আফগানিস্তান থেকে সুইডেনে আশ্রয় নিতে আসা একজন তরুণ বলছেন বাবা খুন হয়েছিলেন তার বাড়ির সামনেই। এরপর তার মায়ের কাছে একটি চিঠি আছে যেখানে বলা হয় পরিবারের বড় ছেলেকেও তারা তুলে নেবে। এরপর তার মা-ই সিদ্ধান্ত নেয় যে তার সন্তানকে যেভাবে হোক আফগানিস্তান ছাড়তে হবে। পরে সুইডেনে এসে একবার আত্মহত্যারও সিদ্ধান্ত নেয় এই তরুণ। এ সময় ঘটনাচক্রে এক সুইডিশ পরিবারেই থাকার জায়গা মেলে তার।
তাকে যিনি আশ্রয় দিয়েছন তিনি বলছেন, “আমার জন্য এটাই সর্বোত্তম কিছু আর তা হলো তাকে লুকিয়ে রাখা। কারণ তার যাওয়ার মতো আর কোন জায়গা নেই। তাই একটা হলো ডিপোর্টেড হয়ে দেশে ফিরে যাওয়া বা রাস্তায় থাকা। আমার দিক থেকে আমার একটা অতিরিক্ত কক্ষ আছে, তাহলে সে কেনো এখানে থাকতে পারবেনা ? এখন সে আমাদের পরিবারেরই অংশ”।
প্রচলিত ভাবেই সুইডেন খুব সহনশীল একটা দেশ কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। গত সেপ্টেম্বরে দেশটির সাধারণ নির্বাচনে অভিবাসনই ছিলো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। অভিবাসন বিরোধী সুইডেন ডেমোক্রেটদের সমর্থন বেড়ে ২২ দশমিক ৪ শতাংশে দাড়ায়, যেখানে আগের নির্বাচনে ২০১৪ সাল তাদের সমর্থন ছিলো প্রায় ১৩ শতাংশের মতো।
“বেশির ভাগ দলই আরও অভিবাসীকে ফেরত পাঠাতে চায়। তারা সীমান্ত বন্ধ করে দিতে চায়। তারা অভিবাসীদের জন্য নীতি আরও কঠিন করে দিতে চায়। যেহেতু এসব অভিবাসীদের বাসাবাড়ি নেই তাই তাদের গোপন স্থানে চলে যেতে হয় ও পালিয়ে থাকতে হয়”।
২০১৫ সালে অভিবাসন সংকটের জের ধরে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে যায়। সু্ইডেনও সীমান্তে কড়াকড়ি শুরু করে। আশ্রয় প্রার্থীদের একটা বড় অংশের আবেদনও প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করে দেশটি। আলী নামে এই যুবকের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয় তিনবার, এখন তাকে জোর করে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হতে পারে।
“সবাই জানে সেখানে একটি যুদ্ধ চলছে এবং প্রতিদিনই তালিবানরা সেখানে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। লোকজন খুন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কোন নিরাপত্তাই নেই। এখানে সুইডেনে যেকোনো মানুষই কিছু একটা হতে পারে-একজন ভালো মানুষ কিংবা পড়াশোনায়। আমি এখানে স্কুলে যেতে পারি। আমি যে কোনো ধরনের পোশাক পড়তে পারি। ইচ্ছে মতো যে কোনো ধর্মও আমি পালন করতে পারি”।
কিন্তু দেখা গেছে ২০১৭ সাল থেকে আফগান আশ্রয় প্রার্থীদের ৬০ভাগেরই আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। অথচ ২০১৫ সালেও এই হার ছিলো মাত্র ১২ শতাংশ।
সুইডিশ মাইগ্রেশন বোর্ডের কর্মকর্তা কার্ল বেক্সেলিয়াস বলছেন, ” আফগানিস্তানের কিছু প্রদেশে আপনি ফিরতে পারবেন না আমরা জানি। সেখানে ঝুঁকি আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো আপনি কি দেশটির অন্য কোন অংশে ফিরতে পারেন ? আর সেটাই রেসিডেন্ট পারমিট বা সুইডেনে আশ্রয়ের সুযোগ না দেয়ার একটা বড় কারণ। আমরা বলছি তুমি একটি প্রদেশ থেকে এসেছো যেখানে অনেক সহিংসতা হয় কিন্তু তুমি আফগানিস্তানের অন্য অংশে ফিরতে পারো, যেখানে সহিংসতার ঝুঁকি কম”।
আর এভাবে অনেকে বসবাসের অনুমতি না পেয়েও জীবনের ঝুঁকি কিংবা উন্নত জীবনের জন্য গোপন হলেও থেকে যাওয়ার চেষ্টা করে। সুইডিশ নাগরিকদের অনেকেই গোপনে তাদের সহায়তাও করে। এভাবেই এগিয়ে চলে অভিবাসীদের গল্প।
সৌজন্যে- বিবিসি বাংলা