Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কফিনে আটকে থাকে প্রবাসীর যন্ত্রণা

death-body
ফাইল ছবি

আজকের সকালটা কেমন যেন নিষ্প্রাণ, নিঃসঙ্গ মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে কত শত বছর হয়ে গেল, আমি নিস্তেজ হয়ে জানালা ভেদ করে ওই বেদনার নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি! এই বিষণ্ন সকালে একজন প্রবাসী হয়ে আরেকজন প্রবাসীর মৃত্যু সংবাদটা শুনে হৃদয়টা এমন মুচড়ে উঠবে এটাই হয়তো প্রবাসীদের ধর্ম। কৃষ্ণচূড়া আগুনের মতো একটা তরতাজা প্রাণের বিদায়।

ছেলেটা অনেক দুর্ভাগা ছিল। আগামীকাল ওর নিথর দেহটাকে কফিনে বন্দী করে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ভাবা যায়? কিন্তু এটাই চির সত্য। আমরা ভাবি এক, হয় আরেক। জীবনের হিসাব মেলানো কোনো প্রবাসীর পক্ষেই আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। হয়তো হবেও না।

chardike-ad

সাতটি বছর সিঙ্গাপুরে প্রবাসজীবন কাটিয়ে মৃত্যুকে উপহার হিসেবে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে। আচ্ছা কফিনে পেরেক ঠোকার যন্ত্রণা এই উচ্ছল তরুণ প্রবাসী সইতে পারবে তো? যে স্বপ্ন ওকে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত তাড়িয়ে নিয়েছে সেই স্বপ্ন কি ওকে এত সহজে মুক্তি দিয়ে দেবে? ওর কফিনে হাত রেখে খুব জানতে ইচ্ছে করে।

সাতটি দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়েছে। শেষ মুহূর্তে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে কী যেন খুঁজছিল। হয়তো হৃদয়ে জমে থাকা সমস্ত ভালোবাসাটুকু মা–বাবাকে উজাড় করে দিতে চেয়েছিল কিংবা ব্যাকুল হয়েছিল বাবা–মায়ের স্পর্শের জন্য। আচ্ছা মায়ের আঁচলে জড়িয়ে থাকলে মৃত্যু কি এত সহজে কাছে আসতে পারত? কখনোই না। ফুলের মতো আদরের ভাইবোনগুলো ওর নিষ্প্রাণ দেহটাকে পেলে কী যে করবে ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।

কিছুদিন আগেও হয়তো বন্ধুদের নিয়ে ছুটির দিনগুলোয় ঘুরে বেড়িয়েছে মেরিনা বে, সান্তোসা কিংবা ন্যাশনাল পার্কে। রাতে হয়তো সেই স্মৃতিগুলো নিয়ে দেশের বন্ধুদের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তুমুল কথা বলে কাটিয়েছে। অথচ আজ আর সে নেই। কেউ বলবে না, দোস্ত তোর বিয়ের জন্য একটা মেয়ে দেখেছি রে। এবার আসলেই তোকে দেখাতে নিয়ে যাব? কেউ বলবে না, ভাইয়া এবার আসার সময় আমার জন্য একটা ভালো পারফিউম নিয়ে আসিসতো। উফ্ আমাদের প্রবাসীদের জীবনটায় এত অনিশ্চয়তার কেন? কেন? কেন? কত সহজেই মৃত্যু আমাদের ছোবল দিয়ে দেয়।

সেদিন সকালটায় ও কি ভেবেছিল সামান্য একটা ১৮ ইঞ্চি পাইপের ভেতর বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যু ওত পেতে আছে? তাকে দেখা মাত্রই ছোবল দিয়ে দেবে? কখনো কি ভেবেছিল জীবনের স্বপ্নগুলো এক নিমেষেই মিলিয়ে যাবে? কখনোই ভাবেনি। কারণ একজন খেটে খাওয়া প্রবাসী শ্রমিক কখনোই এত সহজে মৃত্যুর কথা ভাবে না।

বাংলাদেশে হয়তো ওর নিষ্প্রাণ দেহটা পৌঁছে যাবে। সূর্যের বিকিরণে একদিন মিলিয়ে যাবে ওর নিথর দেহ কিন্তু আমার মতো হাজারো প্রবাসীর হৃদয়ে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, তা হয়তো সহস্র বছর বর্ষার স্রোতেও মুছবে না। ভালো থেকো প্রবাসী। ওপারে ভালো থেকো।

লেখক: মো. শরীফ উদ্দিন, সিঙ্গাপুর প্রবাসী
সৌজন্যে: প্রথম আলো