luciবেশ কয়েকবার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন তিনি। পাননি। তবে একেবারে শূন্য হাতে তাঁকে ফেরায়নি এ দেশ। ৫৭ বছর ধরে এ দেশে মানুষের সেবা করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জীবনের মায়া তুচ্ছ করে যুদ্ধাহত ব্যক্তিদের শুশ্রূষা করেছেন। মানবদরদি এই ব্রিটিশ নাগরিক লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্টের ভিসা ফি মওকুফের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে ১৫ বছরের জন্য তাঁকে মাল্টিপল ভিসা দেওয়া হয়েছে। তাঁকে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় রেখেছে সরকার।

শুক্রবার দুপুরে বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান লুসি হল্টের ভিসা ফি মওকুফের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মনিরা হকের স্বাক্ষর করা এ-সংক্রান্ত একটি নোটিশ জারি হয়েছে।

chardike-ad

হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এটা অনেক আনন্দের বিষয় আমাদের জন্য। এমন একজন মানবদরদি নারীর জন্য এতটুকু করতে পেরে আমরা গর্বিত। এটা গোটা বরিশালবাসীর জন্য একটি সুখবর।’

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘তাঁর নাগরিকত্ব চেয়ে করা আবেদনের একটি অনুলিপি আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছিলাম। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আবেদন করার ১১ দিনের মাথায় ভিসা ফি মওকুফের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করি, তাঁর নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টিও অল্প দিনের মধ্যে সুরাহা হবে।’

৮৭ বছর বয়সী লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্টের জন্ম ১৯৩০ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যের সেন্ট হ্যালেন্সে। বাবা জন হল্ট ও মা ফ্রান্সিস হল্ট। দুই বোনের মধ্যে ছোট লুসি। তাঁর বড় বোন রুত অ্যান রেভা ফেলটন স্বামী ও তিন ছেলে নিয়ে তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। লুসি ১৯৬০ সালে প্রথম বাংলাদেশে আসেন। যোগ দেন বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনে। এখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের পড়াতেন।

এরপর ২০০৪ সালে অবসর নেওয়ার পর তিনি আর দেশে ফিরে যাননি। বর্তমানে বরিশাল অক্সফোর্ড মিশনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি শিশুদের ইংরেজি পড়ান। এর জন্য তিনি কোনো পারিশ্রমিক নেন না। শিশুদের জন্য তহবিল সংগ্রহেরও কাজ করছেন তিনি। ৫৭ বছর ধরে ঘুরে ফিরে তিনি কাজ করেছেন যশোর, খুলনা, নওগাঁ, ঢাকা ও গোপালগঞ্জে। এখন এই দেশের মাটিতেই তিনি সমাহিত হতে চান। এটাই তাঁর শেষ ইচ্ছা বলে জানিয়েছিলেন।

লুসি হল্টকে এ দেশে অবস্থানের জন্য প্রতিবছর ভিসার মেয়াদ বাড়াতে ৩৮ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। তিনি মাসে অবসর ভাতা পান ৭৫ পাউন্ড (সাড়ে সাত হাজার টাকা)। সামান্য এই অর্থ থেকে বাঁচিয়ে এত দিন ভিসার জন্য ব্যয় করেছেন। এ জন্য তিনি বেশ কয়েকবার এ দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন। তবে কোনো সাড়া পাননি।

সৌজন্যে- প্রথম আলো