির্মাণ খাতের অনেক দক্ষ শ্রমিক পেয়েছি; বিভিন্ন সময় যাদের কাতারে পাঠানো হয়েছে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশগামী শ্রমিকের ২২ শতাংশের গন্তব্য ছিল কাতার। ২০১৬ সালে বিএমইটি থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বৈধভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়েছেন মোট ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে কাতারেই গেছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৩৮২ জন। আর চলতি বছরের এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কাতারে গেছেন ৫১ হাজার ৮৪৯ জন শ্রমিক। ২০১৫ সালে দেশটিতে পাড়ি দিয়েছিলেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৬৫ জন বাংলাদেশি শ্রমিক।

বাংলাদেশি জনশক্তির গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হওয়ার পাশাপাশি রেমিট্যান্সেরও বড় উত্স কাতার। ২০১৬ সালে দেশের প্রবাসী আয়ের ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ আসে কাতার থেকে। ওই বছর বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা দেশে পাঠান ১ হাজার ৩৬০ কোটি ৯৭ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। এর মধ্যে কাতার প্রবাসীরা পাঠান ৫১ কোটি ৫২ লাখ ডলারের বেশি। তবে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ৫ শতাংশ এসেছে কাতার থেকে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি-এপ্রিল সময়ে ৪১১ কোটি ৫৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্সের মধ্যে কাতার থেকে এসেছে ১৮ কোটি ৬৬ লাখ ডলার।

বড় অবদান সত্ত্বেও কাতারে বাংলাদেশিরা এক রকম অভিভাবক ছাড়াই বসবাস করছেন বলে জানান অভিবাসীরা। চার বছর ধরে দেশটিতে বসবাস করছেন বাংলাদেশি নাগরিক নাহিদ নেওয়াজ। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাতারের শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের তুলনায় ভারত, পাকিস্তান ও ফিলিপাইনের জন্য অনেক বেশি সুবিধাজনক। যেমন ফিলিপাইন দূতাবাস দেশটির শ্রমিকদের জন্য একটি শ্রম কার্যালয় খুলেছে। কার্যালয়টি খুবই দক্ষ ও পেশাজীবী মনোভাব নিয়ে কাতারে কাজ করছে। আর বাংলাদেশি শ্রমিকরা কাতারে বসবাস করছেন দূতাবাসের কোনো সহযোগিতা ছাড়াই।

কাতারে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকাংশই নির্মাণ খাতের হলেও পেশাজীবী কর্মী পাঠানোর পরিকল্পনাও চলছে। এ নিয়ে গত বছর বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে যৌথ কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। নার্স, চিকিত্সক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, সেলস পারসনসহ সব খাতে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয় সভায়। আলোচনা হয় সব খাতে দক্ষ নারী কর্মী ও গৃহকর্মী পাঠানোর বিষয়েও।

জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন বলেন, নির্মাণ খাতের পাশাপাশি কাতারে পেশাজীবী জনশক্তিরও চাহিদা রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ। তবে এজন্য কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। বণিক বার্তা