চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে কর্মকর্তাদের লকার পরিদর্শন ও খুলতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় গেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল।
আজ রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তল্লাশি চালানোর জন্য দুদকের পরিচালক সায়েমুজ্জামানের নেতৃত্বে আট সদস্যের দলটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পৌঁছায় বলে বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, ‘দুদকের দল এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযান পরিচালনা করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের টিম মনে করছে, লকারে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ, বিদেশি অর্থ, স্বর্ণালংকার থাকতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় ৩০০ লকার রয়েছে সেখানে। আজকে যতটুকু পারেন করবেন৷ প্রয়োজনে আরও ২-১ দিন সেখানে অভিযান চলতে পারে।’
আজকের অভিযান শেষে বিস্তারিত বলা যাবে বলেও জানান তিনি।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ৩০০ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এসব সুরক্ষিত লকারে তাদের বিভিন্ন সম্পদের সম্পদ ও মূল্যবান কাগজপত্র সংরক্ষণ করেছেন। এগুলো অবৈধভাবে অর্জন করা হয়েছে বলে মনে করছে দুদক।
সূত্র বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ৩০০ প্রাক্তন ও বর্তমান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এই লকারগুলোতে সম্পদ ও মূল্যবান নথিপত্র জমা রেখেছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, দুদকের টিমটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারেন্সি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক আমিনুল ইসলাম আকন্দ এর রুমে তারা রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘দুদকের টিমটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২৫ কর্মকর্তার লিস্ট নিয়ে এসেছেন। তারা কারেন্সি ডিপার্টমেন্টে লকারের নিয়ে লেজার খাতায় কোনো তথ্য পাননি।’
অভিযানের সুবিধার্থে ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন।
সূত্র জানায়, এসব লকারে কর্মকর্তাদের জ্ঞাত আয়ের উৎসের বাইরে কোনো সম্পদ পাওয়া গেলে অনুসন্ধান শুরু করবে দুদক।
সূত্র আরও জানায়, বড় অংকের সম্পদ মজুদ রয়েছে এমন সন্দেহে সম্প্রতি এসব লকার খোলার জন্য আদালতের অনুমোদন পেয়েছে দুদক।
লকার খোলার বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠিও পাঠিয়েছে দুদক।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিকিউরিটি ভল্টে ব্যাংক কর্মকর্তাদের অর্থ ও সম্পদ রাখার জন্য ব্যবহৃত তিন শতাধিক গোপন লকার শনাক্ত করে দুদক। লকারগুলো বর্তমান ও প্রাক্তন সিনিয়র এবং ভিআইপি কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত বলে জানা গেছে।
অভিযানে সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীর গোপন লকারে অভিযান চালিয়ে পাঁচ কোটি টাকারও বেশি দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়।
এরই পেক্ষিতে দুদকের পক্ষ থেকে আদালতের কাছে আবেদন করেন এই সমস্ত লকার খুলে দেখার।
আদালতের কাছে দুদকের আবেদনে বলা হয়, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার অর্থসম্পদ ও অন্য মূল্যবান নথিপত্র সেফ ডিপোজিট আকারে রেখেছেন বলে তাদের ধারণা হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার নামেও লকার রয়েছে।