Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

গাজা নিয়ে সৌদি বাদশার মুখ খোলার রহস্য

গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রায় ২৫ দিন পর শুক্রবার সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহ গাজায় ইসরাইলের নাম উচ্চারণ না করেই ফিলিস্তিনিদের ওপর ভয়াবহ ও নৃশংস হামলা সম্পর্কে ‘বিশ্ব সমাজের নীরবতার’নিন্দা করেছেন!

বাদশাহ আব্দুল্লাহ গাজায় ভয়াবহ ও নৃশংস হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’এবং ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’বলেও অভিহিত করেছেন।

chardike-ad

‘বিশ্ব সমাজের নীরবতার’ফলে শান্তি বিরোধী প্রজন্ম গড়ে উঠবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সৌদি বাদশার এ সংক্রান্ত এক লিখিত বক্তব্য এক রাজ কর্মকর্তা বা মুখপাত্র পড়ে শোনান।

image_92925_0 এদিকে সৌদি আরবের প্রধান মুফতি বা সৌদি শরিয়া বোর্ডের গ্র্যান্ড মুফতি আবদুল আজিজ আল আশ শেইখ বলেছেন, ইসরাইল-বিরোধী মিছিল করা সম্পূর্ণ হারাম। তিনি আরো বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে মিছিল করা অর্থহীন সস্তা আবেগপ্রসূত তৎপরতা মাত্র!

এর আগে সৌদি রাজপুত্র ও সাবেক গোয়েন্দা প্রধান তুর্কি ফয়সাল গাজায় গণহত্যা তথা ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের জন্য দখলদারদের দোষ না দিয়ে বরং হামাসকেই দায়ী করেছেন!

তুর্কি বলেছিলেন: হামাস অতীতের মতোই ভুল করে যাচ্ছে এবং গোঁয়ার্তুমি করে ইসরাইলে অকার্যকর বা প্রভাবহীন রকেট নিক্ষেপ করছে বলেই ইসরাইলি সেনারা ফিলিস্তিনে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে!

তবে সম্প্রতি সবচেয়ে মারাত্মক খবরটি ফাঁস করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। ওই খবরে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরাইলি হামলা বা যুদ্ধের খরচ বহন করছে সৌদি, জর্দান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশর সরকার!

এ অবস্থায় গণহত্যার শিকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি বাদশা আবদুল্লাহর কথিত সহমর্মিতা যে আসলে মায়াকান্না ও লোক-দেখানো পদক্ষেপ তা দশ বছরের বালকের কাছেও অস্পষ্ট থাকার কথা নয়।

রাই আল ইয়াওম সংবাদ মাধ্যমের ‘আবদুল বারি আতওয়ান’সহ স্পষ্টভাষী আরব সাংবাদিক ও বিশ্লেষকদের মতে আসলে বাদশা আবদুল্লাহর কপটতা ফুটে উঠেছে আরো বেশ কয়েকটি কারণে। প্রথমত তিনি তার ওই বক্তব্যে ইচ্ছে করেই ইসরাইলের নাম মুখে আনেননি। ইসরাইলই যে এতোসব আগ্রাসন, গণহত্যা ও সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে তা তিনি অন্তত একবারও মুখে আনার সাহস করেননি!

দ্বিতীয়ত, গাজায় অপরাধযজ্ঞ ও গণহত্যা চলছে বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন, কিন্তু বলেননি যে কিভাবে এই গণহত্যা ঠেকানো যায় এবং সৌদি আরব এ ব্যাপারে কী করতে পারে! সৌদি বাদশাহ গাজায় গণহত্যা ঠেকানোর বিষয়ে আরব দেশগুলোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের নিয়ে বা পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে অন্তত কোনো জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠানের আহ্বান জানাতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি।

উল্লেখ্য, বাদশার ওই বক্তব্য যখন পড়ে শোনানো হচ্ছিল তখনই গাজায় ইসরাইলি ঘাতক বিমানগুলোর হামলায় ৬০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়। নিহতদের এক তৃতীয়াংশই ছিল শিশু ও নবজাতক। এ সময় উত্তর গাজায় ইসরাইলি গোলার আগুনে পুড়ে মারা যায় তিন ফিলিস্তিনি শিশু। গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের বর্তমান সংখ্যা ১৭০০ ছাড়িয়ে প্রায় ১৮০০’র কাছাকাছি (১৭৬৭) পর্যায়ে পৌঁছেছে। আহত হয়েছে প্রায় ৯ হাজার। ইসরাইল নিজেই যুদ্ধ-বিরতি ঘোষণা করে নিজেই তা লঙ্ঘন করছে এবং হাসপাতাল ও জাতিসংঘের স্কুলেও হামলা অব্যাহত রেখেছে।

