Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কথা হয়েছে, তারেককে ফেরত নেবই নেব: প্রধানমন্ত্রী

দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, তারেক রহমানকে দেশে ফেরত আনবেনই তিনি।

chardike-ad

যুক্তরাজ্য সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শনিবার সে দেশের আওয়ামী লীগ এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাঙালিদের আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রাথমিক স্বীকৃতিপত্র পাওয়ায় তাকে এই সংবর্ধনা দেয়া হয়।

স্থানীয় সময় বিকাল তিনটায় লন্ডনের ওয়েস্ট মিনিস্টার সেন্ট্রাল হলে এই সভায় যোগ দেন শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগ, যুগলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু কন্যাকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান। স্লোগানে স্লোগানে ‍মুখর হয় মিলনায়তন।

তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের রচয়িতা এবং সাংবাদিক-কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী। এসময় তিনি আগামী নির্বাচনে তরুণদের মনোনয়ন দেয়ার আহবান জানান।

অনুষ্ঠানে বক্তারা লন্ডনে থাকা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। পরে প্রধানমন্ত্রীও কথা বলেন এই বিষয়টি নিয়ে।

জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে খুনি আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুনিদের কাছ থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে, যেভাবেই তারককে দেশে ফেরত নেবই নেব। ব্রিটিশ সরকারের সাথে আমি কথা বলেছি।’

২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তারের পর অসুস্থতার কারণে ওই বছরের শেষ দিকে তারেক রহমানকে চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি দিয়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার সুযোগ করে দেয় সরকার। চিকিৎসা শেষে তার ফেতার কথা থাকলেও তিনি ফেরেননি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অসুস্থের ভান করে আছে তারেক জিয়া। খালেদা বিদেশে আসলে তো দেখা যায় গাড়ি ড্রাইভ করে নিয়ে আসে।’

৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রায়ের আগে আগে লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসে বিএনপিপন্থীদের হামলার পেছনেও তারেক রহমানের হাত ছিল বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘দেশে বসেও যেমন সন্ত্রাস করেছে, বিদেশে বসেও ঠিক সেইভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে তারেক জিয়া।’

বাংলাদেশ হাইকমিশনে ভাংচুরের ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

দুই বছর আগে বিদেশে অর্থপাচার মামলায় তারেককে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা করে হাইকোর্ট। গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তার ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ‍দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছে।

এই মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হওয়া মা খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তারেককে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছে বিএনপি।

তারেকের বিরুদ্ধে আরও বিভিন্ন মামলা চলছে। এর মধ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার বিচার একেবারে শেষ পর্যায়ে। এই মামলায় বিএনপি নেতার মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

তারেক রহমানকে এই হামলার পরিকল্পনাকারীদের একজন হিসেবে দাবি করছে রাষ্ট্রপক্ষ। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে থাকার সময় প্রভাবশালী হয়ে উঠা বনানীর হাওয়া ভবনে এই হামলা নিয়ে জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল মান্নান, ফাঁসিতে ঝুলা জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজহিদের মধ্যে একাধিক বৈঠক হয় বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে জানিয়েছেন মুফতি হান্নান। তার একটি ভিডিও জবানবন্দিও আছে সামাজিক মাধ্যম ইউটিউবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সততার জোর থাকলে, দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হতো তারেক জিয়া। কিন্তু দেশে না গিয়ে, লন্ডনেও সন্ত্রাসী কাজ করছে তারেক।’

তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করায় বিএনপির সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘দেশ ছাড়ার সময় মুচলেকা দিয়ে আসলো, রাজনীতি করবে না। আর খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে দলের প্রধান করা হলো। বিএনপিতে কি আর কেউ ছিল না?’।

লন্ডনে বসে তারেক রহমান বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করার সাহস কীভাবে পায়, সে প্রশ্নও রাখেন প্রধানমন্ত্রী। তার ওপর নজর রাখতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যাতে কোনো গোষ্ঠী যুক্তরাজ্যে অপপ্রচার চালাতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখার তাগাদা দেন তিনি।

দেশে গণতন্ত্র নেই বলে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যেরও জবাব দেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘যাদের জন্মই অবৈধ, তাদের কাছ থেকেই গণতন্ত্র শিখতে হবে? যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে তাদের কাছে গণতন্ত্রের ছবক নিতে হবে? যারা গণতন্ত্রের গ-ও বোঝে না, তাদের কাছ থেকে শিখতে হবে গণতন্ত্র?’।

এ সময় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ঘটা নানা ঘটনা, বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে বিদেশি দূতাবাসে চাকরি দেয়া, স্বাধীনতাবিরোধীদেরকে কারাগারে মুক্ত করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসানো, মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অপদস্থ করা, খালেদা জিয়ার আমলে একাত্তরের খুনি বাহিনী আলবদর নেতাদেরকে মন্ত্রী বানানো, বিএনপি শাসনামলে অত্যাচার নির্যাতনের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি জামায়াতের সমর্থকদের লজ্জা হওয়া উচিত; কারণ যুদ্ধাপরাধীদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিল তারা।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘১৯৭৫ এর পর বাংলাদেশ এগোতে পারেনি, স্বাধীনতাবিরোধীরা বাংলাদেশকে ব্যর্থ করতে চেয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় ফিরে দেশে উন্নয়নের ধারা চালু করেছে। আর ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় এসে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’

গত নয় বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে আবার আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে প্রবাসীদের সহযোচিতা চান।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলেও জনকল্যাণে করে, বিরোধী দলে থাকলেও। আর বিএনপি নিজেদের বিলাসযাপনে ব্যস্ত থাকে সবসময়। আর দুর্নীতি করে মানুষের সম্পদ মেরে খেয়ে তারা ভোগ করে। সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে ব্যস্ত বিএনপি-জামায়াত।’

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট অপপ্রচার চালাচ্ছে অভিযোগ করে প্রথানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারই মানবাধিকার রক্ষা করে, আর বিএনপি-জামায়াত মানবাধিকার লংঘনের দল।’

বাংলাদেশ আজ বটমলেস বাসকেট (তলাবিহীন ঝুড়ি) নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের কোনো মানুষ ক্ষুধার্ত থাকবে না, বিনা চিকিৎসায় কেউ কষ্ট পাবে না, সবাই শিক্ষা পাবে।’

মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে আশ্রয় দেয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘বিশ্বের কোনো দেশই এটি পারতো না, করে না। তাদেরকে আশ্রয় দেয়ায় বিদেশে বাংলাদেশের সম্মান আরও বেড়েছে।’

বাংলাদেশ কারও কাছে হাত পেতে আর চলবে না, সম্মান নিয়ে চলবে জানিয়ে প্রবাষীদেরকে যার যার অবস্থান থেকে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখারও তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। সূত্রঃ ঢাকা টাইমস।