কোরিয়ায় ইপিএস কর্মী নিয়োগে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ শ্রীলংকা এবং নেপাল থেকে কর্মী নিয়োগ ক্রমাগত বাড়লেও বাড়েনি বাংলাদেশের। গত চার বছর ধরেই ৯ থেকে ১০ হাজারের ঘরে আটকে আছে বাংলাদেশী কর্মীর সংখ্যা। ইপিএসে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে বাংলা টেলিগ্রাফের বিশেষ প্রতিবেদন।
কোরিয়া ইমিগ্রেশনের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে ইপিএস ভিসা নিয়ে ৯ হাজার ৫৬২১ জন বাংলাদেশী কোরিয়ায় কাজ করছে। যা বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল এবং শ্রীলংকার অর্ধেকেরও কম। বর্তমানে কর্মরত শ্রীলংকার ইপিএস কর্মীর সংখ্যা ২৪ হাজার ২৭৭ জন এবং নেপালের কর্মীর সংখ্যা ২৩ হাজার ৭৩০জন। ২০১০ সালে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমার থেকে নিয়োগকৃত কর্মীর সংখ্যা ছিল মাত্র ২হাজার ৭৫৩জন। ৫ বছরের ব্যবধানে সেই সংখ্যা এখন ১৬হাজার ৪২৮ জন।
২০০৭ সালে বাংলাদেশ থেকে ইপিএস কর্মী নিয়োগ শুরু হওয়া পর এইবছরের আগস্ট পর্যন্ত ১২ হাজার ৯৭০জন কর্মী কোরিয়ায় নিয়োগ পেয়েছে। যার মধ্যে অনেকেই নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দেশে ফিরে গিয়েছেন। অনেকেই পুনরায় নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে কোরিয়ায় দ্বিতীয়বারের মত কাজের সুযোগ পেয়েছেন। তবে একটি নির্দিষ্ট অংশ দেশে ফেরত না গিয়ে অবৈধভাবে কোরিয়ায় বসবাস করছেন। সম্প্রতি রিফুজি ভিসায় আবেদনের সংখ্যাও আশংকাজনক হারে বেড়েছে।
বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ না বাড়ার কারণ এবং কিভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে বাংলা টেলিগ্রাফকে মতামত দিয়েছেন ইপিএস কর্মী কামরুল হাসান সুমন এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির সাধারণ সম্পাদক এম এন ইসলাম।
চাকরি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশী এখন অনেক সচেতন
কামরুল হাসান সুমন, ইপিএস কর্মী, কিম্পু, সিউল
“আমি সিউলের কিম্পুতে সাড়ে তিনবছর ধরে একটি কোম্পানিতে কর্মরত আছি। আশেপাশে অনেক বিদেশীরা কাজ করেন। বাংলাদেশী এবং অন্যান্য সব দেশের লোকজনকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়। বর্তমানে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশীরা খুব কমই চাকরি পরিবর্তন করেন। প্রথমদিকে এই হার একটু বেশি ছিল। এখন ফিলিপাইন বা ভিয়েতনামের তুলনায় অনেক কম।
কর্মী সংখ্যা বাড়াতে হলে সরকারী পর্যায় থেকে কোরিয়ান সরকারের কাছে আরো চাপ প্রয়োগ দরকার। তাহলে কর্মী সংখ্যা বাড়বে। অনেক সময় বাংলাদেশের কোটা পূরণ হয়না। সেটার জন্য আমরা বাংলাদেশীরা শুধু দায়ী এইটা ভাবা ভুল। সেক্ষেত্রে এইচআরডি কোরিয়ারও একটা ভূমিকা আছে। তারা চাইলে অনেক সময় কোম্পানীগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে। কোম্পানীগুলো যখন লোকবল চান তখন তারা যদি বাংলাদেশী কর্মীদের তালিকা না দেয় তবে কোম্পানীগুলোর কিছুই করার থাকেনা। অনেক কোম্পানী বাংলাদেশী কর্মী সম্পর্কে ধারণাও রাখেন না।
আরেকটা অভিযোগ শুনেছি হালাল খাবারের কারণে বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ কমে যাচ্ছে। এইটা আমার কাছে কোন কারণ মনে হয়না। আমাদেরকে কোরিয়ানরা খাবার নিয়ে কখনো জোরাজুরি করেনা। কাউকে জোরাজুরি করেছে বলেও শুনিনাই। মালিকপক্ষ বা কোরিয়ান কলিগদের প্রথমদিকে একটু বুঝিয়ে বললে হয়। ইন্দোনেশিয়ানরা হালাল খাবার খায় এবং বাংলাদেশীদের চেয়ে তারা আরো বেশি মেনে চলে। কিন্তু তাদের কর্মী সংখ্যাতো কমছেনা”।
এম এন ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন কোরিয়া
“বাংলাদেশী কর্মীরা কোরিয়াতে সুনামের সাথে কাজ করছে। তারপরও কর্মীর সংখ্যাটা বাড়ছে না। এর সঠিক কারণ বলাটা কঠিন। এক্ষেত্রে আমাদের যেসব ভাই বর্তমানে ইপিএসে কাজ করছেন তারা চাইলে অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারেন। ধরুন একটা কোম্পানীতে দশজন বিদেশী কর্মী কাজ করে এবং সেখানে তিনজন বাংলাদেশী। কোম্পানী যদি আরো তিনজন কর্মী নিয়োগ করতে চান তবে বাংলাদেশীরা একটু এগিয়ে এসে কোম্পানীকে বললে অনেকসময় কাজ হয়। এভাবেই সংখ্যাটা বাড়াতে হবে। ভাল কাজ করলে, সুনাম অর্জন করলে কোম্পানীগুলোতে কর্মীসংখ্যাও বাড়াবে। বেশ কিছু বাংলাদেশী ভাই আছে যারা অপর বাংলাদেশীকে সুযোগ দিতে চান না। নিজের কোম্পানীতে অন্য কোন বাংলাদেশী আসলে অনেকেই ঝামেলা মনে করেন বা কোন সমস্যায় পড়বেন বলে মনে করেন। এই ধরণের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।
কমিউনিটিগুলোর আসলে এক্ষেত্রে বেশি কিছু করার থাকেনা। বিসিকেসহ অন্যান্য কমিউনিটিগুলো ইপিএস কর্মীদের সমস্যা সমাধানে সহায়তা, ঘন ঘন চাকরি পরিবর্তন না করার জন্য সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো চালিয়ে যাচ্ছে । বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে বিনোদনের ব্যবস্থা কিংবা মিলনমেলার ব্যবস্থা করে আসছে। কমিউনিটি আরো শক্তিশালী হলে সরকারকে সাথে নিয়ে হয়ত ইপিএস কর্মী নিয়োগ নিয়ে আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবে। কাজটা কারো একার না। সরকার, কমিউনিটি, ইপিএস কর্মী এবং সকল প্রবাসীর কাজ। সবাই যদি নিজের অবস্থান থেকে কাজ করে তাহলে আগামীতে আমরা আরো ভাল অবস্থানে যেতে পারব”।