শনিবার । ডিসেম্বর ১৩, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক বিজনেস ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৭ অপরাহ্ন
শেয়ার

বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ একমাসে বেড়েছে ৩৫৫ মিলিয়ন ডলার


বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ একমাসে বেড়েছে ৩৫৫ মিলিয়ন ডলার

বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতার লক্ষণ এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সুদের হারের ব্যবধান বৃদ্ধির প্রভাবে টানা সাত মাস কমার পর, গত ফেব্রুয়ারি থেকে আবারও ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের আউটস্ট্যান্ডিং বা স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০.১৬ বিলিয়ন ডলার, যা আগের মাসের তুলনায় ৩৫৫ মিলিয়ন ডলার বেশি। গত জানুয়ারি শেষে এ ঋণের স্থিতি ছিল ৯.৮ বিলিয়ন ডলার। এর আগে টানা প্রায় আট মাস ধরে এ ঋণের পরিমাণ কমছিল।

এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই সম্প্রতি নীতি সুদহার কমানো হয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক ঋণের সুদের হার আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। পাশাপাশি গত দুই মাস ধরে ডলারের বিনিময় হারেও স্থিতিশীলতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এসব কারণে ব্যবসায়ীরা এখন ডলার ঋণ নিতে আগের তুলনায় বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে ডলারের এক্সচেঞ্জ রেট বাড়তে শুরু করার পর এর প্রভাব পড়ে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের ওপর। তখন ব্যবসায়ীরা ডলার ঋণ পরিশোধের দিকে ঝুঁকতে থাকেন। কারণ, ডলারের দর বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীদের বিনিময় হারের ঝুঁকি এবং লোকসান বেড়ে যাচ্ছিল। এর ফলে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে এ ধরনের ঋণের স্থিতি ছিল ১৬.৪২ বিলিয়ন ডলার, যা এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ৪.৬৩ বিলিয়ন ডলার কমে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়ায় ১১.৭৯ বিলিয়ন ডলারে।

২০২৪ সালের শুরু থেকে এই ঋণের পরিমাণ ওঠানামার মধ্যে থাকলেও, গত বছরের জুন থেকে এটি টানা কমতে শুরু করে। এর অন্যতম কারণ ছিল গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং ডলারের বিনিময় হারের অস্থিতিশীলতা। তবে সর্বশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আবার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে এ স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ।

বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তাদের মতে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় মুদ্রায় নেওয়া ঋণের সুদের হারের ব্যবধান অনেক বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলার ঋণের সুদের হার কমে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে এসেছে। এর পেছনে মূল কারণ, ডলার ঋণের বেজ রেট হিসেবে পরিচিত সিকিওরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) কমে যাওয়া।

অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক দফায় পলিসি রেট বাড়িয়ে বর্তমানে ১০ শতাংশে উন্নীত করায় স্থানীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে এখন প্রায় ১৪ শতাংশ সুদ গুনতে হচ্ছে, যা আগে ছিল ৯ শতাংশ। অর্থাৎ দেশীয় ও বিদেশি ঋণের সুদের হারের ব্যবধান দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। ফলে ব্যবসায়ীদের জন্য বিদেশি মুদ্রায় ঋণ নেওয়ার খরচ এখন কমেছে। এছাড়া গত দুই মাস ধরে ডলারের বিনিময় হার কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও আবার এ ধরনের ঋণ নেওয়ার বিষয়ে ভরসা পাচ্ছেন।

ফেব্রুয়ারি মাসে বেসরকারি খাতে বায়ার্স ক্রেডিট এবং স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে আগের মাসের তুলনায় বায়ার্স ক্রেডিটের মাধ্যমে নেওয়া ঋণ বেড়েছে ২০৯ মিলিয়ন ডলার। একই সময়ে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার।

এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি আগের চেয়ে কম হলেও সামগ্রিকভাবে আমদানির পরিমাণ গত কয়েক মাস ধরে বাড়ছে। আমদানি বাড়ায় স্বাভাবিকভাবেই এসব আমদানির বিপরীতে নেওয়া ঋণও বাড়ছে। অন্যদিকে, ডলারের বিনিময় হারের ঝুঁকি কমে আসায় অনেক ব্যবসায়ী তাদের আগের নেওয়া ঋণের মেয়াদ বাড়াচ্ছেন।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমদানি এলসি খোলা হয়েছে ৬.২৬ বিলিয়ন ডলারের, যা গত বছরের একই সময়ের ৫.২২ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১৯.৯২ শতাংশ বেশি। এছাড়া, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসেই ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি এলসি খোলা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থাগুলোর দেওয়া বাংলাদেশের কান্ট্রি রেটিং উন্নয়নে জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, “দেশে বিদেশি ঋণ ও নতুন বিনিয়োগ বাড়াতে হলে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বিদেশি ঋণ গ্রহণ ও বিনিয়োগে চলমান প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব হবে না।”

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ফেব্রুয়ারি শেষে সিঙ্গাপুর, হংকং, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে নেওয়া ঋণের আউটস্ট্যান্ডিং বা স্থিতি পরিমাণ জানুয়ারির তুলনায় বেড়েছে। অপরদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও কয়েকটি দেশ থেকে নেওয়া ঋণে এ ধরনের পরিমাণ কমেছে।

 

খবর: টিবিএস