Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ফেসবুক যখন সমস্যার কারন!

facebook
প্রতীকী ছবি
আমিনুল ইসলাম ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কর্মঠ ও সময়জ্ঞান সম্পন্ন হওয়ায় অফিসেও সে আদর্শ। তবে সম্প্রতি বেশ সমস্যা দেখা দিয়েছে আমিনুলের। রাতে নির্দিষ্ট সময়ে বিছানায় গেলেও হাতে থাকে এন্ড্রয়েড ফোন। প্রথমদিকে কিছুক্ষণ ফেসবুকে ঘোরাঘুরি করেই ঘুমিয়ে পড়তো আমিনুল। তারপর আস্তে আস্তে সময়ের মাত্রা বাড়তে থাকে। আগে নিয়মিত রাত এগারোটার মধ্যে ঘুমালেও এখন প্রায়ই ঘুমাতে যায় প্রায় শেষ রাতের দিকে। এতে আগের মতো আর সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারে না আমিনুল। তাই অফিসে পৌঁছতেও দেরি হচ্ছে তার। নিত্যদিন অফিসে পৌঁছতে দেরি হওয়ায় শুনতে হয় বসের বকুনি। তবে একপর্যায়ে শুরু হয় আল্টিমেটাম।

আমিনুল বুঝতে পারে তার এই সমস্যার জন্য দায়ী ফেসবুক। রাত বারোটার পর চ্যাট করতে তাঁর খুব ভালো লাগে। সে বুঝতে পারে তার ঘুমের ক্ষতি হচ্ছে। অফিসে যেতে দেরী হবে। কিন্তু সে নিরুপায়।

chardike-ad

অরন্য ও মাহী প্রেম করে পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করেছেন। দু`জনের পরিবারের কেউই মেনে নেয়নি এ বিয়ে। দু`জনেই রাজধানীর দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করেন। ভালোবাসার সংসারটি দুজনে মিলে সুন্দর করে সাজাচ্ছেন। দুজনই সুখী। তবে ইদানীং তাদের সেই ভালবাসায় ফাটল দেখা দিয়েছে। মাহী খেয়াল করে অরন্য বাসায় ফিরেই আগের মতো তার সাথে কথা বলেনা। কার সাথে সারাক্ষণ চ্যাট করে। রাতে ঘুমানোর সময়ও হাতের এন্ড্রয়েড মোবাইটি তার সঙ্গী। একদিন মাহী গোপনে অরন্যের ফোনটি তার হাতে নেয়। তারপর মাহীর পৃথিবী ঘুরতে থাকে। এই ছেলের জন্যই কী আমি এক কাপড়ে সবাইকে ছেড়ে এসেছি? তারপর কান্নাকাটি, ভুল বুঝাবুঝি। অরণ্য স্বীকার করে, সে ভুল করেছে। সে এটাও বুঝতে পারে এই ভুলের জন্য দায়ী ফেসবুক।

নাদিয়া’র সমস্যাটা একটু অন্যরকম। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সে। ফেসবুকের কল্যাণে তার সাথে পরিচয় হয় মাহফুয নামের এক তরুণের। প্রথমে হাই-হ্যালো, তারপর দীর্ঘ আলাপ। এরপর আবেগের কাছে ধরাশায়ী হওয়া। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, যেদিন তাদের দুজনের মধ্যে দেখা হবে সেদিনই তারা বিয়ে করবে। বিয়েটাও হয়তো হয়ে যেতো। যদি না নাদিয়ার মায়ের কাছে বিষয়টা ধরা না পড়তো। নাদিয়ার মা খবরটা নাদিয়ার বাবার কানে পৌঁছান। নাদিয়ার বাবা চৌকস সরকারি কর্মকর্তা। খোঁজ খবর নিয়ে আবিষ্কার করলেন, মাহফুয নামে ছেলেটির দেওয়া সকল তথ্য মিথ্যা। মাহফুয তার আসল নাম নয়। সে যে ইউনিভার্সিটির কথা তার প্রোফাইলে লিখেছে সেই ইউনিভার্সিটি দূরের কথা, এসএসসির গণ্ডিও পার হওয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। মেয়েদের সঙ্গে ফ্রড করে, প্রেমের ফাঁদে ফেলায় তার কাজ। এরই দায়ে ছেলেটি আগেও একবার পুলিশের হাতে ধরা খেয়েছিল। অবশেষে নাদিয়া বুঝতে পারে, তার আজকের অবস্থার জন্য দায়ী ফেসবুক।

কেবল আমিনুল, অরণ্য, নাদিয়া-ই নয়। প্রতিদিন আমাদের চারপাশে এরকম হাজারো ঘটনার জন্ম হচ্ছে। যার জন্য কোনো না কোনো ভাবে দায়ী ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির কল্যাণে নানা ধরণের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসএ্যাপ, ভাইবার, ট্যাঙ্গো, ইনস্ট্রাগ্রাম, ইমো, স্কাইপি এখন খুব পরিচিত নাম। তবে নানা কারণে আমাদের দেশে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে ফেসবুক। শুধু আমাদের দেশে নয়, বাণিজ্যিকভাবে সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে দাপুটে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ফেসবুক অন্যতম। মার্ক জুকারবার্গ ও তার বন্ধুদের এ আলোচিত আবিষ্কারটি একদিকে যেমন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজ করেছে, অন্যদিকে তেমনি জন্ম দিয়েছে নানা সমস্যারও।

ফেসবুক আসক্তি: ফেসবুক ব্যবহার করতে করতে একসময় ফেসবুকে নির্ভরশীল হয়ে পড়া ও বেশকিছুক্ষণ ফেসবুকের বাইরে থাকতে না পারাই ফেসবুক আসক্তি। সাম্প্রতিক সময়ে এমন ফেসবুক আসক্তের পরিমাণ বাড়ছে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।

অর্থব্যায়: ফেসবুক ব্যাবহারে ফলে বাড়ছে আর্থিক ব্যায়। মোবাইল ফোন কোম্পানীগুলোর নানা ধরণের চমকদার বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে পা ফেলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অনেকেই। এমনকি সীমিত আয়ের মানুষরা এর দ্বারা বেশি ক্ষতির শিকার।

চোখ ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি: বিশেষজ্ঞরা বলছেন ফেসবুকসহ ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে এন্ড্রয়েড ফোন ও পিসি থেকে নির্গত রশ্মি চোখ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশুদের জন্য তা খুব ঝুঁকিপূর্ণ।

কাজের ক্ষতি: ফেসবুকের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো কাজের ক্ষতি। পড়াশুনা, অফিসের কাজ, পারিবারিক কাজসহ প্রচুর সময় নষ্ট হয় ফেসবুকের পেছনে। সামষ্টিকভাবে আমরা বছরে ফেসবুকের পেছনে কী পরিমাণ সময় নষ্ট করি, তার পরিমাণ কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়।

পড়ালেখার ক্ষতি: ফেসবুকের ক্ষতির শিকার শিক্ষার্থীসহ জ্ঞানপিপাসুরাও। তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতির শিকার অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়ে ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। ফেসবুক আসক্তির ফলে একদিকে যেমন তারা পড়াশুনায় মনোযোগ হারাচ্ছে, অন্যদিকে তাদের স্মৃকিশক্তিও লোপ পাচ্ছে। বিশেষ করে, তাদের মস্তিস্কের বড় একটা অংশ দখল করে নিচ্ছে ভার্সুয়াল জগৎ।

লেখক- আলী আদনান, সৌজন্যে- একুশে টেলিভিশন