Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আফগানিস্তানের কাছে পাত্তাই পেল না বাংলাদেশ

Afganistanকার্ডিফে ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর ২২৪ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে তুলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ-সাকিব। আজও তাদের থেকে এমন কিছুর প্রত্যাশায় ছিল ক্রিকেটপ্রেমিরা।

আফগানিস্তানের দেওয়া ২৫৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৩ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পঞ্চম উইকেটে জুটি বাঁধেন মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব। কিন্তু তাদের জুটি থেকে এল মাত্র ৩৬ রান। দুজনকে ফিরিয়ে আফগানিস্তানকে জয়ের স্বাদ দেন রশিদ খান।

chardike-ad

আফগানিস্তানের করা ২৫৫ রানের জবাবে বাংলাদেশ আটকে যায় ১১৯ রানে। ১৩৬ রানের বিশাল জয়ে বাংলাদেশকে লজ্জা দিল আফগানিস্তান। ২০১৪ এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে ৩২ রানে হারিয়েছিল তারা। চার বছর পর একই মঞ্চে বাংলাদেশ হারল বিশাল ব্যবধানে।

নিজের ২০তম জন্মদিন দারুণভাবে রাঙিয়ে রাখলেন রশিদ খান। প্রথমে ব্যাট হাতে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। ৩২ বলে করেন ৫৭ রান। পরবর্তীতে বল হাতে ৯ ওভারে ৩ মেডেনে ১৩ রানে নেন ২ উইকেটে। ফিল্ডিংয়েও অবদান রেখেছেন। রান আউট করেছেন আবু হায়দার রনিকে। সব মিলিয়ে আবু ধাবিতে স্বপ্নের মত দিন কাটিয়েছেন এ আফগান ক্রিকেটার।

নিয়মিত ওপেনার তামিমের অনুপস্থিতি এবং মুশফিক ও মুস্তাফিজকে বিশ্রাম দিয়ে নিজেদের ‘দ্বিতীয়’ সারির দল নিয়ে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। জিতলেও কোনো ‘লাভ’ হবে না জেনেই মুশফিক ও মুস্তাফিজকে বিশ্রাম দিয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট।

তিন সেরা ক্রিকেটার ছাড়া বাংলাদেশের থেকে বাড়তি প্রত্যাশা করছিল না কেউই। কিন্তু প্রতিপক্ষ যখন আফগানিস্তান তখন জয়ের চিন্তা থাকবে স্বাভাবিক। মাঠের ক্রিকেটে পাওয়া গেল না চিরচেনা বাংলাদেশকে। বল হাতে বাজে দিন কাটিয়েছেন মাশরাফি। বল হাতে সাকিব পারফর্ম করলেও ব্যাট হাতে ছিলেন নিষ্প্রভ! মাহমুদউল্লাহও নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ। আর তরুণরা আগেই মতোই ফ্লপ। সব মিলিয়ে পুরো দলই আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের হারিয়ে খুঁজেছেন বারবার।

তবে টস হেরে বোলিং করতে নেমে শুরুটা ছিল বাংলাদেশের। অভিষিক্ত পেসার আবু হায়দার রনি উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দলকে। নিজের প্রথম ওভারেই সাজঘরে পাঠান এহসান উল্লাহকে। ষষ্ঠ ওভারে তার ভেতরে ঢোকানো বলে বোল্ড হন রহমত শাহ। তৃতীয় উইকেটে মোহাম্মদ শাহজাদ ও হাসমতউল্লাহ শাহিদী ৫১ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন।

বোলিংয়ে এসে এ জুটি ভাঙেন সাকিব। তবে পুরো কৃতিত্বটা রনির। সাকিবের বলে এগিয়ে এসে লং অন দিয়ে ছক্কা মারার চেষ্টা করেন শাহজাদ। কিন্তু উড়ন্ত রনি তার ক্যাচ নিয়ে সাজঘরের পথ দেখান। ৪৭ বলে ৩৭ রান করেন শাহজাদ। এরপর আফগান অধিনায়ককেও ফেরান সাকিব। আসগর আফগান সাকিবের সোজা বলে স্ট্যাম্প হারান ৮ রানে।

