সিউল, ৫ জানুয়ারী ২০১৪:
অনিশ্চয়তার কালো মেঘ কেটে গেল। অবসান হলো সব আশঙ্কা আর উদ্বেগেরও। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বৈঠকের সিদ্ধান্ত, ২০১৪ সালের এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হবে ঢাকাতেই। গতকাল শ্রীলংকার কলম্বোয় এসিসির নির্বাহী বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এশিয়া কাপের ঢাকা আসরেই প্রথমবারের মতো অংশ নেবে আফগানিস্তান।
বাংলাদেশে চলমান সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় সৃষ্ট সহিংসতা এ দেশের ক্রিকেটের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফেব্রুয়ারি-মার্চে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় এশিয়া কাপ ও মার্চ-এপ্রিলে অনুষ্ঠেয় আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপ খেলতে বাংলাদেশে নাও আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিল পাকিস্তান। আশঙ্কা ছিল শ্রীলংকাকে নিয়েও। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এশিয়া কাপ আয়োজনে তৈরিই ছিল শ্রীলংকা। কিন্তু গতকালের বৈঠকে নিরাপত্তাজনিত কোনো ইস্যুই নাকি উত্থাপন হয়নি। এসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুল হক বৈঠক শেষে বলেন, ‘শিডিউল অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকেই বাংলাদেশে এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হবে। টুর্নামেন্ট ঘিরে সবকিছু ঠিকঠাকই আছে। নিরাপত্তা নিয়ে কেউই কোনো প্রশ্ন তোলেনি।’
আশরাফুল হক বলেছেন, বাংলাদেশ নিরাপত্তা নিয়ে তাদের পরিকল্পনা বিশদভাবে উপস্থাপন করেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন এ নিয়ে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত এশিয়া কাপ আয়োজনের স্বত্ব বাংলাদেশেরই। এসিসির বোর্ড সদস্যদের সামনে আমরা দারুণ এক উপস্থাপনা করেছি। আমাদের প্রতিশ্রুতিতে তারা আশ্বস্ত হয়েছেন এবং বুঝতে পেরেছেন, আমরা টুর্নামেন্ট আয়োজনে সক্ষম। এ টুর্নামেন্টে আফগানিস্তানও অংশ নেবে। এখন পাঁচ দলের টুর্নামেন্টে মোট ১১টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।’
এশিয়া কাপ আয়োজনে এসিসির সবুজ সংকেত পাওয়ায় এখন শ্রীলংকার বিপক্ষে হোম সিরিজ আয়োজনেও আশাবাদী বাংলাদেশ। শ্রীলংকাও এ সফরে বেশ আন্তরিক। শ্রীলংকান ক্রিকেট বোর্ডের (এসএলসি) সেক্রেটারি নিশান্থা রানাতুঙ্গার কণ্ঠে উপমহাদেশের ক্রিকেটকে বাঁচানোর আহ্বান। তিনি বলেন, ‘আমরা খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার বিষয়কে সব সময় অগ্রাধিকার দেই। এ ব্যাপারে আমাদের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। এ অঞ্চলের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে চাইলে এসব দেশে আমাদের খেলতে হবে।’
২০০৯ সালে পাকিস্তানের লাহোরে লংকান ক্রিকেটারদের ওপর হামলার পর দেশটিতে খেলতে যায়নি শ্রীলংকা। তবে নিরাপত্তা নিয়ে অতীতে তারাও সমস্যায় পড়েছে। এ নিয়ে রানাতুঙ্গা বলেন, ‘আমরা এ সমস্যা (নিরাপত্তা) মোকাবেলা করেছি, পাকিস্তানও করেছে। এখন বাংলাদেশ এর মুখোমুখি। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ এসএলসির চেয়ারম্যান জয়ন্থা ধর্মদাসা অবশ্য এ মাসের সফর নিয়ে বলছেন, তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা ইউনিট বাংলাদেশের ওপর চোখ রাখছে। ৯ জানুয়ারিই তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) এক সূত্র জানিয়েছিল, তারা এশিয়া কাপে খেলার ব্যাপারে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ গ্রহণ করবে। কিন্তু এসিসির বৈঠকে অনেকটা বিস্ময়করভাবেই ঢাকা এশিয়া কাপ নিয়ে কোনো আপত্তি তোলেনি পাকিস্তান। বাংলাদেশের ভয় ছিল তাদের নিয়েই। কিন্তু তারা ইতিবাচকই আছে। এ নিয়ে আশরাফুল হক, ‘‘পাকিস্তান তো ‘হ্যাঁ’-ই বলেছে, তারা ‘না’ বলেনি।’’ যদিও পিসিবির এক মুখপাত্র বলেছেন, ৯ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) বৈঠকে তারা এশিয়া কাপ নিয়ে আরো তথ্য জানাতে চাইবেন। ঢাকায় এশিয়া কাপ শুরু হবে ২৫ ফেব্রুয়ারি। শেষ হবে ৮ মার্চ। এই প্রথম এশিয়া কাপে খেলবে উদীয়মান শক্তি আফগানিস্তান। সূত্রঃ বণিকবার্তা।