
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ঘটনার পরপরই দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হামলার প্রায় ১২ ঘণ্টার মধ্যেই সে সীমান্ত অতিক্রম করে।
তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, হামলার পর পরিকল্পিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ আলামত গায়েব করা হয়। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার অভিযুক্ত ফিলিপের দুই সহযোগী জবানবন্দিতে জানিয়েছে- ফয়সাল ও তার এক সহযোগী ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়।
গোয়েন্দাদের তথ্যমতে, ফয়সালের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের আইপি অ্যাড্রেস বিশ্লেষণে ভারতের মহারাষ্ট্রে তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে। দেশটিতে একটি রিলায়েন্স সংযোগ ব্যবহার করে যোগাযোগের প্রমাণও মিলেছে।
হত্যাকাণ্ডের প্রধান দুই অভিযুক্ত এখনো পলাতক হলেও তদন্তে পুরো ঘটনার নকশা প্রায় পরিষ্কার। সূত্র বলছে, চলতি জুলাইয়ে দেশে ফেরার পর ফয়সাল করিম মাসুদ, কামাল, রুবেল ও মাইনুদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা সবাই কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে দাবি তদন্তকারীদের।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ৪ ডিসেম্বর রাতে প্রথমবার বাংলামোটরের ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করার চেষ্টা করে ফয়সাল ও তার সহযোগী কবির। এরপর ৯ ডিসেম্বর রাতে আবার সেখানে যান ফয়সাল ও আলমগীর- এবার নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে এবং ১২ ডিসেম্বর তাঁরা সরাসরি হাদির প্রচারণায় যুক্ত হন।
তদন্ত বলছে, প্রচারণায় যুক্ত হওয়ার পরই হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। এর অংশ হিসেবে নরসিংদী, সাভার ও মানিকগঞ্জে রেকি পরিচালিত হয়। ১১ ডিসেম্বর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ফয়সাল পশ্চিম আগারগাঁওয়ে বোনের বাসায় অবস্থান নেয়। হামলার দিন ভোরে তারা হেমায়েতপুরের একটি রিসোর্টে যায়- যেখানে আগে থেকেই ছিল ফয়সালের বান্ধবী মারিয়া ও তার বোন। রিসোর্টে হাদির একটি ভিডিও দেখিয়ে হামলার পরিকল্পনা জানানো হয় এবং ঘটনার পর যোগাযোগ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানায় তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র।
এরপর বেলা ১১টা ৫ মিনিটে আগারগাঁও থেকে মোটরসাইকেলে রওনা হয়ে তারা সেগুনবাগিচায় হাদির প্রচারণায় যোগ দেয়। দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে হাদি মতিঝিলের পথে রওনা হলে ফয়সাল ও তার সহযোগীরা পিছু নেয়।
দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে মতিঝিলে জামিয়া দারুল উলুম মসজিদের সামনে জুমার নামাজ আদায় করেন হাদি। নামাজ শেষে ২টা ১৬ মিনিটে তিনি রওনা দিলে আবারও তাদের অনুসরণ করা হয়। তদন্তে উঠে এসেছে, পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে ঢোকার পর দুপুর ২টা ২৪ মিনিটে খুব কাছ থেকে হাদির মাথায় দুটি গুলি ছোড়া হয়।
হত্যাকাণ্ডের পর ফয়সাল পলায়নের নকশা বাস্তবায়ন করে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যায়। তদন্তকারীরা বলছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যেই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ডের পেছনের শক্তি উন্মোচন করা সম্ভব হবে।






























