চেনা দর্শকদের সামনে দারুণ ব্যাটিং করেছিলেন বাবর আজম, আহমদ শেহজাদ ও শোয়েব মালিক। এই তিনজনের মারমুখী ব্যাটিংয়ে ভর করেই ঐতিহাসিক সিরিজের প্রথম ম্যাচে বিশ্ব একাদশকে ২০ রানে হারিয়েছে পাকিস্তান।
নিজেদের দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরানোর ঐতিহাসিক সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮৬ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন বাবর। ৩৯ রান করেন আহমদ শেহজাদ আর শোয়েব মালিকের ব্যাট থেক আসে ৩৮ রান। এই তিনজনের ব্যাটে চড়ে ১৯৭ রান করেছে পাকিস্তান। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টস জিতে স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে পাঠান ফ্যাফ ডু প্লেসি।
ম্যাচের প্রথম বলেই চার রান পেয়ে যায় পাকিস্তান। বিশ্ব একাদশের হয়ে বোলিং ওপেন করেন মরনে মরকেল। ফখর জামানের ব্যাটের ভিতরের কোণায় লেগে চার হয়ে যায় বলটি। ওই ওভারেই অবশ্য আউট হয়ে যান ফখর। স্লিপে দারুণ এক ক্যাচ নেন হাশিম আমলা।
প্রথম ওভারে এক উইকেট হারানোর পর থেকেই রুখে দাঁড়ায় পাকিস্তান। স্বদেশী সমর্থকদের সামনে অসাধারণ খেলতে থাকেন বাবর আজম ও আহমদ শেহজাদ।
দ্বিতীয় উইকেটে এ দুজন ১২২ রানের জুটি গড়েন। অসাধারণ এক হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ‘পাকিস্তানের কোহলি’ বাবর আজম। ৫২ বলে ৮৬ রান করেন তিনি। মারেন ১০টি চার ও দুটি বিশাল ছয়। বাবর আজমের উইকেটটি নেন ইমরান তাহির। তিনি আবার লাহোরেরই সন্তান। পরে জীবন তাকে নিয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলে। জীবনই আবার তাহিরকে টেনে এনেছে পাকিস্তানে, তাও পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতেই!
বাবরের আগে বিদায় নেন তার দ্বিতীয় উইকেটের সঙ্গী শেহজাদ। তিনি করে যান ৩৪ বলে ৩৯ রান। এ দুজনের ব্যাটে চড়ে বড় স্কোরের স্বপ্নই দেখছিলো পাকিস্তান। কিন্তু ১২ রানের মধ্যে তাদের দুজনের বিদায়ে তা আর পুরোপুরি সম্ভব হয়নি।
পাকিস্তানের ইনিংসে বিশ্ব একাদশ অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসি নিশ্চিতভাবে তার দলে তৃতীয় একজন বোলারের অভাব অনুভব করছেন। মরনে মরকেল ও ইমরান তাহির তাদের কাজ মোটামুটি ঠিকভাবেই করেছেন। তিনি তৃতীয় বোলার না থাকায় অলরাউন্ডারদের দিয়ে কাজ সারতে গিয়ে বিশ্ব একাদশকে গুনতে হয়েছে প্রচুর রান।
সবচেয়ে বেশি ৫১ রান দিয়েছেন থিসারা পেরেরা। দুটি উইকেটও নিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া মরনে মরকেল, বেন কাটিং ও ইমরান তাহির একটি করে উইকেট নিয়েছেন।
পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৬ রান বাবরের। আর ৩৯ ও ৩৮ রানে দুটি দারুণ ইনিংস খেলছেন আহমদ শেহজাদ ও শোয়েব মালিক। এই ম্যাচ জিততে হলে বিশ্ব একাদশের করতে হবে ১৯৮ রান। অর্থাৎ ওভার প্রতি প্রায় ১০ রান করে তুলতে হবে তাদের। বিশ্ব একাদশের হয়ে এই ম্যাচে ওপেন করেন বাংলাদেশের এক নম্বর ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল।
কিন্তু সুবিধা করতে পারেননি দারুণ ফর্মে থাকা তামিম। ১৮ বলে ১৮ রান করে আউট হন তিনি। তামিমের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টেকেননি হাশিম আমলা। ১৭ বলে ২৬ রান করে বিদায় নেন হাশিম।
১৯৮ রানের মতো বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে যে ধরনের শুরু এনে দেয়া দরকার ছিলো, তা করতে ব্যর্থ হন তামিম-আমলা। পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের পক্ষে আর এই চাপ সামাল দেয়া সম্ভব হয়নি। তারপরও আট নম্বরে নেমে ১৬ বলে ২৯ রান করে শেষ চেষ্টা করেন ড্যারেন স্যামি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেননি তিনি।
এই ম্যাচে, এমন কি এই সিরিজেই জয়-পরাজয় খুব একটা বড় ভূমিকা রাখবে না অবশ্য। কারণ সিরিজটি মূল উপলক্ষ্য হলো পাকিস্তান যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য এখন নিরাপদ, সেটা বিশ্বের কাছে প্রমাণ করা। এই পরীক্ষার প্রথম প্রশ্নে পাশ নম্বরই পাবে পাকিস্তান।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ম্যাচটি দেখতে ভিড় করেছিলেন ২৭ হাজার দর্শক। ছিলেন অনেক সাবেক ক্রিকেটারও। ক্রিকেট পাগল পাকিস্তানি দর্শকদের কাছে এই সিরিজ তাই দীর্ঘ তৃষ্ণা মেটানোর জলের মতো। এই সিরিজের জয়-পরাজয় নিয়ে তাদের বয়েই যাচ্ছে!