Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে পিছু হটছেন ট্রাম্প?

trump-kimহেলসিঙ্কিতে ট্রাম্প ও পুতিন দুই ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কী বিষয়ে চুক্তি করতে যাচ্ছেন বলে ঠিক করে থাকতে পারেন, তা এখনো আমরা জানি না। কিন্তু এটা এখন স্পষ্ট যে সিঙ্গাপুরে কিম জং–উনের সঙ্গে বৈঠক করে কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করতে তিনি যে চুক্তি করেছেন, তার ভবিষ্যৎ এখন সুতোর ডগায় ঝুলছে। ট্রাম্প-উন বৈঠকের পর পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ কার্যক্রম এগিয়ে নিতে উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের আবার বৈঠকে বসার কথা ছিল। কিন্তু তার বদলে এখন উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তাদের আগের মতোই পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধ করায় মনোযোগী হতে দেখা যাচ্ছে।

উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন থেকেই বলে আসছেন, কিম জং–উনের কখনোই পরমাণু কার্যক্রম বন্ধের সদিচ্ছা ছিল না, এখনো নেই। সাম্প্রতিক কিছু প্রমাণ তাঁদের এই ধারণাকে সমর্থন করে।

chardike-ad

মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, উত্তর কোরিয়া অতি গোপনে ইউরেনিয়ামের মজুত ও ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে তাদের পরমাণু কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। নিয়মিত কোরীয় উপদ্বীপের ঘটনাপ্রবাহের খোঁজ রাখেন এমন যে কেউ এই ‘সিনেমা’ আগেও দেখেছেন। কিমের বাবা ও দাদা এই সিনেমার কাহিনি, চিত্রনাট্য কয়েক দশক আগেই লিখে রেখে গেছেন। সেই সত্তরের দশক থেকে কিমের পরিবার একদিকে পরমাণু অস্ত্র কার্যক্রম চালিয়ে আসছে, অন্যদিকে তারা পরমাণু অস্ত্রমুক্ত কোরীয় উপদ্বীপের কথা বলেছে। তারা একদিকে পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে সই করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সমঝোতা চালিয়ে গেছে, অন্যদিকে দ্বিগুণ গতিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে।

ঠিক একই কায়দা অনুসরণ করছেন কিম জং–উন। তাঁর প্রয়াত বাবার কৌশল অনুসরণ করে দীর্ঘ বিরতির পর তিনি গত মে মাসে একটি পরমাণু পরীক্ষা চালান।কিমের সুবিন্যস্ত কূটনীতির সঙ্গে তুলনা করলে বলতেই হবে, উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের সফলতার চেয়ে ব্যর্থতা বেশি।

ট্রাম্প গত বছর উত্তর কোরিয়াকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলা হবে বলে হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর সুর নরম হলো। একপর্যায়ে তিনি কিম জং–উনের সঙ্গে বৈঠকও করলেন। তখন বলা হলো, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কার্যক্রম বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র শিগগিরই চুক্তি করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। তখন থেকেই ট্রাম্প বলে যাচ্ছেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ ‘ভালো অবস্থায়’ আছে। কিন্তু অন্য মার্কিন কর্মকর্তাদের কথার সঙ্গে তাঁর বক্তব্য মিলছে না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সর্বশেষ পিয়ংইয়ং সফরের সময় উত্তর কোরিয়াকে দোষারোপ করেছেন। হোয়াইট হাউসের অন্য কর্মকর্তারাও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার কথা বলছেন। ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্রসহ সব ধরনের অপ্রচলিত অস্ত্র এক বছরের মধ্যে অকার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্পকে তুলনামূলক নমনীয় থাকতে দেখা যাচ্ছে।

উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে ট্রাম্পের নমনীয় অবস্থান আমেরিকার মিত্রদেশ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকেও চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। ট্রাম্প এই দুই দেশকে সামরিক ব্যয় বাড়াতে বলেছেন, কিন্তু সিঙ্গাপুর বৈঠকে কিমকে উত্তর কোরিয়ার জলসীমার কাছে সামরিক মহড়া না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন। উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ট্রাম্পের নীরবতা টোকিও এবং সিউলকে হুমকিতে ফেলে দিচ্ছে। কারণ, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া—উভয় দেশেই মার্কিন ঘাঁটি আছে। উত্তর কোরিয়া কখনো পরমাণু আঘাত হানলে এই দুটি দেশই প্রথম শিকার হবে।

এ ছাড়া উত্তর কোরিয়া ফুয়েল রকেট এবং আইসিবিএম সাবমেরিনের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। এসব তৎপরতা বন্ধে ট্রাম্প অস্বাভাবিক নীরবতা দেখাচ্ছেন। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা ট্রাম্পকে আগামী সেপ্টেম্বরে ফের কিমের সঙ্গে বৈঠক করতে পরামর্শ দিয়েছেন। কিমের তৎপরতা থামাতে তাঁরা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনকেও কাজে লাগাতে বলেছেন।

ট্রাম্পকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের তত্ত্ব এক জিনিস, আর কোরীয় উপদ্বীপের ভয়ানক অস্ত্র ঝুঁকি কমানোর তৎপরতা আরেক জিনিস। এ কারণে পরবর্তী প্রতিটি পদক্ষেপে ট্রাম্প প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে।

লেখক- কেন্ট হ্যারিংটন, সিআইএর সাবেক বিশ্লেষক
ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব- প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
সৌজন্যে- প্রথম আলো