এরপর সাকিবের জোড়া আঘাতে এবং রুবেলের দারুণ বোলিংয়ে দ্রুত ৩ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। সামিউল্লাহ সেনওয়ারি (১৮) ও মোহাম্মদ নবী (১০) সাকিবের বলে আউট হন। হাফ সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া হাসমতউল্লাহ শাহিদীকে ফেরান রুবেল হোসেন। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে এসে উইকেটের স্বাদ পান রুবেল। ৯২ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ৫২ রান করেন হাসমতউল্লাহ।

হাসমতউল্লাহ যখন আউট হন তখন আফগানিস্তানের রান ৭ উইকেটে ১৬০। সেখান থেকে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন রশিদ খান ও গুলবাদিন নাইব। অষ্টম উইকেটে দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৫৬ বলে এসেছে রেকর্ড ৯৫ রান। তাতেই যেন পথ হারায় বাংলাদেশ। শেষ ৬ ওভারে দুই ব্যাটসম্যান তোলেন ৭৪ রান। শুরুটা রুবেল হোসেনকে দিয়ে। ৪৫তম ওভারে রুবেল খরচ করেন ১৭ রান। পরের ৫ ওভারে মাশরাফি করেন ৩টি, রনি করেন ২টি।

৫০তম ওভারে ১৯ রান দেওয়া মাশরাফি শেষ ৩ ওভারে খরচ করেন ৪১ রান। রনি ২ ওভারে দেন ১৬ রান। ৩২ বলে ৫৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন রশিদ খান। তার সঙ্গে গুলবাদিন অপরাজিত ছিলেন ৩৮ বলে ৪২ রানে।

সাকিব ৪২ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। রনি ৫০ রানে নেন ২ উইকেট। সবচেয়ে খরুচে ছিলেন মাশরাফি। ৮ ওভারে ৬৭ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি অধিনায়ক। রুবেল ৬ ওভারে ৩২ রানে নেন ১ উইকেট।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তামিমের পরিবর্তে সুযোগ পাওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত নিজের উইকেট বিলিয়ে আসেন। মুজিবের বলে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে পয়েন্টে ৭ রানে ক্যাচ দেন আফতাবের হাতে। লিটনকে আউট করেন আফতাব। খানিকটা সুইং করা বলে ব্যাট নিতে ব্যর্থ লিটন (৬)। এরপর ৯ রানে মুমিনুল ও মিথুন ২ রানে সাজঘরে ফেরেন।

৪৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন পুরো চাপে। আফগানিস্তানের বোলারদের সামলানোর কোনো জবাব ছিল না বাংলাদেশের। ১৫তম ওভারে বাংলাদেশ প্রথম বাউন্ডারির স্বাদ পায়। আর ১১৯ রানের পুরো ইনিংসে বাউন্ডারি এসেছে মাত্র ৫টি।

সাকিব, মাহমুদউল্লাহর দিকে তাকিয়ে ছিল পুরো বাংলাদেশ। কিন্তু রশিদ খানের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সব ওলটপালট। সাকিব দলীয় ৭৯ রানে আউট হন এলবিডব্লিউ হয়ে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩২ রান করেন সাকিব। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭ রান করা মাহমুদউল্লাহ উইকেট হারান রশিদ খানের গুগলিতে।

মাহমুদউল্লাহ আউট হন দলীয় ৯০ রান। সেখান থেকে ২৯ রান যোগ করতে শেষ ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মিরাজ ৪, মাশরাফি ও রুবেল শূন্য এবং রনি ১ রানে আউট হন। ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক। ৪২.১ ওভারে ১১৯ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। রশিদ খানের পাশাপাশি ২টি করে উইকেট নেন মুজিব ও গুলবাদিন। ১টি করে উইকেট পেয়েছেন আফতাব ও রহমত শাহ।

ব্যাট-বল হাতে বাজে দিন কাটিয়েছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তান চিরচেনা কন্ডিশনে ছিল দুর্দান্ত। আজই আবার মাঠে নামতে হচ্ছে দুই দলকে। এশিয়া কাপে সুপার ফোরের লড়াই শুরু হচ্ছে আজ থেকেই। দুবাইয়ে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত, আবু ধাবিতে পাকিস্তান খেলবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে।