Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

এবোলা আতঙ্কে দক্ষিণ কোরিয়ার জরুরি বৈঠক

দক্ষিণ কোরিয়া সরকার সোমবার পশ্চিম আফ্রিকাতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী এবোলা ভাইরাস মোকাবেলা করার উপায় নিয়ে আলোচনা করতে  জরুরি বৈঠক  আহ্বান করে। কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কর্মকর্তারা দেশের মধ্যে ভাইরাস প্রবেশ রোধ করার উপায় নিয়ে আলোচনা করার পরিকল্পনা করেন । এছাড়াও বিদেশে ভ্রমণরত দক্ষিণ কোরিয়ান নাগরিকদের রক্ষা করতে, এবং সংক্রমিত এলাকায় তার নাগরিকদের জন্য সঙ্গনিরোধ এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া সম্পর্কেও আলোচনা করা হবে।

ক্রমবর্ধমান সংক্রমনের ভীতিকর এই পরিস্থিতিতে সউলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক একটি ইভেন্টে যোগদান করতে আসা তিন নাইজেরীয় নাগরিককে কোরিয়াতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।

chardike-ad

১৯৭৬ সালে এবোলা ভাইরাস আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় এ রোগে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যেত; কিন্তু পশ্চিম আফ্রিকার এখনকার পরিস্থিতিতে বলতে হয়, ভয়াবহ মহামারী। লাইবেরিয়া, গিনি, সিয়েরা লিওন ও নাইজেরিয়াতে এখন পর্যন্ত এবোলা কেড়ে নিয়েছে ৬৭২টি প্রাণ; সংক্রামিত হয়েছে কমপক্ষে ১২০০ জন। এ বছর রোগটি প্রথম নির্ণীত হয় ফেব্রুয়ারিতে।  

download (2)ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) পশ্চিম আফ্রিকার পরিস্থিতিকে ভয়াবহ অ্যাখ্যা দিয়েছে। এর পরিচালক বার্ট ইয়ানসেন একটি ফরাসী দৈনিককে দেয়া সাক্ষাত্কারে জানিয়েছেন, পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশ এবোলা প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে যা করছে, তা এক কথায় নগণ্য। এভাবে মহামারি ঠেকানো যায় না। খু্ব শীঘ্রই এটি আশপাশের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়বে এবং একটা সময়ে হয়তো এসে যাবে এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকাতেও। সেটি ঘটবে আকাশপথের যাত্রীদের মাধ্যমে। এবোলায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ। এবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বরের পাশাপাশি মাথা, পেশি ও গলায় ব্যথা এবং শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ হয়। বমি ও ডায়রিয়াও হতে পারে। কিডনি ও লিভার ধীরে ধীরে অকেজো হতে শুরু করে।

এবোলার ঔষধ বলতে গেলে কিছুই নেই। টেকমিরা ফার্মাসিউটিক্যালস টিকেএম-এবোলা নামক ঔষধ আবিষ্কার করলেও তা এখনও যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন্স (এফডিএ)-এর অনুমোদন পায়নি। হেলথ কেমপেইনাররা দ্রুত অনুমতি দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। কারণ যত দ্রুত অনুমতি দেয়া হবে, তত বেশি প্রাণ বাঁচবে। এ পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে যাদের উপর এ ঔষধ প্রয়োগ করা হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবোলার বিরুদ্ধে সংগ্রামে সাহায্য করার জন্য আরো দুই মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ দিয়েছে। এখন মোট তহবিল দাঁড়িয়েছে ৩.৯ মিলিয়ন ইউরো। এর উদ্দেশ্য শুধু অন্যদের সাহায্যই নয়, নিজেরাও বিপদমুক্ত থাকার চেষ্টা করা। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এরইমধ্যে এবোলার ব্যাপারের সতর্কতা জারি করেছে। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংগঠন (আইসিএও) বৈশ্বিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এ রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে। আর প্যান-আফ্রিকান এএসকেওয়াই এয়ারলাইনস লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিয়নের রাজধানীর সকল ফ্লাইট বাতিল করেছে।

এবোলা ছড়ানোর সম্ভাবনা দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতে সবচে’ কম। তবে পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নয়। আফ্রিকা থেকে আসা বিমানযাত্রীদের মাধ্যমে চলে আসতে পারে এ রোগ। আর একবার আসলে সংক্রমিত লোকের সংখ্যা বাড়বে জ্যামিতিক গতির চেয়েও বেশি গতিতে। এবোলায় আক্রান্ত হয়ে এক বছরে সর্বোচ্চ ২৪০ জন মারা গিয়েছিল। আর চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসেই এ সংখ্যাটা ৬৭২। শেষ পর্যন্ত এ ঘাতক ব্যাধি কত প্রাণ কেড়ে নেবে তা আন্দাজ করা মুশকিল। তবে বর্তমান গতি বহাল থাকলে নিঃসন্দেহে তা হাজার পেরোবে। এমনকি আরো অনেক বেশিও হতে পারে।