Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

টাইগারদের সামনে নতুন ইতিহাসের হাতছানি!

bangladeshযুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় কি বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাফল্যের এক নতুন সূর্য্যের উদয় ঘটবে? ক্রিকেটের যে ফরম্যাটের কথা উঠলেই চোখে ভাসে টাইগারদের খানিক আড়ষ্টতা, খানিক অপ্রস্তুত আর অনুজ্জ্বল চেহারা- সেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে সিরিজ বিজয়ের অসামান্য কৃতিত্ব হবে অর্জিত? না পারা ও ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে অবশেষে সাফল্যের আলোয় উদ্ভাসিত হবেন সাকিব-তামিমরা ?

নানা প্রশ্ন। কৌতুহল। জল্পনা-কল্পনার ফানুস আকাশে বাতাসে। সোমবার সকালেই মিলবে এর উত্তর। আজকের (রোববার) মত সোমবারের সকালটি যদি হয় সাকিব বাহিনীর, তাহলে তো কথাই নেই। দীর্ঘ দিনের না পারার অপবাদ ঘুচবে।

chardike-ad

বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে পারে না । পারলেও জিততে যা যা করনীয়, সেই কাজগুলো সম্পাদনের পর্যাপ্ত সামর্থ্য নেই। থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় কম এবং সর্বোপরি ২০ ওভারের ক্রিকেটের হিসেব-নিকেশ, কৌশল ও ছকের যথাযথ বাস্তবায়নের সামর্থ্যে ঘাটতি- নানা তীর্যক কথাবার্তা শুনতে হয়েছে এতকাল।

অবশ্যই সেটা অমূলকও নয় একদম। ইতিহাসও সে কথাই বলে। পরিসংখ্যান পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি রেকর্ড বেশ খারাপ। সেই আজ থেকে একযুগ আগে ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪৩ রানের জয় দিয়ে শুরু। এরপর বাংলাদেশ খেলেছে মোট ৮১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ফেলেছে। এর মধ্যে জিতেছে ২৪টিতে এবং হেরেছে ৫৫টিতে। খেলার ফল হয়নি ২টিতে।

গত এক যুগে অনেকগুলো সিরিজে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ; কিন্তু জেনে ও শুনে অবাক হবেন, তাতে টাইগারদের সিরিজ জয়ের রেকর্ড খুবই জীর্ন-শীর্ন। এক ম্যাচের সিরিজ জয়ের কয়েকটি (৩টি) রেকর্ড থাকলেও আজ পর্যন্ত দুই বা ততোধিক ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের রেকর্ড মোটে একটি। তাও নিকট অতীত ও সাম্প্রতিক সময়ে নয়।

আজ থেকে ৬ বছর আগে। সেটা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১২ সালের জুলাই মাসে। যেখানে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে তিন ম্যাচে সিরিজের সবকটা ম্যাচেই আইরিশদের হারিয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় এবং হোয়াইটওয়াশ করেছিল টাইগারররা। সেটাই শেষ । এরপর এক ম্যাচ ছাড়া দুই বা ততোধিক ম্যাচের একটি টি-টোয়েন্টি সিরিজও জেতা সম্ভব হয়নি বাংলাদেশের।

কোন বিশ্বশক্তি, বড় দলের সাথে তো নয়ই, জিম্বাবুয়ে এমনকি আফগানিস্তানের মত নিচু সারির দলকেও আর দুই বা তার বেশি সংখ্যার ম্যাচের সিরিজে হারাতে পারেনি টাইগাররা। গত তিন বছরের মধ্যে টাইগারদের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের ঘটনাই আছে মোটে একবার। ২০১৫ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে এক ম্যাচের সিরিজ জয়ই শেষ। এরপর গত তিন বছরে আর এক ম্যাচের টি টোয়েন্টি সিরিজও জেতা সম্ভব হয়নি।

sentbe-adকোন প্রতিষ্ঠিত শক্তির বিপক্ষে সিরিজ জয়তো বহুদুরে জিম্বাবুয়েকেও সিরিজে হারানো সম্ভব হয়নি। ঘরের মাঠে দু’দুটি সিরিজ অমিমাংসিত থেকে গেছে। প্রথমবার ২০১৫ সালের নভেম্বরে দুই ম্যাচের টি টোয়েন্টি সিরিজটি ১-১’এ ড্র। এরপর ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে চার ম্যাচের সিরিজে ২-০ তে এগিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। শেষ দুই ম্যাচ হেরে ২-২ ব্যবধানে সিরিজ অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ।

এরপর টি-টোয়েন্টি সিরিজ মানেই শুধু হার আর হার। শুধু ২০১৭ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার মাটিতে দুই ম্যাচের সিরিজটি ১-১ ড্র। তারও আগে ২০১৭ সালের একদম শুরুতে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৩-০ ব্যবধানে হার। ওই বছর অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ।

২০১৮ সালেও ব্যর্থতার সে ধারাবাহিকতা ছিল অব্যাহত। ফেব্রুয়ারিতে দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার কাছে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ পরাজয়। এবং সর্বশেষে গত জুনে ভারতের দেরাদুনে আফগানিস্তানের কাছে আবারও ৩-০ ব্যবধানে চরমভাবে পর্যদুস্ত।

ওপরের পরিসংখ্যান পরিষ্কার জানান দিচ্ছে ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটে টাইগারদের সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার পাল্লা অনেক ভারি। বিশেষ করে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজগুলোয় সাফল্যের হার আরও কম। এবার সেই চিরচেনা, জানা তথ্য-উপাত্ত ভুল প্রমাণ করতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ সাকিবের দল।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচটি ডার্কওয়ার্থ-লুইস মেথডে হেরে গেলেও রোববার সকালে ফ্লোরিডায় সেই ক্যারিবীয়দের হারিয়ে সিরিজে সমতা ফেরার পর এবার টাইগারদের সামনে বিরল এক সিরিজ জয়ের হাতছানি। নতুন ইতিহাস গড়ার দারুণ এক সুযোগ।

আজ (রোববার) সকালে এক অন্য বাংলাদেশকেই দেখেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তথা ক্রিকেট বিশ্ব। সোমবার সকালে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচেও কি সেই উজ্জ্বল বাংলাদেশের দেখা মিলবে? তাহলে হয়তো ইতিহাসটা রচিতই হয়ে যাবে।