Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

kimআরেকটা জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেল উত্তর কোরিয়ায়। রোববার সারাদিন ভোট দিয়েছে দেশটির অধিবাসীরা। ভোটকেন্দ্রগুলোতেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। এ নির্বাচন কোরীয়দের অন্যতম বড় উৎসবও বটে। সর্বত্রই সাজসাজ রব। ভোটারদের উৎসাহিত করতে লাল-গোলাপী ফ্রক পরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় ছোট্ট ছোট্ট শিশু। ভোটকেন্দ্রের বাইরে বাজে ভোটের বাদ্য।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভোটাভুটিতে বিরোধী কোনো প্রার্থী নেই। প্রতি আসনে এক জন করে। ফলে বিজয়ী অনেকটা নির্ধারিতই। তিনি দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ারম্যান। ২০১১ সাল থেকে ডেমোক্রেটিক পিপল’স রিপাবলিক অব কোরিয়া তথা গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়ার শাসনদণ্ড তারই হাতে।

chardike-ad

তারপরও প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নিয়ম করে পার্লামেন্ট নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। নির্বাচিত হয় ‘সুপ্রিম পিপল’স অ্যাসেম্বলি’ নামে আইনসভা। এটাকে প্রায়ই ‘রাবার স্ট্যাম্প আইনসভা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন বিশ্লেষকরা। ভোট দেয়া প্রত্যেক নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক।

কিন্তু নিজেদের কোনো প্রতিনিধি বা নেতা নির্বাচন করেন না তারা। কারণ ব্যালট পেপারে শুধু একজন প্রার্থীর নাম। ভোট পড়ার হার সর্বদাই শতভাগের কাছাকাছি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটাও এক ধরনের গণতন্ত্র। তবে কিম স্টাইলের। ঠিক কিম ফ্যাশনের চুল কাটার মতোই। যেমন কিমের বেঁধে দেয়া স্টাইলের বাইরে কেউ তার চুলও কাটতে পারে না।

বিশ্ব থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন সমাজতান্ত্রিক উত্তর কোরিয়াকে গত কয়েক দশক ধরে শাসন করে আসছে কিম পরিবার। ২০১১ সালে বাবা কিম জন ইলের মৃত্যুর পর ক্ষমতা গ্রহণ করেন কিম। তার শাসনামলে এটা দ্বিতীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনের জন্য অনেকগুলো আসনে ভাগ করা হয় পুরো দেশ।

২০১৪ সালে আসন সংখ্যা ছিল ৬৮৬টি। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার মতে, ওই নির্বাচনে ৯৯.৯৭ ভাগ ভোট পড়েছিল এবং শতভাগ কিমের পক্ষে। তবে উত্তর কোরিয়া এক দলীয় দেশ নয়। কোরিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি ও কনডোইস্ট চংডু পার্টি নামে ছোট ছোট আরও দুটো দল রয়েছে। নির্বাচনের পর কিছু আসন তাদেরও দেয়া হয়।

নির্বাচনের দিন ১৭ বছর বা তদূর্ধ্ব সব নাগরিককেই ভোটকেন্দ্রে আসতে হবে এবং ভোট দিতে হবে। উত্তর কোরিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফিওদর টার্টিটস্কি বলেন, ‘আনুগত্যের নিদর্শন হিসেবে সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে আসা চাই। ফলে ভোটের লাইন অনেক দীর্ঘ হয়।’ ভোট দেয়ার সময় ভোটারকে একটি ব্যালট পেপার ধরিয়ে দেয়া হয় যাতে শুধু একজনের নাম। ফরম পূরণ করা বা সিল মারারও কোনো ঝামেলা নেই। পেপারটা নিয়ে সবার সামনে রাখা একটি বাক্সে ফেলে দিলেই কাজ শেষ।

গোপনে ভোট দেয়ার সুযোগও আছে। কিন্তু সেটা করতে গেলে পোলিং এজেন্টের সন্দেহের তালিকায় পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। টেবিলের ওপর একটি পেন্সিল রাখা হয়। ভোটার চাইলে একমাত্র প্রার্থীর ওপর ক্রস চিহ্ন দিয়ে দিতে পারেন। টার্টিটস্কি বলেন, এমনটা করলে নিশ্চিতভাবেই ওই ভোটারের পিছু নেবে গোয়েন্দা পুলিশ। অথবা তাকে পাগল সাব্যস্ত করা হবে। ভোটপ্রদান শেষে বাইরে অপেক্ষমাণ কিম সমর্থকদের সঙ্গে আনন্দ-উল্লাসে যোগ দিতে হয় ভোটারদের।

উত্তর কোরিয়ার নির্বাচন ব্যবস্থার সঙ্গে আকাশ-পাতাল তফাৎ দক্ষিণ কোরিয়ার। দেশটিতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের একটা সুষ্ঠু ও অবাধ প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। জনগণের ভোটের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন হয়। দুর্নীতির অভিযোগে ব্যাপক বিক্ষোভের পর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন দেশটির প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হাই।

উত্তর থেকে পালিয়ে দক্ষিণে গেছেন এমন ব্যক্তিরা দক্ষিণের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ‘অসাধারণ’ হিসেবে বর্ণনা করেন। লিবার্টি নামে প্রচারণা গোষ্ঠীর সদস্য সোকিল পার্ক বলেন, ‘আপনি ভোট দিয়েছেন। কিন্তু ফলাফল বের না হওয়া পর্যন্ত আপনি জানেন না, আপনার দল জিতবে নাকি বিরোধী দল। বিষয়টা সত্যিই মজার।’

সৌজন্যে- যুগান্তর