Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষিকার ঘুমের ছবি নিয়ে তোলপাড়

diptiসিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষিকার ঘুমের ছবি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবিটি ছড়িয়ে দেয়ায় সমালোচিত হচ্ছেন জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা ইকবাল আহমদ।

বুধবার জকিগঞ্জের খলাছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির মডেল টেস্ট পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা চলাকালীন টেবিলের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েন শিক্ষিকা দীপ্তি রানী বিশ্বাস। পরীক্ষা শুরুর পর হল পরিদর্শনে যান জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ। এ সময় ৫-৬ মিনিট পরীক্ষার হলে অবস্থান করার পর ওই শিক্ষিকার ঘুম ভাঙে। এরই মধ্যে এক সহকারীর মাধ্যমে ঘুমন্ত শিক্ষিকার ছবি তুলে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন উপজেলা চেয়ারম্যান।

chardike-ad

পরীক্ষা চলাকালে শ্রেণিকক্ষে টেবিলে মাথা রেখে শিক্ষিকার ঘুমের ছবি ফেসবুকে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় দায়িত্বহীন কাজের সমালোচনা। অনেকেই বুঝে না বুঝে ছবিও শেয়ার করতে থাকেন। তবে অনেকেই ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দায়িত্বহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

একজন শিক্ষক তার দায়িত্বে অবহেলা করলে তার ছবি কেন তোলা হবে? কতটা শোভনীয় কাজ করেছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। একজন শিক্ষক ২৪ ঘণ্টাই শিক্ষক। পড়াশোনা করানোর বাইরেও প্রতিদিনই কাজ করতে হয়।

শিক্ষক দীপ্তি রানী বিশ্বাস বলেন, ‘তিনদিন ধরে আমার শরীর খারাপ। আমার স্বামী বাড়িতে এসে ওষুধ দিয়ে গেছেন। সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে হেড স্যারের কাছ থেকে ছুটি নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ছুটি না নিয়ে নিজের দায়িত্বের প্রতি সম্মান আর সহকর্মীদের সহযোগিতার কথা ভেবে স্কুলে গেলাম। যাওয়ার পর পরীক্ষার ডিউটিতে ছিলাম। শরীর মোটামুটি ভালোই আছে। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম মাথা ঘুরাচ্ছে। তাই চেয়ারে গিয়ে বসলাম। এরপর হঠাৎ মাথা টেবিলে লেগে গেছে বুঝতেই পারি নাই।’

তিনি আরও বলেন, ৫-৭ মিনিট ধরে শরীর কাঁপছে। এ অবস্থায় দেখি জকিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান তার সহকারীকে দিয়ে ছবি তোলাচ্ছেন। পরে স্কুলের অফিসে গিয়ে উনি আমার নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করেন। আমার সামনেই কে এম মামুন নামে একজনকে ফোন দিয়ে ছবিগুলো পাঠান। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে কেন তিনি এমনটি করলেন? উনারও তো একটি পরিবার আছে।

গণমাধ্যমকর্মী ইকবাল মাহমুদ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের জানা উচিত, দলবল নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে। তিনি সেটি লঙ্ঘন করেছেন। আর একজন নারীর অপ্রস্তুত অবস্থার ছবি তোলা ও তা অনলাইনে ছাড়ার মত ভয়ংকর অপরাধ করেও তিনি এখনও গ্রেফতার হননি, এটাই বিস্ময়।’

বালাগঞ্জ সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক অহী আলম রেজা লেখেন, দোষ শুধু শিক্ষকের। কতটুকু নিষ্পাপ তিনি। ঘুমন্ত অবস্থায় একজন শিক্ষিকের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে কতটুকু শোভন কাজ করলেন জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। প্রতিনিয়ত অনিয়ম করছি আমরা। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে নিচু স্তর পর্যন্ত অনিয়ম হচ্ছে। কতটুকু আমরা দেখি। তিনি নিজেও নানা অনিয়মের কারণে পদ থেকে একাধিকবার বরখাস্ত হয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জকিগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. রফিজ মিয়া বলেন, কোনো শিক্ষক অনিয়ম করলে ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা নেয়া হয়। এভাবে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা ঠিক হয়নি।

এ বিষয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদের বক্তব্য জানতে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও ফোনটি বন্ধ পাওয়ায় যায়।