Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

জর্ডানে বাংলাদেশ দূতাবাসে নারীদের আশ্রয়ের জায়গা নেই!

Jordanনারী গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় তারা আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন জর্ডানের আম্মানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে। প্রতিদিন গড়ে ৩-৪ জন নারী গৃহকর্মী এসে দূতাবাসে আশ্রয় নেন বলে জায়গা সংকটে পড়েছে দূতাবাস। তাই সে দেশে জরুরি ভিত্তিতে সেফহোম খোলার অনুমতি চেয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস। জর্ডানে বাংলাদেশ দূতাবাসের থার্ড সেক্রেটারি সালেহা মোজাম্মেল এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে নারী গৃহকর্মীদের কোনও সমস্যা হলে তাদের রিক্রুটিং এজেন্সির শেলটার হোমে রাখা হতো। কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে জর্ডান সরকার সীমিত আকারে বাংলাদেশ থেকে নারী গৃহকর্মী নিয়োগের ঘোষণা দিলে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাই কোনও উপায় না পেয়ে দূতাবাসে আশ্রয় নিচ্ছেন তারা। এই কারণে দূতাবাসের স্বাভাবিক কার্যক্রমও হুমকির মধ্যে পড়ে গেছে। তাই গত ৩ জুলাই জর্ডানে অবস্থিত বাংলাদেশ অ্যাম্বেসির পক্ষ থেকে সেফহোম খোলার অনুমতি চেয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেওয়া হয়।

chardike-ad

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জর্ডানে নারী গৃহকর্মী আসার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সমস্যাও সৃষ্টি হতে থাকে। গৃহকর্তার দুর্ব্যবহার, সময়মতো বেতন না পাওয়া, সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে না পারা, ওভারস্টেয়িং ফাইনসহ নানারকমের অসুবিধার কারণে নারী গৃহকর্মীরা দূতাবাসের শরণাপন্ন হন। এছাড়া মারাত্মক শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ অবস্থায়ও গৃহকর্তার বাসা, হাসপাতাল, পুলিশ স্টেশন, জেলখানা ইত্যাদি স্থান থেকেও গৃহকর্মীদের দূতাবাসে পাঠানো হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৩-৪ জন নারী কর্মী দূতাবাসে অস্থায়ীভাবে আশ্রয়ের জন্য আসছেন। কিন্তু দূতাবাসের কোনও সেফহোম না থাকায় তাদের আশ্রয় দিতে পারছে না দূতাবাস। এসব কারণে দূতাবাসে জরুরি ভিত্তিতে একটি সেফ হোম খোলা প্রয়োজন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে সম্প্রতি পাঁচ মাস আগে জর্ডান থেকে অনেক ধকল পেরিয়ে দেশে ফিরেছেন নাজমা। সেখানে কাজ করেছেন প্রায় ২ বছর পাঁচ মাস। গৃহকর্মীর কাজে দুই বছরের চুক্তি থাকলেও তাকে দেশে ফিরতে দেওয়া হচ্ছিল না বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। দেশে ফিরতে চাইলে তাকে মারধর করা হতো। দেশে ফেরার আগে তার নিয়োগকর্তার কাছে ১১ মাসের বেতন পাওনা ছিলেন। বেতনের টাকা দিতে রাজি ছিলেন না নিয়োগকর্তা। পরে দূতাবাসের হস্তক্ষেপে পাওনা টাকা ফেরত পেয়েছেন। কিন্তু সেই টাকার মধ্যে প্রায় ১০-১৫ হাজার টাকার সমমুল্যের দিনারের কয়েন দেওয়া হয়েছে। যা তিনি কোথাও ভাঙাতে পারছেন না।

নাজমা বলেন, ‘জর্ডানের দূতাবাসে নানা সমস্যায় জর্জরিত মহিলা আছে শতাধিক। আমি একঘণ্টার জন্য দূতাবাসে ছিলাম। তখন দেখছিলাম, কেউ কান্নাকাটি করছেন, কেউ দূতাবাসের লোকজনের পায়ে ধরে দেশে পাঠানোর জন্য আকুতি জানাচ্ছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জর্ডানের বাংলাদেশ দূতাবাসের থার্ড সেক্রেটারি সালেহা মোজাম্মেল মোবাইলফোনে বলেন, ‘জায়গার সমস্যা নয়। এখানে যেটা হলো পাবলিকলি রাখা আর নিজেদের সেফহোমে রাখা, দু’টি আলাদা বিষয়। এখন আমাদের বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশিদের কাছে রাখতে হয়, সেফহোম হলে তখন আর এমন করতে হবে না। তবে এই বিষয়ে লেবার সেকশন যিনি দেখেন, তিনি আরও ভালো বলতে পারবেন।’

ফার্স্ট সেক্রেটারি (লেবার) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে মোবাইলফোনে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এছাড়া জর্ডানে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ এনায়েত হোসেনকেও মোবাইলফোনে পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, জর্ডানে নারী শ্রমিক যাচ্ছে ২০০১ সাল থেকে। ২০১২ সালের ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশ ও জর্ডানের মধ্যে জনশক্তি রফতানি বিষয়ক এক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর থেকে সেদেশে জনশক্তি পুরোদমে রফতানি শুরু হয়। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) দেওয়া তথ্য মতে ২০১২ সালেই জর্ডান গিয়েছে ১১ হাজার ৫৮২ জন নারী শ্রমিক। শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক নারী শ্রমিক জর্ডান গেছে ২০১৬ সালে। এছাড়া এখন পর্যন্ত জর্ডান গিয়েছেন মোট ১ লাখ ৪ হাজার ৯৯৩ জন নারী শ্রমিক।

২০১৭ সালের অক্টোবরে জর্ডান সরকার বাংলাদেশ থেকে গৃহশ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ওই সময় জর্ডানের শ্রমমন্ত্রী আলী আল ঘাজ্জাউই জানান, ‘এদেশে শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য বর্তমানে জর্ডানের নিয়োগকর্তারা আর বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী নিয়োগ করতে পারবে না।’

সূত্র- বাংলা ট্রিবিউন