Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

পাকিস্তানের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার অবিশ্বাস্য জয়

srilankaএটাই বুঝি ক্রিকেট। এটাই বুঝি ক্রিকেটের গৌরব। যাবে বলে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। আবু ধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে আজ যা ঘটলো, তাতে হয়তো পাকিস্তানকে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। আদতে এই মাঠে জয় হয়েছে ক্রিকেটের গৌরবময় অনিশ্চয়তারই।

যে ম্যাচে নিশ্চিত জয়ের মুখে পাকিস্তান। জয়ের কথা খোদ শ্রীলঙ্কাই যেখানে চিন্তা করেনি। পুঁজি মাত্র ১৩৬ রানের। অনায়াসে, হেসে খেলেই সে লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে পাকিস্তান- এটা তো জানা কথা। কিন্তু নিয়তি যে আড়ালে থেকে মিটি মিটি হাসছিল!

chardike-ad

এমন নিশ্চিত জয়ের ম্যাচেই কি না পাকিস্তান হেরে গেলো ২১ রানের ব্যবধানে! জয়ের জন্য প্রয়োজন মাত্র ১৩৬ রান। এই ম্যাচেই মাত্র ১১৪ রানে অলআউট পাকিস্তান! আবারও ক্রিকেট বিশ্ব দেখল রঙ্গনা হেরাথের স্পিন ভেলকি। ৪৩ রান দিয়ে একাই ৬ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপে ধ্বস নামালেন হেরাথ। ৩ উইকেট নিলেন আরেক স্পিনার দিলরুয়ান পেরেরা। ১ উইকেট নিলেন সুরঙ্গা লাকমাল।

উইনিং উইকেটটা নিতে পারতেন দিলরুয়ান পেরেরা। যদি ওভার স্টেপিংটা না হতো। কিন্তু সেটা আর হলো না, রঙ্গনা হেরাথের জন্যই যেন উইনিং উইকেটটা অপেক্ষা করছিল। মোহাম্মদ আব্বাসের পায়ে বল লাগতেই জোরালো আবেদন এবং আঙ্গুল তুলে দিলেন আম্পায়ার। সঙ্গে সঙ্গেই ইতিহাস গড়ার আনন্দে নেচে ওঠে পুরো শ্রীলঙ্কা শিবির।

হেরাথের আনন্দটা আরও বেশি। কারণ, এই প্রথম কোনো বাম হাতি স্পিনার ৪০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করলো। রেকর্ড আরও আছে তার। চতুর্থ ইনিংসে এ নিয়ে মোট ১১বার ৫ কিংবা তার বেশি উইকেট পেলেন তিনি। এই একটি স্থানে তিনি অদ্বিতীয়। দ্বিতীয় স্থানে আছেন শেন ওয়ার্ন এবং মুত্তিয়া মুরালিধরন। দু’জনই চতুর্থ ইনিংসে ৫ কিংবা বেশি উইকেট নিয়েছেন ৭বার করে। এছাড়া হেরাথের রেকর্ড আরও একটি আছে। এই প্রথম কোনো বোলার হিসেবে টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০০ উইকেট নিলেন হেরাথ। বোঝাই যাচ্ছে, পাকিস্তান তার কতটা প্রিয় প্রতিপক্ষ।

১৩৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম থেকেই বাজে ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী করে আসছিল পাকিস্তান। শুরুতেই উইকেট হারান ওপেনার সামি আসলাম। দলের রান তখন ৪ এবং সামি আসলামের রান ২। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামেন প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৫ রান করা আজহার আলি। তার ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে ছিল সবাই। কিন্তু সবাইকে নিদারুণ হতাশ করলেন তিনি। আউট হয়ে গেলেন কোনো রান না করেই! দলীয় ৭ রানে পড়লো দ্বিতীয় উইকেট।

দলীয় ১৬ রানে বিদায় নিলো চতুর্থ উইকেটও। এ সময় আউট হন শান মাসুদ। তার নিজের নামের পাশে তখন রান মাত্র ৭। এরপর উইকেটে আসেন আসাদ শফিক এবং বাবর আজম। দু’জন চেষ্টা করেন বিপর্যয় সামাল দেয়ার। কিন্তু ১৬ রানের জুটি গড়ার পরই দিলরুয়ান পেরেরার ঘূর্ণিতে নাকাল বাবর আজম। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে। নিরোশান ডিকভেলার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান যখন তখন তার নিজের রান ৩।

কিছুক্ষণ টিকে থেকে আস্থা অর্জন করছিলেন আসাদ শফিক। কিন্তু তিনিও পারলেন না টিকে থাকতে। ব্যাক্তিগত ২০ এবং দলীয় ৩৬ রানে রঙ্গনা হেরাথের ঘূর্ণি ফাঁদে পড়েন তিনি। করুনারত্নের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সাজঘরে।

হারিস সোহেল আর সরফরাজ আহমেদ মিলে কিছুটা বাধ দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ৪২ রানের জুটি গড়ার পর তাদের দু’জনের এই চেষ্টাও বালির বাধের মত উড়ে যায় হেরাথের স্পিন ভেলকির কাছে। ১৯ রান করে আউট হন সরফরাজ। হারিস সোহেল করেন সর্বোচ্চ ৩৪ রান। তিনি ধরা পড়েন পেরেরার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। এরপর আর কোনো প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান ছিল না। হাসান আলি (৮), মোহাম্মদ আমির (৯), ইয়াসির শাহ (৬*) চেষ্টা করলেও উজ্জীবিত লঙ্কানদের চেপে ধরা থেকে আর বের হতে পারেনি পাকিস্তান। ফলে ২১ রানে পরাজয় বরণ করতে হলো সরফরাজ আহমেদকে।