তৈরি পোশাক খাতের বাইরে রপ্তানি বাড়াতে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে কমিটি গঠন

 

chardike-ad

তৈরি পোশাক খাতের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাতগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে নগদ প্রণোদনার পাশাপাশি অতিরিক্ত সহায়তার উপায় চিহ্নিত করতে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এছাড়া, ১০ ফেব্রুয়ারি সরকারের এক আদেশের মাধ্যমে তৈরি পোশাক খাতের বাইরে সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাতগুলোর বিকাশে একটি বিশেষ প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়েছে।

চামড়া, পাট, কৃষি, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য ও ওষুধশিল্প খাতের রপ্তানি সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং প্ল্যাটফর্মের রূপরেখা তৈরিতে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে গঠিত এই কমিটিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)-এর প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।

এ বিষয়ে জারি করা সরকারি আদেশ অনুযায়ী, কমিটি আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দাখিল করবে।

এই খাতগুলোর রপ্তানি সক্ষমতা বৃদ্ধির পথে বিদ্যমান বাধাগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি, কমিটি সরকারের কাছে আর্থিক ও অ-আর্থিক নীতি সহায়তা নিয়ে সুপারিশ দেবে।

২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পর রপ্তানি প্রণোদনা বন্ধ হলে খাতগুলো কোন ধরনের সমস্যায় পড়বে এবং সেসব সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় নির্ধারণ করবে কমিটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এফবিসিসিআই এর প্রশাসক এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের সাবেক মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান টিবিএস-কে বলেন, “অনেক বছর ধরে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও, এসব সম্ভাবনাময় খাত নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোন কমিটি কাজ করেনি। তাই এলডিসি গ্রাজুয়েশনের আগে এ ধরনের কমিটি গঠন করে সম্ভাবনাময় এসব খাতে স্পেশাল ইনসেনটিভ দেওয়ার উদ্যোগ খুবই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।”

তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনার হার খুবই কম এবং এলডিসি গ্রাজুয়েশনের কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে তেমন প্রভাব পড়বে না। কারণ, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২০২৯ সাল পর্যন্ত জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়া যাবে।

মো. হাফিজুর রহমান জানান, “চামড়া, পাট, কৃষি ও ওষুধ রপ্তানির জন্য নগদ সহায়তার হার অনেক বেশি। কিছু খাতে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত নগদ সহায়তা রয়েছে। এসব খাতের জন্য বিকল্প প্রণোদনার ব্যবস্থা না হলে ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর রপ্তানি নেতিবাচক প্রভাবিত হবে। তাই এসব খাতের রপ্তানি সক্ষমতা ধরে রাখার পাশাপাশি সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ প্রশংসনীয়।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির একজন সদস্য টিবিএস-কে জানান, গত অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের সময় প্রতিটি খাতের নগদ সহায়তা কমানো হয়েছে। এছাড়া, ২০২৬ সালের জুনে সরকারের যে বাজেট ঘোষণা করার কথা, সেই বাজেটে নগদ সহায়তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের পরিকল্পনা ছিল।

তিনি আরও জানান, বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর নগদ সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং তা মোকাবেলায় বিদ্যুৎ বিলে ভর্তুকিসহ বিকল্প প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ এসেছে।

তিনি জানান, তবে বর্তমানে সরকার বিকল্প প্রণোদনা হিসেবে কোন সুবিধা রপ্তানিমুখী খাতগুলোকে দেবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে, আগামী বাজেটের আগেই একটি কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং নতুন বাজেটে এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসবে।

তিনি আরও জানান, রপ্তানি সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর জন্য বিকল্প প্রণোদনা নিয়ে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, তবে পরবর্তী বাজেটের আগে একটি কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং নতুন বাজেটে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।