Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সৌদিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেকের যত কথা

টানা এক সপ্তাহের সৌদি সফরকালে দফায় দফায় বৈঠককালে সরকারের মনোভাব, বিএনপির করণীয়, আন্দোলনের কৌশল নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মদিনায় মহানবীর (স.) রওজা মোবারক জিয়ারত করার পর মক্কায় পবিত্র ওমরাহ  থেকে পবিত্র শবেকদরের রাতের ইবাদত পালন পর্যন্ত সময়ের ফাঁকে ফাঁকে কমপক্ষে ছয়বার পারিবারিক বলয়ে বৈঠক করেন মা বেগম খালেদা জিয়া ও ছেলে তারেক রহমান। এ সময় নিজেদের শারীরিক অবস্থা, সরকারের আনা সব মামলার সর্বশেষ অবস্থা ছাড়াও বিএনপিরসাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে বিশদ কথা হয়।

news_imgসূত্র জানায়,  এর মধ্যে পারিবারিক কথাবার্তার বাইরে দল এবং আগামী দিনের আন্দোলনসহ দেশের রাজনীতিই অধিক গুরুত্ব পায়। ঈদের পরপরই ‘হোমওয়ার্ক’ শুরু করাসহ দল গোছানোর বিষয়েও আলোচনা করেন তারা। সৌদি আরব বিএনপি ও চেয়ারপারসনের সফর সঙ্গীরা এসব তথ্য জানান। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তারেক রহমান এবার দল ও চেয়ারপারসন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ওপর ছিলেন ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত। সেই প্রথম দিন দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে মক্কা-মদিনা পর্যন্ত যাকে যেখানেই পেয়েছেন ইচ্ছামতো একহাত নিয়েছেন। দলীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের রাজনীতিতে বেশি নাক না গলিয়ে অফিসের কাজ ঠিকমতো দেখার নির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান। একই সঙ্গে দলীয়, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুধু রাজনীতিবিদদেরই করার এখতিয়ারের কথাও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন গুলশান অফিসের কর্মকর্তাদের।

chardike-ad

জানা যায়, দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বেশ কয়েকটি বিষয়ে তার মা এবং দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে অত্যন্ত খোলামেলা কথাবার্তা বলেছেন। যেমন দলের ভিতরে আমলা ও সুবিধাবাদীদের দূরে রাখার পক্ষে জোর দেন। যার পাশাপাশি দালাল কিংবা সুবিধাবাদী শ্রেণির ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে অপেক্ষাকৃত অগুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে স্থানান্তরের পক্ষে মত দিয়েছেন তারেক রহমান। একই সঙ্গে সরকারের এজেন্ট হিসেবে যারা সন্দেহভাজন তাদেরও দূরে রাখার পরামর্শ দেন তারেক রহমান। এই রোজার ঈদের পরপরই দেশব্যাপী আন্দোলনের ‘হোমওয়ার্ক’ শুরু করা হবে বলে জানা যায়।

