Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

স্নিগ্ধাকে ধর্মান্তরিত ও বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল কামরুল

রংপুরে আইনজীবী রথিশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা হত্যাকাণ্ডের সব নেপথ্য নতুন নতুন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল রথিশ চন্দ্রের স্ত্রী দীপা ভৌমিকের প্রেমিক কামরুল ইসলাম। তার পরিকল্পনাতেই ২৯ মার্চ রাত সাড়ে দশটার দিকে হাত-পা বেঁধে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করা হয় আইনজীবী রথিশকে।

chardike-ad

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আইনজীবী রথিশের সঙ্গে তার স্ত্রীর কলহ লেগেই থাকতো। এছাড়া একে অপরের মধ্যে অবিশ্বাস, অশান্তি, স্ত্রীকে সময় না দেয়া, স্ত্রীকে হাত খরচের টাকা না দেয়া এবং একাকিত্ব থেকেই সহকর্মী কামরুলের প্রতি পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন স্নিগ্ধা।

পুলিশের সূত্রটি আরও জানিয়েছে, রথিশ এবং তাঁর স্ত্রীর মধ্যে এতটাই সম্পর্ক খারাপ ছিল যে দুজনে একই ঘরে থাকলেও তাদের মধ্যে খুব বেশি কথা হতো না। এছাড়া রথিশ চন্দ্র সংসার চালানোর খরচও দিতে চাইতো না।  স্বামীর টাকা-পয়সা, সম্পত্তি, কোথায় কী আছে তারও কোনো খোঁজ পেত না স্ত্রী। এতে অতিষ্ঠ হয়ে সহকর্মী কামরুলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করেন তিনি। সুযোগ কাজে লাগিয়ে কামরুল তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

পুলিশের সূত্রটি আরও জানায়, মূলত বছরখানেক আগেই কামরুলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে সিগ্ধা। মাঝে মাঝে কামরুল প্রেমিকা স্নিগ্ধার বাসায় রাত কাটাতো। গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে স্নিগ্ধা সরকার দীপাকে ধর্মান্তরিত হওয়ার এবং বিয়ের প্রস্তাব দেয় কামরুল। স্নিগ্ধা সেই প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে পরকীয়া চালিয়ে যান। আর তাদের পরকীয়ায় যেন পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে না পারেন সেজন্য এ মাস আগে রথিশ চন্দ্র ভৌমিককে হত্যার পরিকল্পনা করেন কামরুল ও স্নিগ্ধা।

এদিকে চাঞ্চল্যকর এই খুনের ঘটনায় আরও তথ্য জানার জন্য গত বৃহস্পতিবার থেকে কামরুলকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। আর রথিশের স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার এবং তার দুই ছাত্র রোকন ও সবুজ পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

রথিশ চন্দ্র হত্যার বিষয়ে রংপুর কোতয়ালি থানার ওসি বাবুল মিয়া বলেন, ইতোমধ্যে এই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে কামরুলকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যেই আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৯ মার্চ খাবারে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আইনজীবী রথিশকে হত্যা করে কামরুল ও স্নিগ্ধা। পরদিন মোল্লাপাড়ার কামরুলের ভাইয়ের নির্মাণাধীন একটি বাড়িতে লাশ পুঁতে রাখা হয়।

তার নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে উত্তাল হয়ে উঠে রংপুর। এরপর তার সন্ধান পেতে সাঁড়াশি অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাঁচ দিন নিখোঁজ থাকার পর গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে নগরীর তাজহাট মোল্লা পাড়ার একটি বাসা থেকে রথিশ চন্দ্রের গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। জঙ্গি-জামায়াত বা ব্যক্তিগত বিরোধসহ বিভিন্ন কারণে তিনি নিখোঁজ হতে পারেন এমন ধারণা করা হলেও পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায় স্ত্রীর পরিকল্পনাতেই খুন হন আইনজীবী রথিশ।

খুনের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে এমন সন্দেহে রথিশ চন্দ্রের স্ত্রী দীপা ভৌমিক, মেয়ে অদিতি ভৌমিক, দীপা ভৌমিকের পরকীয়া প্রেমিক কামরুল ইসলাম এবং দুই স্কুলছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রথিশ চন্দ্রের মেয়ে অনিতা ভৌমিককে ছেড়ে দেয় র্যাকব।

এছাড়া রথিশ চন্দ্র খুনের ঘটনায় তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ও সহকারী মিলন মোহন্তকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।