বড় ধরনের বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশে আসছে দক্ষিণ কোরিয়ার এস কে গ্রুপ। এই গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এস কে গ্যাস শুরুতে চট্টগ্রামের মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-৩–এ বাংলাদেশের টি কে গ্রুপের সঙ্গে একটি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায়। এ জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে।
সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেলে যৌথ বিনিয়োগে বাংলাদেশে বড় আকারের একটি পেট্রোকেমিক্যাল কারখানাও প্রতিষ্ঠার আগ্রহ রয়েছে কোরিয়ার এ প্রতিষ্ঠানের।
এলপিজি টার্মিনালে সম্ভাব্য বিনিয়োগ ধরা হয়েছে ২০ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া পেট্রোকেমিক্যাল কারখানায় এস কে গ্যাসের ১২৫ থেকে ১৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা আছে বলে জানিয়েছে টি কে গ্রুপ, যারা এস কে গ্যাসের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে।
এদিকে পেট্রোকেমিক্যাল কারখানা ও এলপিজি টার্মিনাল করার পরিকল্পনা সামনে রেখে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কাছ থেকে মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-৩–এ প্রায় ৩০০ একর জমি নিচ্ছে টি কে গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সুপার পেট্রোকেমিক্যাল প্রাইভেট লিমিটেড (এসপিপিএল)। এ বিষয়ে বেজা ও এসপিপিএলের সঙ্গে আজ রোববার একটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে।
সুপার পেট্রোকেমিক্যালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তফা হায়দার বলেন, ‘বিনিয়োগের জন্য আমরা মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৩০০ একর জমি নিচ্ছি। সেখানে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগ চূড়ান্ত না হলে আমাদের নিজস্ব উদ্যোগে বিনিয়োগ করা হবে।
জানা গেছে, সম্ভাব্য বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এস কে গ্রুপ কোরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। বার্ষিক পণ্য ও সেবা বিক্রি এবং সম্পদের দিক দিয়ে ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্যামসাং ও গাড়ি নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান হুন্দাইয়ের পরেই এস কে গ্রুপের অবস্থান। তাদের মূল ব্যবসা জ্বালানি খাতে। তবে তথ্যপ্রযুক্তি ও অন্যান্য খাতেও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ১১ শতাংশ আসে এ কোম্পানি থেকে।
এস কে গ্রুপের একটি উপস্থাপনায় দেখা যায়, ২০১৫ সালে তাদের পণ্য ও সেবা বিক্রির আর্থিক পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ২০০ কোটি ডলার। একই বছর এটি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাগাজিন ফরচুন–এর সবচেয়ে বেশি আয় করা বৈশ্বিক ৫০০টি কোম্পানির তালিকায় ৬৪তম অবস্থান পায়। জাপানের প্রতিষ্ঠান সনি এ তালিকায় ৮৬তম অবস্থানে ছিল।
এস কে গ্যাসের বিনিয়োগের বিষয়ে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী সম্প্রতি বলেন, ‘এটি হবে খুবই ভালো বিনিয়োগ।’
এস কে গ্যাসের এক উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, তারা প্রাথমিকভাবে নিজস্ব বিশাল জাহাজ বা ভেরি লার্জ গ্যাস ক্যারিয়ারে (ভিএলজিসি) করে এলপিজি সরবরাহ করতে চায়। এ জন্য একটি এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহী তারা। বাংলাদেশের বসুন্ধরা, বিএম, যমুনা, ওরিয়নসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে গণ্য করছে তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপার পেট্রোকেমিক্যালের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এলপিজি টার্মিনালের প্রকল্পটি ২০ কোটি ডলারের। তবে পেট্রোকেমিক্যাল কারখানার বিনিয়োগ হবে ১৫০ কোটি ডলার পর্যন্ত। সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যে ৩০০ একর জমি চেয়েছি, তার ৬০ একরের মতো লাগবে এলপিজি টার্মিনাল করতে। বাকি জমিতে আমরা পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি করতে চাই।’
পেট্রোকেমিক্যাল কারখানায় জ্বালানি তেলের উপজাত থেকে প্লাস্টিকের পণ্য তৈরির কাঁচামাল উৎপাদিত হবে। বাংলাদেশে এ ধরনের শিল্পকারখানা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলে জানান মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এস কে গ্যাসের কর্মকর্তারা প্রস্তাবিত এলাকা পরিদর্শনে আসছেন। পছন্দ হলে দেশে ফিরেই তাঁরা সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা শুরু করবেন। সূত্র: প্রথম আলো