Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

নাশকতায় জড়ালেই চাকরিচ্যুতি হবেন সরকারি কর্মচারীরা

servent-lawনাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে বা জড়িত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে- এমন সন্দেহের যুক্তিসঙ্গত কারণ পেলেই যে কোনো সরকারি কর্মচারীকে চাকরি থেকে অপসারণ করতে পারবে সরকার। এমন বিধান অন্তর্ভুুক্ত করে বুধবার সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এছাড়া অন্যান্য বিধি-বিধান আগের মতোই বহাল রয়েছে। ১৯৮৫ সালের পর অর্থাৎ ৩২ বছর পর সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধি সংশোধন করে নতুনভাবে গেজেট প্রকাশ করা হল।

chardike-ad

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, বিদ্যমান বিধিমালাকে আরও সুস্পষ্ট করে নতুন বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে। এতে কিছু ধারা সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে।

কর্মচারীদের অপরাধের ধরন অনুযায়ী বিধিমালাতে তাদের শাস্তির বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। আগের বিধিমালায় কোনো কোনো অপরাধের বিষয়ে কিছুই বলা ছিল না। নতুন এ বিধিমালা কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল ১৯৮৫ বাতিল বলে গণ্য হবে।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে নাশকতার সঙ্গে সরাসরি অথবা নাশকতায় যুক্ত কারও সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ছুটি দিয়ে কর্মস্থল ত্যাগের সুযোগ দেয়া হবে।

অর্থাৎ বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হবে। কারণ তাকে চাকরিতে বহাল রাখা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এ ছাড়া কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে নাশকতায় জড়িত কিংবা নাশকতাকারী কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে- এমন সন্দেহের যুক্তিসঙ্গত কারণ পাওয়া গেলে তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হবে।

তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি চাইলে আÍপক্ষ সমর্থন করে অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তিকে এ ধরনের সুযোগ দেয়া রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি- রাষ্ট্রপতি এ রকম মনে করলে কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই তার বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারবে।

কর্মচারীদের দুর্নীতির বিষয়ে বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী তার প্রকাশ্য আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন জীবনযাপন করলে, তার ওপর নির্ভরশীল অথবা তার মাধ্যমে বা তার পক্ষে কোনো ব্যক্তি জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন আর্থিক সম্পদ বা সম্পত্তির অধিকারী হলে দোষী সাব্যস্ত হবেন।

কোনো সরকারি কর্মচারীর নামে দুর্নীতিপরায়নতার কুখ্যাতি থাকলে তাকে বিভাগীয় মামলার মুখোমুখি হতে হবে। তবে এমন অপরাধে কর্মচারীদের দণ্ড আরোপের আগে আÍপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হবে।

১০ দিন সময় দিয়ে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য রাখার সময় দেয়া হবে। একই সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তি ব্যক্তিগত শুনানি চান কিনা তাও লিখিত আকারে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। বিধিগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কর্তৃপক্ষ এ অপরাধে লঘুদণ্ড হিসেবে তিরস্কার, পদোন্নতি ও বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করতে পারবে।

গুরুদণ্ডের ক্ষেত্রেও অভিযোগ গঠনের পর অভিযুক্ত কর্মচারীকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হবে।

বিশেষ কারণে আরও ১০ দিন বাড়িয়ে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। কর্তৃপক্ষ যদি প্রমাণ ও পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি বিবেচনা করে মনে করে, মামলাটি চলার মতো যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত রয়েছে, তাহলে তিনজন কর্মকর্তা নিয়োগ করে অভিযোগ তদন্ত বোর্ড গঠন করা হবে।

তদন্ত বোর্ড বিষয়টি তদন্তের প্রয়োজনে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতামতও নিতে পারবে। সব শেষে যে দণ্ড আরোপ করা হবে তা কার্যকর করা হবে।

বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, কোনো অভিযুক্ত কর্মচারী ফৌজদারি অপরাধে সাজা পেয়ে চাকরি থেকে বরখাস্ত, অপসারিত অথবা পদাবনতি হয়ে থাকলে তাকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেয়া হবে না।

বিধিমালায় শারীরিক ও মানসিক অসামর্থ্যরে জন্যও সরকারি কর্মচারীকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। তবে সিভিল সার্জনের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

কেউ মেডিকেল বোর্ডের কাছে পরীক্ষার জন্য উপস্থিত হতে অস্বীকার করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মামলা করা হবে। কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে আদালতে বিচারাধীন মামলা থাকা অবস্থায় বিভাগীয় মামলার বিষয়ে বিধিমালায় বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তিতে কোনো বাধা থাকবে না।

বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, বিনা অনুমতিতে কোনো সরকারি কর্মচারী ৬০ দিন কর্মস্থলে ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিত থাকলে, বিনা অনুমতিতে দেশ ত্যাগ করলে বা ৩০ দিনের বেশি বিদেশে অবস্থান করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

সে ক্ষেত্রে তাকে বিভাগীয় মামলার মুখোমুখি হতে হবে। অনুপস্থিতির নির্দিষ্ট কারণ জানাতে না পারলে, কর্তৃপক্ষ চাইলে তাকে চাকরি থেকে সরিয়ে দিতে পারবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা রেল কর্মচারী, মেট্রোপলিটন পুলিশের অধঃস্তন কর্মচারী, অন্য কোনো পুলিশ বাহিনীর পরিদর্শকের নিু পদমর্যাদার কর্মচারী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও জেল কর্মচারীর ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না।

কারণ তাদের আলাদা শৃঙ্খলা বিধিমালা রয়েছে। এটি শুধু সিভিল প্রশাসনের কর্মচারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। বিধিমালায় কর্মচারীদের অপরাধের বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী শিষ্টাচারবহির্ভূত কোনো কাজ করতে পারবে না।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আইনসঙ্গত আদেশ অমান্য করা যাবে না। কর্তব্য কর্মে অবহেলা করা যাবে না। আইন, আদেশ, পরিপত্র সঙ্গত কারণ ছাড়া অবজ্ঞা করা যাবে না। এগুলো অমান্য করলে ওই কর্মচারীর বিরুদ্ধে দণ্ড আরোপ করা যাবে।

সৌজন্যে- যুগান্তর