ঘূর্ণিঝড় ফণী ভারতের উড়িষ্যার উপকূলবর্তী এলাকায় আঘাত হানার পর এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। আজ শনিবার সকাল ৬টা থেকে উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে সাতক্ষীরা,যশোর ও খুলনা অঞ্চল এবং এদের পাশ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান করছে।
বড় কোন প্রভাব না পড়লেও কাল রাত থেকেই ঘূর্ণিঝড় ফণির প্রভাব পড়তে থাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে। এরই মধ্যে পটুয়াখালী, বরগুনাতে বাধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে অনেক গ্রাম। আর সারাদেশে বজ্রপাত ও ঝড়ের তাণ্ডবে ঘড় চাপা পড়ে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন।
এরমধ্যে নোয়াখালীতে ঘর চাপা পড়ে ১ জন; আহত অন্তত ৩০, বরগুনার পাথরঘাটায় খলিফার হাটে ঘর চাপা পরে ২ জন নিহত হয়েছে। বাগেরহাটের থানপুরে গাছের ডাল পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ো হাওয়ার দরুণ বজ্রপাতে কিশোরগঞ্জে ৬, নেত্রকোণায় ২ ভোলাতে ১ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে এখন পর্যন্ত।
এটি বাংলাদেশের উপর দিয়ে আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে এবং সারাদেশে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এটি বাংলাদেশে ৬ ঘণ্টা অবস্থান করতে পারে। এর পর এটি আবারও ভারতে প্রবেশ করবে। বাংলাদেশে অবস্থানের সময় এটির গতিবেগ থাকবে ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার।
এতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ফনি তার দিক পরিবর্তন করেছে। এটি খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, নড়াইল, মেহেরপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী ও রংপুর হয়ে ভারত চলে যেতে পারে। ফনির আঘাতে বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে এখন পর্যন্ত ১৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে।
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ফনির প্রভাবে রিাজধানীসহ সারাদেশে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামছুদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, ঘূর্ণিঝড় ফনি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে নয়, দেশেল মধ্যাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে।
এটি সাতক্ষীরার উত্তর দিয়ে যশোর, ঝিনাইদহ, রাজশাহী ও ময়মনসিংহের দক্ষিণ দিয়ে চলে যেতে পারে। এসব এলাকায় প্রবল বাতাস হতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গ পেরিয়ে আসার পথে আরও দুর্বল হয়ে এই ঘূর্ণিঝড় শনিবার বেলা ১১-১২ টার মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যাঞ্চলে পৌঁছাতে পারে বলে আবহাওয়াবিদদের ধারণা।
এর আগে ফনির সম্ভাব্য আঘাতের কথা বলা হয়েছিল সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষীপুর, নোয়াখালী চট্টগ্রাম। এসব অঞ্চল অতিক্রমকালে ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৯০-১১০ কি.মি বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে জানানো হয়েছিল।
এসব অঞ্চলের ১২ লাখ মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ফনির প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ইতিমধ্যে দেশের দুই সমুদ্রবন্দর মোংলা ও পায়রা বন্দরকে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ভারতের ওড়িশ্যার পর পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় ফনি। ওড়িশ্যায় প্রবল বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রপাতে এ পর্যন্ত ৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় দেড় শতাধিক। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ফনির আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে ওড়িশ্যা।
ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড় ফনির কারণে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের ১২ লাখ ৪০ হাজার ৭৯৫ জন মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে।