women-mosjidবিশ্বের প্রায় সব জায়গায় বিভিন্ন আকৃতির মসজিদের দেখা মেলে। বেশিরভাগই পুরুষদের জন্য নির্মিত। কিছু মসজিদে নারীদের নামাজের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকলেও, নারী-পুরুষ বৈষম্য রয়েছে ঠিকই। সেই বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসতেই ১৮ শতাব্দীর দিকে চীনে প্রথম নির্মিত হয় শুধু নারীদের জন্য মসজিদ।

ওয়াংজিয়া হুটং ওমেন্স নামে পরিচিত এই মসজিদ চীনের কাইফেং শহরে অবস্থিত। এর ধারাবাহিকতায় পরে বিভিন্ন দেশে নারীদের জন্য একক মসজিদ নির্মিত হয়েছে। ২০১৫ সালে যুক্তেরাষ্ট্রে চালু হয়েছে নারীদের জন্য প্রথম একক মসজিদ। ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলেসের পিকো ইউনিয়নে অবস্থিত এই মসজিদের নাম ‘ওমেন্স মস্ক অব অ্যামেরিকা’।

chardike-ad

ডাউন-টাউনের একেবারে কাছেই এই মসজিদটি। ১৯২৫ সাল পর্যন্ত এটি সিনাই মন্দির হিসেবে ব্যহৃত হতো। এরপর বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে দীর্ঘদিন। ২০১২ সালে প্রাচীন ইহুদি নিদর্শন হিসেবে ভবনটি ইহুদি কমিউনিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে এই ভবনে মুসলমানসহ ছয় ধর্মের মানুষ প্রার্থনা করেন।

নির্মাণের শুরুতে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছে এই মসজিদ। ধর্মীয় গোড়ামির দোহাই দিয়ে অনেকেই নির্মাণের বিরোধিতা করেন। এদের কারো কারো মতে, নারী দ্বারা মসজিদ পরিচালনা ইসলাম পরিপন্থী। অনেকে মসজিদ নির্মাণ বিরোধী প্রচারণাও চালিয়েছেন।

তবে, সব সমালোচনার কালিমা মুছে ২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি জুমার নামাজের মধ্যে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র্র যাত্রা শুরু করে কেবল নারীদের ইবাদতের জন্য প্রথম মসজিদ। মুসলিম পাবলিক অ্যাফেয়ার কাউন্সিলের ইডিনা লেকোভিক-এর ইমামতিতে নামাজ আদায় করেন প্রায় একশ’ নারী ও শিশু।

মূলত, বৈষম্যের প্রতিবাদে ও নারীদের জন্য নিরাপদ নামাজের স্থান গড়ে তুলতে এই মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা এম হাসনা মাজনাভি ও অ্যাটর্নি সানা মুত্তালিব। ছয় সদস্যের কমিটি দ্বারা পরিচালিত মসজিদটির নির্মাণ খরচ যুগিয়েছেন এম হাসনা মাজনাভি।

১৫ হাজার বর্গফুটের মসজিদ ভবনে গ্রিক স্থাপত্যের শিল্পশৈলীর দেখা মেলে। লম্বা মসৃণ সাদা কলাম, নকশাখচিত বড় কাঠের তৈরি প্রবেশদ্বার এর সৌন্দর্য অতুলনীয় করে তুলেছে। মসজিদের মেঝে ছয় টুকরো তারাসদৃশ মোজাইকে আবৃত।

ভেতরে চমৎকার নকশাখচিত রঙিন কাচের জানালা মন কাড়ে সবার। খুতবা প্রদানের জন্য একেবারে সামনে রয়েছে একটি মঞ্চ। মঞ্চের পেছনে মেহরাব আকৃতির স্থান সাতশ’ পাইপ দিয়ে সজ্জিত। একেবারে কেন্দ্রে ঝুলে রয়েছে একটি ঝাড়বাতি। কাঠের বেশকিছু চেয়ার বসানো এর ব্যালকনিতে। মসজিদের ব্যালকনি থেকে দু’টি ব্যানার ঝুলানো হয়েছে। এর একটিতে মহান আল্লাহর বাণী লেখা রয়েছে। অন্যটিতে আরবি ক্যালিগ্রাফিতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর নাম লেখা; সংগে ইরেজিতে লেখা রয়েছে রসুল (সঃ)-এর বাণী।