তৃতীয়ত প্রশ্ন হলো গাজায় গণহত্যার ব্যাপারে প্রায় চার সপ্তাহ নীরব থাকার পর সৌদি সরকারের মধ্য থেকে কেবল বাদশাহ আবদুল্লাহই কেন সরব হলেন? আসলে তারা এটাই চাচ্ছিলেন যে স্বাধীনতাকে সংহত ও টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে ব্যস্ত (তাদের ভাষায়) ‘গাজা নামক ঝামেলাটি’ মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাক! ইসরাইল কেন এখনো গাজাকে ধ্বংস করতে পারল না সে জন্য তারা ইসরাইলের ওপরই ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

চতুর্থত, ফিলিস্তিনের আরব ও সুন্নি মুসলমান ভাইদের জন্য যদি সৌদি বাদশার মনে কোনো দরদই থাকতো তাহলে তিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলতেন। যেমন, তিনি এখনও কেনো তেল-অস্ত্র প্রয়োগের কথা বলছেন না? অথচ ১৯৭৩ সালে তার ভাই ফয়সাল ইসরাইল ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে তেল-অবরোধ আরোপ করেছিলেন। (ফয়সালকে সম্ভবত এ জন্যই পশ্চিমা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে জীবন দিতে হয়েছিল  নিজ ভাতিজার হাতে।)

সৌদি বাদশাহ কেন গাজার ওপর অবরোধ তুলে নেয়ার কথা ও সেখানে প্রায়ই ইসরাইলি হামলা ঘটার কথা তুলে ধরে এইসব অপরাধ বন্ধের স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেননি? আহত ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসার জন্য তিনি কি বলতে পারতেন না তারই স্নেহ-ধন্য মিশরের সিসি যেন রাফাহ ক্রসিং পয়েন্ট দিয়ে আহতদের চিকিৎসার জন্য সৌদি আরবে আসার সুযোগ দেন এবং এ ব্যাপারে কোনো হয়রানি বা টালবাহানা না করেন? বার বার ইসরাইলি হামলার শিকার গাজার দশটি হাসপাতালসহ সেখানকার সর্বত্র খাদ্য ও ওষুধ আর চিকিৎসা সামগ্রী শেষ হয়ে আসার খবর কি তিনি জানেন না? ইয়াতিম ও পঙ্গু শিশুদের জন্য তিনি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন। আরো শিশু ও নবজাতক যেন ইসরাইলি গোলার আঘাতে টুকরো টুকরো না হয়ে যায় সে জন্য তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন বা তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে তিনি কি বলেছেন? আহতদের চিকিৎসার জন্য বাদশা তো খুলে দিতে পারতেন এয়ার ব্রিজ বা বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা।

দশ হাজার কিলোমিটার দূরের দেশ ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়া, ইকুয়েডর, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা ইসরাইলি গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। এইসব দেশ গাজার আহতদের চিকিৎসার সুযোগ দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এই দেশগুলোর মধ্যে কয়েকটি দেশ ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে তাদের রাষ্ট্রদূতকে ইসরাইল থেকে ফেরত এনেছে এবং এমনকি বলিভিয়া ইসরাইলকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে অভিহিত করে তার সঙ্গে কিছু চুক্তিও বাতিল করেছে। কিন্তু আজো কোনো আরব দেশের রাষ্ট্র প্রধান এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি! বরং মিশর গাজার সঙ্গে তার সীমান্ত আরো মজবুত করে বন্ধ করে দিয়েছে যাতে বোমা হামলা থেকে পালানোর কোনো পথ খুঁজে না পায় সমুদ্র ও ইসরাইল-বেষ্টিত গাজাবাসী এবং গাজাবাসীদের জন্য জরুরি পণ্য সরবরাহের লাইন হিসেবে ব্যবহৃত গোপন সুড়ঙ্গগুলো ধ্বংস করছে! তারা গণহত্যার জন্য জল্লাদদের দায়ী না করে বরং মজলুমকেই দোষারোপ করছে!

কিন্তু গাজার সন্তানহারা পিতা ও শহীদদের জননীরা বলছেন: আমাদের নারীরা আবারও জন্ম দেবে বীর যোদ্ধাদের এবং গাজা কেবল আল্লাহর কাছেই মাথা নত করবে! –আইআরআইবি।