প্রথমবারের মতো ভারতের শীর্ষ ১০০ ধনী ব্যক্তির প্রত্যেকেই বিলিয়নেয়ারের খাতায় নাম লেখালেন। সম্পদ সাময়িকী ফোর্বসের হিসাবে তাদের মোট সম্পদের বাজারমূল্য এখন ৩৮ হাজার ৬০০ কোটি ডলার, যা ১১ মাস আগের চেয়ে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি এবং ১২৭ কোটি মানুষের দেশ ভারতের জিডিপির প্রায় এক-পঞ্চমাংশের সমান। খবর ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস।
মে মাসের লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বড় বিজয়ের পর তাদের নেতা নরেন্দ্র মোদি এক টুইটারবার্তায় লিখেছিলেন, ভালো দিন আসছে।
ব্যবসাবান্ধব হিসাবে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে নিজেকে প্রমাণ করা মোদির কথা সবচেয়ে বেশি ফলেছে ভারতের বড় ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে। মোদি ম্যাজিকে বছরের প্রথম আট মাসে ভারতের শেয়ার সূচক প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে, যার সুবাদে দেশটির শীর্ষ ধনীদের সম্পদমূল্যও বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ।
তবে বরাবরের মতোই অর্থনীতি সে তুলনায় কম এগিয়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশপাশি মূল্যস্ফীতি ও বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণের চাপ রয়েই গেছে এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির নীতিনির্ধারকদের ওপর।
টানা অষ্টম বছরের মতো ভারতীয় ধনীদের তালিকায় ১ নম্বরে আছেন মুকেশ আম্বানি। মুম্বাইভিত্তিক ম্যানুফ্যাকচারিং কনগ্লোমারেট রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান আম্বানির মোট সম্পদমূল্য এখন ২ হাজার ৩৬০ কোটি ডলার, যা এক বছর আগের তুলনায় ২৬০ কোটি ডলার বেশি।
১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার সম্পদের মালিক দিলীপ সাংভি এবার লন্ডনভিত্তিক ভারতীয় ইস্পাত টাইকুন লক্ষ্মী মিত্তালকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছেন। জাপানের দাইইচি সানকিউর কাছ থেকে প্রতিযোগী র্যানবেক্সির শেয়ারগুলো কিনে নেয়ায় তার সম্পদমূল্য অন্যদের তুলনায় বেশি বেড়েছে। সাংভির সম্পদ এখন এক বছর আগের চেয়ে ৪১০ কোটি ডলার বেশি। ইস্পাতের বাজারে চাহিদা আশানুরূপ না বাড়ায় ৫ নম্বরে নেমে গেছেন মিত্তাল।
গত এক বছরে সম্পদমূল্য সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বন্দর ম্যাগনেট গৌতম আদানির। গুজরাটে ব্যবসা করা আদানি এবারের তালিকায় ১১ ধাপ এগিয়ে ১১ নম্বরে উঠে এসেছেন।
সবচেয়ে বড় পতন হয়েছে ‘কিংস অব গুড টাইমস’খ্যাত বিজয় মালিয়ার। বর্তমানে বন্ধ থাকা কিংফিশার এয়ারলাইনসের পাহাড়সম দেনাই তাকে ডুবিয়েছে। গত বছর ৮০ কোটি ডলার সম্পদের মালিক মালিয়া ছিলেন ৮৪ নম্বরে। বিমান সংস্থাটি ঋণখেলাপি হওয়ায় তিনি এখন তালিকার বাইরে। তবে ভারতের সবচেয়ে বড় অ্যালকোহল প্রস্তুতকারী ইউনাইটেড স্পিরিটের কর্ণধারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তিনি কিংফিশারের দেনা পরিশোধে যথেষ্ট আন্তরিক ছিলেন না।
ভারতের বিলিয়নেয়ারদের বয়স ৪০-৯১ এর মধ্যে। ইস্পাত, নির্মাণ, টেলিকম, তেল-গ্যাস, সফটওয়্যার, ভোগ্যপণ্যসহ নানা খাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাদের সৌভাগ্য। ভারতের সেরা ১০০-এর তালিকায় চারজন নারীও রয়েছেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের তুলনায় বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা বাড়াতে না পারলেও এলিট, ত্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণী ও কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য নিয়ে অস্বস্তিতে আছে ভারত। জিডিপি ও বিশ্ব অর্থনৈতিক সংযুক্তির সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সম্পদবৈষম্য নিয়ে সেখানে ক্ষোভও বাড়ছে।
২০০৯ সালে দেশটিতে বিলিয়নেয়ার ছিলেন ৫২ জন, যা পাঁচ বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়েছে। জিডিপির বিপরীতে শীর্ষ ধনীদের সম্পদমূল্যের অনুপাতও বেড়েছে। কিন্ত বিলিয়নেয়ার সৃষ্টিতে সাফল্য দেখালে দারিদ্র্য বিমোচনে তার ধারেকাছেও নেই ভারত।
মার্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনে এখন ১৫২ জন বিলিয়নেয়ার। বিলিয়নেয়ার সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচন দুই দিক থেকেই ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি।
সূত্রঃ বণিকবার্তা।