Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে প্রবাসীদের

workersনিজ দেশের ভূখণ্ড ছেড়ে জীবন-জীবিকার তাগিদে পরবাসে ঠাঁই নেন প্রবাসীরা। দেশের মায়া ত্যাগ করে হাজার মাইল দূরে শ্রম বিক্রি করা এই প্রবাসীরা স্বপ্ন পূরণের আশায় কাজ করেন বছরের পর বছর। সবারই লক্ষ্য থাকে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হয়ে ফিরে আসবেন দেশে। অথচ শ্রম বিক্রিতে ব্যস্ত প্রবাসীদের কর্মক্ষমতার পাশাপাশি কমতে থাকে আয়ুষ্কাল।

ল্যাম্পপোস্টের আলো দেখে যাদের ভোর হয়, তাদের চোখে রাতও নামে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে। মাঝখানে দিনের আলো শুধুই কর্মযজ্ঞে ব্যস্ততা। ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা কর্মস্থলে ব্যয় করে যখন তারা ঘরে ফেরেন তখনই শুরু হয় নানামুখী চিন্তা। কখনো পারিবারিক চিন্তা, কখনো ভিসার মেয়াদ উর্ত্তীণ হয়ে যাবার চাপ, ভিসা পরিবর্তনের খরচ জোগাতে হিমশম খাওয়া, কখনো বা কোম্পানি বন্ধ হয়ে দেশে ফেরার ভয়। নিদ্রাহীন এসব প্রবাসীদের পেয়ে বসে হৃদরোগ। নিয়তির বিধানে কারো কারো জীবন অবসান ঘটে যায় নিষ্ঠুর পরবাসে।

chardike-ad

হৃদরোগ, সড়ক দুর্ঘটনা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, হত্যাসহ প্রতিবছরেই মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয় হাজারও প্রবাসীর নাম। এ তালিকা লম্বা হয় হৃদরোগে আক্রান্ত প্রবাসীদের নামে। বয়সের ভারে নয় বরং তাজা যুবকরাও হৃদরোগে ঝরে যান অকালে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি ও দুবাইয়ে গত এক বছরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যথাক্রমে শতকরা ৭৭ ভাগ ও ৪৯ ভাগ প্রবাসী মারা গেছেন।

আবুধাবিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) ড. মোহাম্মদ মোকসেদ আলী জানান, গত বছর আবুধাবী ও এর অধীনস্থ শহরগুলোতে বিভিন্নভাবে মারা গেছেন ১৪৪ জন প্রবাসী। তাদের মধ্যে ১১১ জনই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রবাসীরা মাত্রাতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বিশেষ করে ভিসার মেয়াদ শেষে নবায়নের চিন্তা, ভালো কর্মসংস্থান না পাওয়া, মাস শেষে ঠিক মত বেতন না পাওয়াসহ পারিবারিক নানা দুশ্চিন্তা তাদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।’

দুবাই ও উত্তর আমিরাত বাংলাদেশ কনস্যুলেটের প্রথম সচিব ( শ্রম) একেএম মিজানুর রহমান জানান, ‘দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের অধীনস্থ শহরগুলোতে গত বছর বিভিন্নভাবে ২৪৪ জন প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে হৃদরোগে মারা গেছেন ১২০ জন, সাধারণ মৃত্যু ৫২ জনের, সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০ জন, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় ১৩ জন, আত্মহত্যা-হত্যা মিলে ১৯ জন প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে।’

এছাড়াও সৌদি আরবের জেদ্দা কনস্যুলেটের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত বছর বিভিন্নভাবে সেখানে মারা যান ৮৩০ প্রবাসী বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে হৃদরোগ ও সাধারণ মৃত্যু ৫৯৯ জন, সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭১ জন, আত্মহত্যা ১৯ জন ও অন্যান্য ৪১ জনের মৃত্যু হয়। বাহরাইন মানামা বাংলাদেশ কনস্যুলেটের তথ্য অনুযায়ী সেখানে গত বছর বিভিন্নভাবে ১১৩ জন প্রবাসীর মৃত্যু হয়, এতে হৃদরোগ ও সাধারণ মৃতের সংখ্যা ৮২ জন।

প্রবাসীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া প্রসঙ্গে রাস আল খাইমা ফজল ক্লিনিকের পরিচালক ডাক্তার ফজলুর রহমান বলেন, ‘প্রবাসে যারা সিটিং চাকরি করে তাদের মধ্যে বেশির ভাগ হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে। বর্তমানে যারা সাধারণ শ্রমজীবী তাদের মধ্যেও হৃদরোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বাড়ছে। কারণ তারা দেশ থেকে অনেক দূরে থাকে, তাদের মধ্যে সারাক্ষণ দেশের পরিবার পরিজনের জন্যে চিন্তা কাজ করে। আর্থিক অস্বচ্ছলতাও এর জন্যে দায়ী। তবে চর্বিযুক্ত খাবার ও সিগারেট সেবনের প্রবণতাও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।’

তিনি অারও বলেন, ‘হৃদরোগ ও মৃত্যু ঝুঁকি কমাতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার বাদ দেয়া, নিয়মিত ব্যায়াম ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা, ব্লাড প্রেসার ও ডায়বেটিস চেক করাসহ প্রবাসীদের সচেতন করতে কমিউনিটি সংগঠনগুলোর উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। সপ্তাহে বা মাসে অন্তত একটি করে হলেও সচেতনতামূলক সেমিনার, প্রশ্ন-উত্তর পর্ব করলেও প্রবাসীদের হৃদরোগের ঝুঁকি কিছুটা কমে আসতে পারে।’

সবার আগে প্রবাসীদের লাইফস্টাইল ঠিক করার কথা জানান দুবাই বাংলাদেশ স্যোশাল ক্লাবের সভাপতি প্রকৌশলী নওশের আলী। তিনি বলেন, ‘পরিবার পরিজন ছেড়ে প্রবাসে ৮-১০ জন মিলে একই রুমে থাকা, মানসিক চাপ নিয়ে কাজ করা, এগুলো দিন দিন হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তবে খাদ্যাভ্যাসও এর জন্যে দায়ী। চাইলেই চর্বিযুক্ত খাবার ছেড়ে দেয়া যায় না। তবে ধীরে ধীরে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। পাশাপাশি ব্যাংক লোনে জড়িয়েও অনেক কষ্টে পড়ে যান প্রবাসীরা। নানামুখী চিন্তার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কমিউনিটি সংগঠনগুলো সচেতনতামূলক ছোট-খাটো কোর্স নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। এতে করে সচেতন প্রবাসীদের কিছুটা হৃদরোগের ঝুঁকি কমে আসবে।’

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন