Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

রানাতুঙ্গা ও মালিঙ্গার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ

ranatunga-malingaযৌন হয়রানির বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে দারুণ এক সামাজিক আন্দোলন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে #MeToo হ্যাশট্যাগে হয়রানির শিকার নারীরা একে একে মুখোশ উন্মোচন করছেন ভদ্রতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা নানা বিখ্যাত ব্যাক্তির। সমাজের বিভিন্ন স্তরে সুনামি হয়ে যেন আছড়ে পড়ছে এই #MeToo আন্দোলন।

এবার যার ঢেউ আছড়ে পড়লো ক্রিকেটাঙ্গনেও। যেন-তেন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে নয়। শ্রীলঙ্কার এমন দু’জন ক্রিকেটারের নামে উঠে আসলো এই অভিযোগ, যা শুনলে যে কারও চোখ কপালে উঠে যাওয়ার জোগাড়। তাদের দু’জনই আবার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। একনজন অর্জুনা রানাতুঙ্গা, বিশ্বকাপ জিতেছেন ১৯৯৬ সালে। অন্যজন লাসিথ মালিঙ্গা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিলেন ২০১৪ সালে।

chardike-ad

#MeToo মুভমেন্টে সামিল হয়ে ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপ জয়ী শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেন ভারতের এক ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট। সময় উল্লেখ না করলেও ওই ভারতীয় নারী নিজের ফেসবুক পেজে মুম্বাইয়ের হোটেলের সেই ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। তিনি এও অভিযোগ করেন, তৎক্ষণাৎ হোটেলের রিসেপশনে জানালেও, হোটেল কর্তৃপক্ষ সেটিকে তার ব্যক্তিগত বিষয় বলে উড়িয়ে দেয়।

শ্রীলঙ্কার এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার এখন দেশের পেট্রোলিয়াম রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। #MeToo আন্দোলনে যোগ দিয়ে এই হেভিওয়েট ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন ভারতীয় ওই নারী। তিনি জানান, রানাতুঙ্গা তার কোমর জড়িয়ে ধরে বুকে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কোনোমতে রানাতুঙ্গার পায়ে লাথি মেরে তিনি ছিটকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন।

ফেসবুকে ওই নারী ঘটনার বিবরণ দিয়ে লেখেন, ‘মুম্বাইয়ের হোটেল জুহু সেন্টারের লিফটে আমার এক সহকর্মী ভারত ও শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের দেখতে পেয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। হোটেলের রুমে গিয়ে ক্রিকেটারদের অটোগ্রাফ নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয় সে। তার নিরাপত্তা নিয়ে আমার দুশ্চিন্তা হওয়ায় আমিও যাই তার সঙ্গে। পরে নির্জন পুলের ধারে রানাতুঙ্গা আমার কোমর জড়িয়ে ধরে বুকের দিকে হাত নিয়ে যেতে থাকে। আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যাই। পুলিশে অভিযোগ করার কথা বললেও রানাতুঙ্গার কোনো বিকার ছিল না। শেষ পর্যন্ত কোনো রকম তার পায়ে লাথি মেরে ছিটকে বেরিয়ে আসি। হোটেলের রিসেপসনে ঘটনার কথা জানালে ওরা বলে এটা নাকি আমার ব্যক্তিগত বিষয়, এখানে ওদের কিছু করার নেই।’

লাসিথ মালিঙ্গার ঘটনাও ঘটেছিল মুম্বাইয়ের এক হোটেলে। কোনো এক আইপিএল চলাকালীন সময়ে। মালিঙ্গা আইপিএলে খেলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে। গত আসরে তিনি ছিলেন মুম্বাইর বোলিং কোচ। অভিযোগকারীনি অবশ্য নিজের পরিচয় প্রকাশ করেননি। তার হয়ে #MeToo আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুরো ঘটনাটা সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেন বিখ্যাত বলিউড প্লে-ব্যাক গায়িকা চিন্ময়ি চিপ্রদা।

চিপ্রদার টুইটে অভিযোগকারীনির ভাষায় লেখা হয়েছে এভাবে, ‘আমি নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে চাই না। মুম্বাইয়ে কয়েক বছর আগের ঘটনা। হোটেলে আমি আমার এক বন্ধুসহ অবস্থান করছিলাম ওই সময়। আমার বন্ধুকে ওই সময় খুঁজছিলাম আমি। তখন শ্রীলঙ্কার খুব বিখ্যাত এক ক্রিকেটার আমাকে বললেন যে, আমার বন্ধু নাকি তার রুমে রয়েছেন। আমি তখন তার রুমে যাই। গিয়ে দেখি, আমার বন্ধু সেখানে নেই। এই সুযোগে তিনি আমাকে বিছানায় টেনে নিয়ে যান এবং সেখানে আমাকে ফেলে জড়িয়ে ধরেন।

তবে এটাও ঠিক, আমি ছিলাম অনেক লম্বা এবং ওজনেও প্রায় তার সমান। কিন্তু ওই সময় আমার কিছুই করার ছিল না যেন। কারণ আক্রমণকারী পুরো আমার ওপর চেপে বসেছে। আমি উপায়ন্তর না দেখে চোখ আর মুখ বন্ধু করে রাখি। তিনি আমার চেহারার ওপরই চুমু খেতে থাকেন। এমন সময় হোটেলের কেউ একজন এসে ওই ক্রিকেটারের দরজায় নক করেন। কারণ, রুম পরিস্কার করার জন্য এসেছেন হোটেলের ওই অ্যাটেন্ডেন্ট। ওই ক্রিকেটার তখন উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেন। আমি দৌড়ে বাথরুমে চলে যাই এবং চোখ-মুখ ধুয়ে ফেলি এবং হোটেলের ওই কর্মী রুমে থাকতে থাকতেই দৌড়ে বের হয়ে যাই।

আমি ওই সময় নিজেকে খুব অপমানিত বোধ করছিলাম। কারণ, মানুষ হয়তো তখন আমাকে বলবে, তুমি তো নিজ ইচ্ছায় তার রুমে গিয়েছিলে। কারণ সে বিখ্যাত এবং তুমি নিজেই তা চেয়েছিলে। কিংবা তুমি নিজেই এমন পরিস্থিতি ডেকে এনেছিলে।’

অর্জুনা রানাতুঙ্গা এবং লাসিথ মালিঙ্গার বিরুদ্ধে ওঠা এই দুই অভিযোগে এখন ক্রিকেটাঙ্গন তোলপাড়। যদিও এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কারো কোনো বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি। কিংবা কেউ বলেওনি যে, এই অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে কিংবা তদন্ত করা হবে। দেখা যাক, কোথাকার পানি কোথায় গিয়ে গড়ায়!