Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মৃত্যুর ঝুঁকি, তবু কেন এই দুঃসাহসী যাত্রা?

bangladeshiআমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের বিপজ্জনক সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশিদের অবৈধভাবে আসা কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। প্রতিদিন মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে খরস্রোতা নদী সাঁতরে আমেরিকায় ঢোকার চেষ্টা করছেন। নদীতে নেমে ডুবে মরতে বসেছে, এমন কোন কোন বেপরোয়া অভিবাসীকে সীমান্তরক্ষীরা উদ্ধার করছেন। আবার নদীর স্রোতে ভেসে অনেকে নিখোঁজ হয়েছেন। এক বছরে এই সীমান্ত দিয়ে প্রায় ৬৫০ জন বাংলাদেশিকে আটক করার কথা জানিয়েছে আমেরিকার সীমান্তরক্ষীরা। গত সপ্তাহান্তে আটক হয়েছেন আরও ছয়জন।

দালালদের খপ্পরে পড়ে বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ আমেরিকার নানা দেশ ঘুরে এসব বেপরোয়া অভিযাত্রী মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে আমেরিকায় প্রবেশ করছেন। আমেরিকার অভিবাসীদের হিসাব-নিকাশ শুরু হয় রাজস্ব মাস অনুযায়ী। গত অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে নতুন রাজস্ব মাস। শুধু ১ অক্টোবর একদিনেই সীমান্তের রিও গ্র্যান্ডে নদী পারাপারের সময় ৭৫ জনকে আটক করেছে আমেরিকার সীমান্তরক্ষী বাহিনী। আটক ব্যক্তিরা জানিয়েছে, বাংলাদেশে দালালদের তারা ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা দিয়ে এই ঝুঁকিপূর্ণ অভিযাত্রায় নেমেছে। আমেরিকায় পৌঁছে দেওয়ার নামে দেশের বিশেষ বিশেষ এলাকায় আদম পাচার দলের সদস্যরা এসব কাজে তৎপর রয়েছে।

chardike-ad

অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি না থাকায় বাংলাদেশ থেকে আদম পাচার বন্ধ হচ্ছে না। এভাবে অনেকেরই প্রাণহানি ঘটছে। সীমান্তে আটক লোকজন সীমান্তের আটক কেন্দ্রে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এভাবে বারবার বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে।

আমেরিকার দক্ষিণ ও মধ্য টেক্সাসের সীমান্তে রয়েছে উন্মুক্ত নদী। সেই সীমান্ত একেবারে খোলা। এমন সীমান্ত শত শত মাইলের। এই পথটিকে ব্যবহার করছে অবৈধ অভিবাসীরা।

লারেডো সাউথ বর্ডার পেট্রল স্টেশনে দায়িত্বপালনরত এজেন্টরা ১৯ নভেম্বর টেক্সাসের মাস্টারসন রোডে সন্দেহজনক চার অভিবাসীকে আটক করে। এ সময় লারেডো সেক্টর লাইন অপারেশনের অংশ হিসেবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের জবানিতে বেরিয়ে আসে, ওই চার যুবক বাংলাদেশি। পরদিন সকালে একই সংস্থা আরও একটি অভিযান চালায়। লারেডোর ওলিয়ান্দার স্ট্রিটে তারা দেখতে পায়, দুজন যুবক সন্দেহজনকভাবে হাঁটাহাঁটি করছে। নিরাপত্তা রক্ষীরা তাদের কাছে যায়। তারা দুই যুবককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জাতীয়তা পরিচয় দিতে গিয়ে তারাও জানায়, তারা দুজনই বাংলাদেশি। আদম পাচারকারী দলের সদস্যরা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তাদের নানা পথ ঘুরিয়ে আমেরিকায় এনেছে।

এর আগে ২৯ অক্টোবর ইউএস মেরিনের একটি দল নদীতে টহলের সময় দেখতে পায়, চারজনের একটি দল আমেরিকার ভূখণ্ডে ঢুকতে সাঁতার দিয়ে নদী পার হচ্ছে। দূর থেকেই মেরিন সদস্যরা দেখে এই চারজন সাঁতার কাটতে পারছে না, প্রায় ডুবে যাচ্ছে। কাছাকাছি যাওয়ার পর মেরিন দলের নজরে পড়ে, দুজন এরই মধ্যেই তলিয়ে যাচ্ছে। পরে সবাইকে উদ্ধার করে তীরে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে চারজনই স্বীকার করেন, দালালের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। আমেরিকায় আসার জন্য আদম পাচারকারী দলকে বিপুল অঙ্কের অর্থ দিয়েছে বলে তাঁরা জানান।

আমেরিকায় ঢোকার জন্য টেক্সাস সীমান্তজুড়ে হাজার হাজার অভিবাসী জমায়েত হয়েছে। এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছেন। বলেছেন, দুষ্কৃতকারীরা অবৈধভাবে আমেরিকায় প্রবেশ করছে। অবৈধভাবে আমেরিকায় আসা অভিবাসীদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া বন্ধের জন্য তিনি নির্বাহী আদেশও জারি করেছিলেন। যদিও ২০ নভেম্বর সানফ্রান্সিসকোর ফেডারেল জজ জন টিগার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ৯ নভেম্বর জারি করা নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। আমেরিকার ১৫৬৫ সালের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিস্ট অ্যাক্টে বলা আছে, বৈধ বা অবৈধভাবে আমেরিকায় প্রবেশ করা অভিবাসীরা এ দেশে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে পারবে।

ফেডারেল জাজের এই রায়ের কড়া সমালোচনা করেছে হোয়াইট হাউস। এ নিয়ে প্রশাসন উচ্চ আদালতে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমেরিকায় বিগত কয়েক বছরে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে। ২০০৮ সালে রাজনৈতিক আবেদনের সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার। ২০১৮ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৯৭ হাজারে। এর অধিকাংশই দক্ষিণ আমেরিকার নানা দেশ থেকে আমেরিকায় আসা অভিবাসী।

বিগত কয়েক বছর বাদ দিলে তার আগে বাংলাদেশিদের আমেরিকার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা তেমন আলোচনায় ছিল না। গত তিন বছরে প্রায় প্রতি সপ্তাহে সীমান্তের বিপজ্জনক অভিযাত্রায় প্রায় বাংলাদেশি ধরা পড়ছে। এসব ঘটনা নিয়ে আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের নাম আসছে নিয়মিত। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রাণহানির খবরও বেরিয়েছে একাধিক।

বাংলাদেশ থেকে এই বিপজ্জনক অভিযাত্রা থামছে না কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে মানবাধিকার সংগঠক কাজী ফৌজিয়া বলেন, অবৈধ এই মানব পাচারের প্রবাহ থামানোর দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারকেই নিতে হবে। স্থানীয়ভাবে যেসব এলাকায় আদম পাচারকারীরা সক্রিয়, সে সব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়াতে হবে। আদম পাচারকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে। বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে আমেরিকায় প্রাণ নিয়ে পৌঁছাতে পারলেও এখন এখানে বৈধতা পাওয়ার সুযোগ সীমিত।

ফৌজিয়া বলেন, ‘একর পর এক ঘটনা ঘটছে, কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এ নিয়ে নিস্পৃহ ভূমিকা পালন করছে। তিনি দেশের মানবাধিকার সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিদের এ নিয়ে সক্রিয় হওয়ার এবং আমেরিকার সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ অভিযাত্রা থামাতে কাজ করার আহ্বান জানান।

সৌজন্যে- প্রথম আলো