Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ওমান প্রবাসী কলিমের স্বপ্নে হকারের রাজত্ব

kolimমাস্কাটে ২৫ বছরের প্রবাস জীবনে বহু অর্জন আছে কলিমের। দেশটিতে তিনি মানসম্মত ইমারতও নির্মাণ করেছেন। রাস্তাসহ আরও অনেক কিছুতে তার ছোঁয়া রয়েছে। বিদেশে তো অনেক কিছুই হলো; এবার তিনি দেশে কিছু করার চিন্তা করলেন। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে। কত জনের চাকরির সুযোগ হবে এমনটায় ইচ্ছা কলিমের।

যেই চিন্তা, সেই কাজ। তাড়াতাড়ি করে দেশে এসে ভালো জমি পছন্দ করলেন। রাস্তার পাশেই বলা যায়। বড় একটা মার্কেট করা যাবে। একদম শহরের প্রাণকেন্দ্রে। জমি কেনার কাজও শুরু করে দিলেন। শুরুতেই জমি সংক্রান্ত বিষয়ে পারদর্শী একজন আত্মীয়র সহযোগিতা নেন। দাম শুনে কলিম তখন খুশি। এরপরে ঘটে গেল অনেক ঘটনা।

chardike-ad

যা ঘটলো- দালাল ছাড়া কোন জমি কেনা যাবে না, কিনতে লাগবে মোটা অংকের টাকা। বড় অংকের ঘুষ ছাড়া সাব-রেজিস্টার জমি রেজিস্ট্রেশন করবেন না। আর কত সমস্যা পোহাতে হয়েছে কলিমকে।

এসব বিষয়ে কলিম চিন্তায় পড়ে যায়, কি যে করবে বুঝতে পারছে না? শখ থেকেই তার স্বপ্ন। তাই সে চিন্তা করে সব দিয়ে হলেও কাজটা সম্পন্ন করবে। বিদেশের মাটিতে বহু উন্নয়ন করেছে এখন দেশে কিছু একটা করবেই। পরিশেষে জমি কিনে কাজ শুরু।

এরপর গোপনে ঘটে গেল বেশকিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা। এলাকার ছেলের চাঁদা দাবি করলো। বিষয়টি সমাধানে জনপ্রতিনিধির কাছে গেলেন সাহায্যের জন্য। ফোনেই সামাধানের আশা জাগালেন তিনি। তবে, শর্ত রয়েছে। সব কাজের কন্ট্রাক্ট তাকেই দিতে হবে।

অন্যভাবে সমাধান করে কলিম নির্মাণ কাজ শুরু করালেন। তিনি স্পপতি, তাই এসব কাজ ভালো বুঝতেন। তাই ডিজাইনটা নিজেই করলেন। মাস্কাটের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এগোতে লাগলেন। সবকিছু নিখুঁতভাবে চলছিল। মার্কেটের সামনে পার্কিং’র জন্য অনেক বড় যায়গা ছেড়ে দিলেন। যেটা সহজে দেশের মানুষ করার কথা নয়।

এরপর কলিম যান প্লান পাস করাতে। ওখানে গিয়ে তিনি শুনলেন ৬ মাসেরও বেশি সময় লাগবে। তাহলে উপায় কি? টাকা ছাড়তে হবে। পরে দেখা করলেন প্রধান ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে। প্রথম দেখায় খুব আশা জাগালেন। লোকটার লম্বা দাড়ি। সাদা টুপি আর কপালে কালো দাগ। কথা বলার পর কলিমের স্বপ্ন ভেঙে যেতে লাগলো। কারণ মোটা অংকের টাকা ছাড়া কাজ হবে না।

কাজটা ছিল অত্যন্ত শখের তাই করতেই হবে। সে হিসেবে মোট অংকের কমিশন দিয়ে প্লান পাস করালেন। এখন কলিম খুব খুশি। দিন যায়, বছর যায় আর কলিমের সুরমা মার্কেট ওপরের দিকে উঠতে লাগল।

স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিলো। সব দোকান ভাড়া হলো। সামনের বিশাল খালি যায়গায় পার্কিং করে যে কেউ শপিং করতে পারে আর খোলা ফুটপাতে লোকজন ভালভাবেই চলাফেরা করে।

দীর্ঘ ১ বছর পরে কলিম দেশের বাড়ি চট্টগ্রাম। কত ভোগান্তির পর স্বপ্ন পূরণ হলো তার। বউ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে দেশে যান সবাইকে সঙ্গে নিয়ে। দেশে গিয়ে কলিম দেখলো তার স্বপ্নের ওপর হকারের রাজত্ব। মার্কেটের চারদিকে কত শত হকার। সেই সৌন্দর্য আর নেই। সবগুলো দেওয়াল ভরে গেছে বিভিন্ন পোস্টারে। তিনি অনেক সাহস নিয়ে হকারদের তাড়াতে গেলেন। হকাররা সাফ জানিয়ে দেন পুলিশকে টাকা দিয়ে আমরা এখানে বসি। আপনি কে ভাই?

তিনি গেলেন নিকটবর্তী থানায়। থানা থেকে জানানো হলো ভাই এরা গরিব, কেন তাড়াবেন? আপনি বিদেশ থাকেন এইসব নিয়ে মাথা না ঘামাইনোই ভালো। কলিম এখন আর দেশ নিয়ে আর চিন্তা করার সাহস পান না। স্বপ্নও দেখেন না।

লেখক- বাইজিদ আল-হাসান, সৌজন্যে- জাগো নিউজ