শনিবার । জুন ২১, ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার বিজনেস ৪ জুন ২০২৫, ৩:৫২ অপরাহ্ন
শেয়ার

কোম্পানির তহবিলের ওপর করের চাপ কমাল সরকার


কোম্পানির তহবিলের ওপর করের চাপ কমাল সরকার

নতুন অর্থবছর ২০২৫–২৬ থেকে কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন তহবিল থেকে কাটা উৎসে করকে চূড়ান্ত বিবেচনা করা হবে। ফলে এসব তহবিলের জন্য আর আলাদাভাবে বার্ষিক কর রিটার্ন জমা দেওয়া বা নিরীক্ষা করানোর দরকার হবে না।

সোমবার (২ জুন) ঘোষিত অর্থ অধ্যাদেশে সরকার ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে এই নতুন নিয়ম যুক্ত করেছে।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও অর্থনীতি ও করনীতি বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নিরীক্ষার বাধ্যবাধকতা তুলে দিলে তহবিল ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

এখন কোম্পানি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ফান্ড এবং ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেটরি ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) পরিচালনা করে। এসব তহবিল সাধারণত সঞ্চয়পত্র, ব্যাংকের স্থায়ী আমানত (এফডিআর) ও অন্যান্য নিরাপদ খাতে বিনিয়োগ করা হয়। একটি কোম্পানির একাধিক তহবিল বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ থাকতে পারে।

এই তহবিল থেকে আসা আয় এখন ১৫ শতাংশ করের আওতাভুক্ত। বিনিয়োগের সময় ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটা হয়। তবে অর্থবছর শেষে কর রিটার্ন জমা দিয়ে বাকি ৫ শতাংশ কর পরিশোধ করতে হয়। পাশাপাশি, প্রতিটি তহবিলের জন্য আলাদাভাবে বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি এবং কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য বদিউল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, এটি একটি ‘ব্যবসা-বান্ধব পদক্ষেপ’।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি তহবিলের জন্য আলাদাভাবে নিরীক্ষা ও রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা কোম্পানিগুলোর আর্থিক ও প্রশাসনিক ব্যয় বাড়াচ্ছিল। নতুন নিয়মে সেই ব্যয় কমবে। তাছাড়া, অনেক সময় উৎসে কর নির্ধারিত হারের চেয়ে কম হারে কাটা হয়, ফলে কোম্পানিগুলোর সামগ্রিক করের বোঝাও কিছুটা কমবে।’

বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরীও এই উদ্যোগকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুই বছর আগেও এসব তহবিলের জন্য কর রিটার্ন দেওয়ার কোনও বাধ্যবাধকতা ছিল না। কিন্তু তখনকার বাজেটে রিটার্ন ও নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ায় তা কোম্পানিগুলোর জন্য বাড়তি ব্যয় তৈরি করেছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন উৎসে করকেই চূড়ান্ত ধরা হলে কর রিটার্ন জমা দেওয়ার ঝামেলা কমবে। এতে খরচ কমবে এবং কর বিধি মেনে চলা কোম্পানিগুলোর জন্য এটি স্বস্তির বিষয় হবে। এই সিদ্ধান্ত ব্যবসা সহজ করার দিকেও একটি বড় অগ্রগতি।’

শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব তহবিলের অর্থ মূলত সঞ্চয়পত্র, ট্রেজারি বন্ড ও ব্যাংক এফডিআর-এ বিনিয়োগ করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ এবং ট্রেজারি বন্ডে ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটা হলেও, বছরের শেষে ১৫ শতাংশ হারে চূড়ান্ত কর হিসাব করে বাকি কর দিতে হয়। কিন্তু নতুন নিয়মে উৎসে করই চূড়ান্ত হওয়ায় আর অতিরিক্ত কর দেওয়ার দরকার পড়বে না।

তবে এই পরিবর্তন নিয়ে কিছু উদ্বেগও আছে। চৌধুরী এমদাদ অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা অংশীদার এস কে জামি চৌধুরী—যার চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম প্রতিবছর প্রায় ১৫০টি কোম্পানির নিরীক্ষা করে—সতর্ক করে বলেন, নিরীক্ষা ও রিটার্নের শর্ত শিথিল করলে তহবিল ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

তিনি বলেন, ‘নিরীক্ষার বাধ্যবাধকতা না থাকলে তৃতীয় পক্ষের যাচাই কমে যাবে। এতে করে তহবিল ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এমনকি অপব্যবহারের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।’

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২৫ হাজার কোম্পানি বার্ষিক কর রিটার্ন জমা দেয়। এর মধ্যে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় সব কোম্পানির প্রভিডেন্ট ফান্ড থাকলেও, গ্র্যাচুইটি ফান্ড ও ডব্লিউপিপিএফ রয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ বা তারও কম প্রতিষ্ঠানে—যারা মূলত কর পরিপালনকারী হিসেবে পরিচিত।