তবে এক সপ্তাহের সৌদি সফরকালে মা ও ছেলে উভয়কেই বেশ আত্মপ্রত্যয়ী দেখা গেছে। এ সময় তাদের মধ্যে আগামী দিনের গণআন্দোলন ও সে আন্দোলনে জনগণের আশু বিজয়ের ব্যাপারে তাদের আস্থারও কোনো প্রকার কমতি ছিল না বলে জানান সৌদি বিএনপির (পূর্বাঞ্চল) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আন্দোলনের প্রস্তুতির বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো ভিত্তি না থাকলেও  সাফল্যের ব্যাপারে দেখা গেছে,  দৃঢ় আশাবাদী দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। বৈঠকের কথাবার্তায় মনে হয়েছে, এবার বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলনের ডাক দিলে দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষই রাস্তায় নেমে আসবে। কারণ দেশের সর্বস্তরের মানুষ এই সরকারের আমলে কমবেশি ভুক্তভোগী। তবে তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কিছু লোককে এবার তার দায়িত্ব দিতে হবে। যারা কর্মসূচি ঘোষণা করে কখনই পালিয়ে যাবেন না এবং আন্দোলন তথা তৃণমূল নেতা-কর্মীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। বাণিজ্য করবেন না কোনো স্তরের কমিটি গঠন নিয়ে। এভাবেই দল ও অঙ্গ সংগঠনের ত্বরিত পুনর্গঠন চান তারেক রহমান। এ জন্যই গুলশান কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা তাকে মদিনা ও মক্কায় প্রটোকল দিতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, আমার কোনো প্রটোকল দরকার নেই। আমারটা আমি একাই সামাল দিতে পারব। এখানে ধর্মীয় কাজ করতে এসেছেন, সেসব নিয়েই থাকুন। আমার সঙ্গে আসবেন না। দলীয় কার্যালয়ের এসব কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে তিনি সৌদি আরব বিএনপির (পূর্বাঞ্চল) সভাপতি আহমদ আলী মুকিমকে প্রটোকল মেইনটেইনের দায়িত্ব দেন এবং ওমরাহ পালন থেকে শুরু করে এবারের সৌদি সফরের যাবতীয় কর্মকাণ্ডে তিনি ও রয়েল প্যালেসের লোকেরাই এবার দলীয় চেয়ারপারসনের সব প্রটোকল মেইনটেইন করেন। আর ঢাকা থেকে যেসব কর্মকর্তা তারেক রহমানের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গিয়েছিলেন তাদের পেছনে পেছনে দূরত্ব বজায় রেখেই থাকতে হয়েছে। এমনকি মক্কায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সাফা প্যালেসে ছবি তুলতে গেলে সংশ্লিষ্ট ফটোগ্রাফারকে তারেক রহমান রীতিমতো ধমকের সুরেই বলেছেন, বন্ধ করুন এসব। এখানে ধর্মীয় কাজের জন্য এসেছি। ছবি তোলার রাজনীতি বাদ দিন। এতে থতমত খেয়ে যান ফটোগ্রাফারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ ছাড়া সফরের প্রথমদিনে ১৯ জুলাই রাত ৯টায় দুবাই এয়ারপোর্টেই ভিআইপি লাউঞ্জে গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তাসহ বিএনপির নির্বাহী কমিটির একজন কর্মকর্তাকে দেখে রীতিমতো বিরক্ত হন এবং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তারেক রহমান বলেন, আপনারা এখানে কোন? অতঃপর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও নেতারা মুখে তালা দিয়ে তা সহ্য করেন বলে জানা যায়।সূত্র জানায়, সৌদি সফর শেষে বিদায় বেলা জিয়া পরিবারের সদস্যরা পরস্পরকে ধরে কাঁদলেন এবং এ সময় উপস্থিত অন্যদেরও কাঁদালেন। নেতা-কর্মী ও মায়ের কান্নার জবাবে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘আর কান্না নয়, বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে লড়াই হবে এখন। কাঁদতে হবে না আর, শীঘ্রই দেশে ফিরব’ বলে তিনি পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন।দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া : সৌদি বাদশার আমন্ত্রণে পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল সন্ধ্যা ৮টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছেন খালেদা জিয়া। বিমানবন্দরে তাকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা ফুলের তোড়া দিয়ে সংবর্ধনা জানান।এর আগে গত ১৯ জুলাই বেগম খালেদা জিয়া ওমরা পালনের জন্য সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। সেখানে বেগম জিয়ার সঙ্গে তার বড় ছেলে তারেক রহমান, পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান ও নাতনি জায়মা রহমানের সঙ্গে দেখা হয়। এ কয়দিন তারা মক্কা-মদিনায় একসঙ্গেই কাটান এবং পবিত্র ওমরাহ পালন করেন। এরপর খালেদা জিয়া ঢাকায় ফিরে আসেন এবং তারেক রহমান সপরিবারে লন্ডন ফিরে যান। সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন।