Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ত্রাণের টিন ও সোলার বিদ্যুৎ মেরে আ’লীগ নেতার ফলবাগান

natore-newsনাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আবুল হোসেনের পেয়ারা বাগানে ব্যবহার করা হচ্ছে সরকারি ত্রাণের টিন ও সোলার বিদ্যুৎ (সোলার প্যানেল)। ছবি সংবলিত এমন পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় উপজেলাজুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। সরকারি দলের উপজেলা সভাপতির বিরুদ্ধে আনা এমন অভিযোগে সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। তবে এসব অভিযোগ টিকবে না বলে উড়িয়ে দিয়েছেন অধ্যাপক আবুল হোসেন।

নজরুল খান নামে একটি আইডি থেকে গত ১৫ ডিসেম্বর দেয়া পোস্টে লেখা হয়, ‘গরিব সাধারণ মানুষের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি ১০ বান্ডিল টিন মেরে খেয়েছে বাগাতিপাড়ার ভুয়া দুর্নীতিবাজ আবুল হোসেন। জনগণের নামে ও বাগাতিপাড়া আওয়ামী লীগ পার্টি অফিসের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি সোলার প্যানেল নিজের পেয়ারা বাগানে লাগিয়ে আলোকিত করছেন। এই অন্যায়ের বিচার চাই। পোস্টে আরো উল্লেখ করা হয়, মৃত ১০ ব্যক্তির নাম স্বাক্ষর করে সরকারি ত্রাণের টিন নিজের পেয়ারা বাগানে লাগিয়ে সাধারণ জনগণের হক মেরে খাওয়ার অপরাধের তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।’

chardike-ad

জানা যায়, বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি সোলার প্যানেল নিজের পেয়ারা বাগানে লাগিয়ে আলোকিত করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন। এ ছাড়া দরিদ্র মানুষের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি ১০ বান্ডিল ত্রাণের টিন তিনি নিজের বাগানে ব্যবহার করছেন। মৃত ১০ ব্যক্তির নাম স্বাক্ষর করিয়ে এ টিন আত্মসাৎ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পরিবেশ বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রতিটি উপজেলায় টিন ও নগদ সহায়তা বাবদ অর্থ আসে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত এ সহায়তার পরিমাণ এক বান্ডিল টিন ও তিন হাজার টাকা। এসব সহায়তার একটা বড় অংশ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা সরকারদলীয় নেতাদের সুপারিশের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হোসেন ভুয়া নাম সুপারিশ করে টিন ও টাকা তুলে নিয়েছেন। এ কাজে সহায়তা করেছে স্থানীয় ঠেঙ্গামারা ও আভা এনজিও।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আভার নির্বাহী পরিচালক মোখলেছুর রহমান জানান, তারা শুধু উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার দেয়া অনুমোদিত তালিকা ও সরকারি বিধি এবং নির্ধারিত মূল্যে সোলার বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। অনিয়ম বা দুর্নীতির সাথে তারা জড়িত নন।

বাগাতিপাড়া উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তবে ত্রাণের টিন বা সোলার বিদ্যুৎ যাদের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল, তারাই সেগুলো অফিস থেকে নিয়ে গেছেন। কিন্তু সেগুলো কিভাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হোসেনের পেয়ারা বাগানে গেল বা সেখানে আদৌ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সুকুমার মুখার্জী বলেন, এ ঘটনায় এলাকায় দলের সুনাম ক্ষুণ হচ্ছে। দলের একজন শীর্ষপদের নেতা এমন দুর্নীতির সাথে জড়িত হওয়ায় এবং ফেসবুকে প্রচার হওয়ায় আমরা পথে চলাচল করতে পারছি না। সাধারণ মানুষ বিষয়টি নিয়ে হাসাহাসি করছে। ঘটনাটি নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ কারণে জেলা কমিটিসহ দলের উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে আবুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এমন অভিযোগকে মিথ্যা বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে বলেছেন, এটি তার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে নাটোর-১ (বাগাতিপাড়া-লালপুর) আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেয়ায় বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ ও তার সমর্থকেরা এসব অপপ্রচার করছেন। এ ব্যাপারে তিনি সংসদ সদস্যের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন পারলে তারা আমার দুর্নীতি প্রমাণ করুক।

স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে বলে শুনেছি। স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে ােভ সৃষ্টি হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দলীয় ফোরামে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেছেন, ত্রাণের ঢেউটিন ও সোলার প্যানেল উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ব্যবহার করছেন বলে তিনিও শুনেছেন। এ বিষয়ে দ্রুত তদন্ত শুরু করা হবে।