Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নতুন শুল্কের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের কড়া জবাব

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইন তার দেশের রফতানিকৃত পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নতুন শুল্কের বিরুদ্ধে ‘কড়া’ জবাবের আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি দক্ষিণ সিউলে জেনারেল মোটরস কোম্পানির একটি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনাকে তিনি অঞ্চলটির জন্য বিপর্যয় বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে ওই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কার্যক্রম শক্তিশালী রাখার জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

chardike-ad

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দেন এবং কোরিয়ার সঙ্গে ২০১২ সালে সম্পাদিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিলের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতকে সংরক্ষণবাদী সুবিধা দিতে চাওয়া ট্রাম্প এ চুক্তিটিকে বিপর্যয় বলেও আখ্যা দিয়েছেন।

দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় আপত্তি জানাবে, অন্যদিকে বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপটির ব্যাপারে ‘জোরালো অসন্তোষ’ জানিয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উত্তেজনা এমন একসময় বৃদ্ধি পেল, যখন সিউল ও ওয়াশিংটন উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হামলার বিরুদ্ধে জবার দেয়ার জন্য একজোট হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

সহযোগীদের সঙ্গে এক বৈঠকে মুন যুক্তরাষ্ট্রের ‘অতিরিক্ত সংরক্ষণবাদ’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এতে রফতানিনির্ভর, বিশ্বের ১১তম বৃহৎ অর্থনীতি কোরিয়ার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।

মুন বলেন, আমাদের রফতানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাধা নিয়ে আমি চিন্তিত। এর ফলে বিশ্ববাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও আমাদের ইস্পাত, ইলেকট্রনিকস, সোলার প্যানেল ও ওয়াশিং মেশিন রফতানির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

তিনি আরো বলেন, আমি চাই (কর্মকর্তারা) অযৌক্তিক সংরক্ষণবাদী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আত্মবিশ্বাসী এবং কঠোর মনোভাব নিয়ে জবাব দিক। পর্যালোচনা করে দেখা হোক, এ পদক্ষেপগুলো বর্তমানের কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ধারা ভঙ্গ করে কিনা। এ বিষয়ে তিনি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছেও আপত্তি জানানোর বিষয়টি উল্লেখ করেন।

এছাড়াও মুন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে তারা দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিটির শুল্ক বিষয়ক সমঝোতায় ‘অন্যায্য বিষয়গুলোর বিষয়ে সক্রিয়ভাবে বিতর্ক করেন’। মুনের মন্তব্যগুলো এমন একসময় এল, যার কয়েক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ দক্ষিণ কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে আমদানিকৃত ইস্পাতের ওপর উচ্চমাত্রার শুল্ক আরোপের সুপারিশ করেছে।

নির্বাচিত হওয়ার আগে ও পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি পূরণের প্রতিজ্ঞা করেছেন, তবে ট্রাম্পের শাসনামলের প্রথম বছরে এটি উল্টো ১২ শতাংশ বেড়ে ৫৬ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।

গত বছরের জুলাইয়ে ট্রাম্প প্রশাসন সিউলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিটির ব্যাপারে পুনঃসমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছিল। তাদের দাবি ছিল, চুক্তিটির ত্রুটির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোরিয়ার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে চলছে।

তবে এ বিষয়ে কয়েক দফা আলোচনা খুব বেশি অগ্রসর হয়নি। সিউলের প্রধান বাণিজ্য নেগোশিয়েটর কিম হিউন-চং বলেন, এ বিষয়ে ‘আরো অনেক দূর যাওয়ার আছে।’ সামনের মাসে ওয়াশিংটনে এ বিষয়ে আরেক দফা আলোচনা হওয়ার কথা আছে।

এদিকে গত সপ্তাহে জিএম দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে গুনসানে অবস্থিত কারখানাটি মে মাসের মধ্যে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। দেশটিতে কোম্পানিটির আরো তিনটি কারখানার ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, তা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত হবে।

মুন এ বিষয়ে বলেন, গুনসান শহর এবং নর্থ জিয়োল্লা প্রদেশে কর্মসংস্থান (জিএমে) এবং সাবকন্ট্রাক্টরদের সংখ্যা কমে যাওয়ার ভার বহন করা কঠিন হবে।

তিনি এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ‘আক্রমণাত্মক’ হওয়ার নির্দেশ দিয়ে গুনসানকে ‘কর্মসংস্থানের সংকটময় এলাকা’ ঘোষণাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন।

প্রায় দুই হাজার কর্মীসমৃদ্ধ জিএমের কারখানাটি তিন বছর ধরে সক্ষমতার মাত্র ২০ শতাংশ উৎপাদন করছিল। শ্রমিকরা ধর্মঘটের হুমকি দিয়ে বলেছেন, কারখানাটি বন্ধ করে দেয়া হবে তাদের জন্য ‘মৃত্যুদণ্ডাদেশ’।

গত বছরের মে মাসে ক্ষমতাগ্রহণের পর মুন নতুন কর্ম সৃষ্টি, বিশেষত তরুণ দক্ষিণ কোরীয়দের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে জোর দেন। জিএমের কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘোষণা এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পরিকল্পনায় বড় আঘাত হয়ে এসেছে। বণিকবার্তা থেকে।