Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দক্ষিণ কোরিয়ার ট্যাংক, হেলিকপ্টার রপ্তানি বৃদ্ধি

উত্তর কোরিয়ার অব্যাহত পরমাণু হামলার হুমকি এবং বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা হুমকিতে গোটা বিশ্বেই উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিশেষত উত্তর কোরিয়ার প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় উত্তেজনা আকাশ ছুঁয়েছে। তবে এ অস্থির সময় আর সংশয়কে কাজে লাগিয়েই ব্যবসা করে নিচ্ছে কেউ কেউ। তার একটি হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার অস্ত্র ব্যবসা। যার মধ্যে কোরিয়ায় নির্মিত ট্যংক, হেলিকপ্টার রপ্তানি বেড়েছে উল্লেখযোগ্যহারে। খবর এএফপি।

কয়েক দশক ধরে দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারকদের একটি এবং এর অন্যতম সরবরাহকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। তবে সম্প্রতি দেশটির অভ্যন্তরীণ অস্ত্র খাত দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

chardike-ad

গত এক দশকে অস্ত্রের রফতানি কয়েক গুণ বেড়েছে। সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০০৬ সালের ২৫ কোটি ৫৩ লাখ ডলার থেকে বেড়ে গত বছর সেটি ২৫০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র, হাউইটজার, সাবমেরিন এবং যুদ্ধবিমান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকায় বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

দক্ষিণ কোরিয়ায় নির্মিত কে২ ট্যাংক

একসময়ের যুদ্ধবিধ্বস্ত, কৃষিনির্ভর, অনুন্নত দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিগুলো এখন স্মার্টফোন থেকে জাহাজ নির্মাণ পর্যন্ত নানা রকম বৈশ্বিক ব্যবসার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে। অস্ত্র উৎপাদনকারীরাও এসব শিল্পের দেখানো পথে চলে বিশ্ববাজারে তাদের অবস্থান আরো উঁচুতে নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলেন, ঘরের দরজায় উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র থাকায় আন্তর্জাতিক সামরিক মনোযোগ দক্ষিণ কোরিয়ার বাহিনী ও তাদের ব্যবহার করা অস্ত্রের ওপর জোরালো হয়েছে।

বিমান এবং নিরাপত্তা পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান টিল গ্রুপের বিশ্লেষক রিচার্ড আবুলাফিয়া বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী খুবই সমীহ করার মতো, কারণ দেশটি একটি জটিল কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে। এটি দুনিয়ার অন্যতম বিপজ্জনক হুমকির মুখে আছে এবং এর সেনাবাহিনী এ অবস্থা মোকাবেলার জন্য যথেষ্ট রকম প্রস্তুত।

‘এসব কারণে দেশটির সেনাবাহিনী যেসব অস্ত্র নির্বাচন করে, সেগুলো খুবই সমীহ করার মতো।’ বলেন এ বিশ্লেষক। তিনি বলেন, এখন দক্ষিণ কোরিয়ার অস্ত্র মানের দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় প্রতিযোগীদের কাছাকাছিই কেবল নয়, দামেও সস্তা।

শো-পিস অস্ত্র

চলতি সপ্তাহে সিউল ইন্টারন্যাশনাল অ্যারোস্পেস অ্যান্ড ডিফেন্স এক্সিবিশনে  দেশে প্রস্তুতকৃত উন্নত অস্ত্রের প্রদর্শনী করা হয়। আয়োজকরা বলছেন, এটি অতীতের মতো বিদেশী সরবরাহকারীদের বাজার ধরার একটি আয়োজন নয়, বরং এর উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ কোরীয় অস্ত্র উৎপাদকদের ক্ষমতা প্রদর্শন।

প্রদর্শকদের মধ্যে ছিল কয়েকটি নামকরা কোরিয়ান কোম্পানি। হুন্দাই সাঁজোয়া যান এবং যুদ্ধাস্ত্রসজ্জিত রোবটের প্রদর্শনী করে, শক্তপোক্ত অথচ সস্তা পারিবারিক গাড়ি প্রস্তুতের জন্য পরিচিত কিয়া মোটরস হাল্কা সাঁজোয়া যানের সম্ভার দেখায়।

ইন্স্যুরেন্স এবং হোটেল ব্যবসার জন্য বেশি পরিচিত হানওয়া গ্রুপ বিশাল একটি মানুষবিহীন ভূমিযানের প্রদর্শনী করে।

দেশে প্রস্তুতকৃত অস্ত্রের মধ্যে ছিল— কে টু ট্যাংক, কে নাইন স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি এবং সুরিয়ান ইউটিলিটি হেলিকপ্টার।

তবে দক্ষিণ কোরিয়ার শো-পিস অস্ত্র হচ্ছে টি-৫০। এটি একটি উন্নত সুপারসনিক ট্রেইনার জেট, যেটি রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত কোরিয়া অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (কেএআই) এবং যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিনের যৌথ প্রচেষ্টায় নির্মিত। এ অস্ত্রটির হালকা একটি সংস্করণও প্রদর্শন করা হয়।

গত এক দশকে ৬০টির মতো টি-৫০ থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক ও ফিলিপাইনের মতো দেশে রফতানি করে ২৩০ কোটি ডলারেরও বেশি উপার্জিত হয়েছে এবং কেএআই আফ্রিকান ও লাতিন আমেরিকান সম্ভাব্য গ্রাহকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে।

কেআইএর আন্তর্জাতিক বিপণনের প্রধান চোই স্যং-ইয়ল বলেন, ১০ বছর আগেও মানুষ দক্ষিণ কোরিয়ার যুদ্ধবিমান নিয়ে আলোচনা করতে চাইত না, তবে এখন সে ধারণার আমূল পরিবর্তন হয়েছে বলে তিনি জানান।

জনপ্রিয়তা পেয়েছে কোরিয়ায় নির্মিত ক৯ আর্টিলারী

কেএআই যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সঙ্গে একটি ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের চুক্তি করতে চাইছে, যাতে সে দেশের সেনাবাহিনী ৩৫০টি পুরনো হয়ে যাওয়া ট্রেনিং জেট বদলে টি-৫০ ব্যবহার করবে। অবশ্য এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটি বোয়িং ও এর অংশীদার সাআবের তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে। চোই বলেন, যদি চুক্তিটি সস্পন্ন হয়, তবে তা হবে দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সামরিক চুক্তি এবং এটি ভবিষ্যতের জন্য আরো অনেক বাজার উন্মুক্ত করবে।

সম্প্রতি কোরিয়া ইনস্টিটিউট ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক্স অ্যান্ড ট্রেডের এক রিপোর্টে জানা যায়, ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে টি-৫০ বিক্রি বাবদ কোরিয়ার সামরিক রফতানি ১২০ কোটি ডলার ছুঁতে পারে।

উত্তর কোরিয়ার হুমকির মুখে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার যে পরিমাণ সামরিক বরাদ্দ রেখেছে, তা মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার বিবদমান অঞ্চল ছাড়া সবচেয়ে বেশি বলে জানায় স্টকহোম পিস রিসার্চ ইনস্টিউট।

সামরিক খাতে কোরিয়ার ব্যয় জাতীয় বাজেটের ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, যা যুক্তরাষ্ট্রের ৯ দশমিক তিন শতাংশকে ছাড়িয়ে গেছে।

দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট অস্ত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একটি টি-৫০ এর ককপিটে বসে ছবি তোলার সময় বলেন, ‘আমাদের অস্ত্র শিল্পকে স্থানীয় উৎপাদক থেকে উন্নতমানের অস্ত্রের রফতানি শিল্পে পরিণত হতে হবে।