শনিবার । জুলাই ১২, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক দেশজুড়ে ১৮ জুন ২০২৫, ১১:০৩ পূর্বাহ্ন
শেয়ার

৯ মাসে কুরআনের হাফেজ হলো সাত বছরের মুহাম্মদ


mohammadমাত্র ৭ বছর বয়সেই সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করে বিরল সম্মান অর্জন করেছে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার এক শিশু। মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ নামের এই মেধাবী শিশুটি মাত্র ৯ মাসে কুরআন হেফজ সম্পন্ন করে হাফেজ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। তার এই কৃতিত্বে খুশিতে আত্মহারা তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক, সহপাঠী ও স্থানীয় জনসাধারণ। দেশবাসীর কাছে তার জন্য দোয়া চেয়েছেন পরিবার ও শুভানুধ্যায়ী সবাই।

মুহাম্মাদ ভেড়ামারা উপজেলার সাতবাড়ীয়া ফায়ার সার্ভিস মোড় এলাকার বাসিন্দা, ইসলামি শিক্ষাবিদ মুফতি আব্দুল্লাহ বিন আমজাদের সন্তান। সে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র। পারিবারিকভাবে কুরআনের আলোয় আলোকিত একটি পরিবেশে বেড়ে উঠেছে মুহাম্মাদ। তার মা হাফেজা আলেমা মাসুমা জান্নাত, নানি হাফেজা আলেমা রাবেয়া বসরী এবং নানা হাফেজ মাওলানা মুফতি গোলাম কিবরিয়া—সকলেই ইসলামী শিক্ষায় সুদক্ষ। শুধু তাই নয়, মুহাম্মাদের পরিবারের অন্তত ১৫ জন সদস্য কুরআনের হাফেজ।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হেফজ শুরু করে ২০২৫ সালের মে মাসে তা সম্পন্ন করে মুহাম্মাদ। হাফেজ মুহাম্মদ জানায়, “আমি প্রতিদিন পাঁচ লাইন করে মুখস্থ করতাম। এক পৃষ্ঠা মুখস্থ হলে তা রিভাইজ দিতাম, এরপর পরবর্তী পৃষ্ঠায় যেতাম। প্রতিদিন এক থেকে চার পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়তাম। ১০ থেকে ১১ মিনিটে এক পৃষ্ঠা মুখস্থ করতে পারতাম।”

সে আরও জানায়, “প্রতিদিন ফজরের পর নানুমনিকে সবক শুনাতাম। সকাল সোয়া ৯টা পর্যন্ত সাতবার সবক দিতাম। এরপর ঘুম, তারপর আবার পড়া, খাওয়া, গোসল শেষে বিকেলে আরও পড়তাম। সন্ধ্যার পর মাগরিবের নামাজের পরে আবার পড়াশোনায় বসতাম।”

তার মা ও নানি ভেড়ামারার মাছুমা জান্নাত মহিলা মাদ্রাসা পরিচালনা করেন। সেখানেই মুহাম্মাদের হেফজের পুরো যাত্রা। বিশেষ করে তার নানি হাফেজা রাবেয়া বসরীর কঠোর তত্ত্বাবধান, নিয়মিত পড়া আদায় এবং অধ্যবসায় মুহাম্মাদের এই সাফল্যের প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। তার মা মাসুমা জান্নাতও সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে মুহাম্মাদের পড়া নিতেন।

মুহাম্মাদের বাবা বলেন, “আমার ছেলে মাত্র সাড়ে পাঁচ বছর বয়সে কায়দা শেষ করে। এরপর ৫ মাসে নাজেরা সম্পন্ন করে। হেফজ শুরু করে ৭ বছর বয়সে, এবং মাত্র ৯ মাসেই হেফজ সম্পন্ন করে। এটি অলৌকিক না হলেও অত্যন্ত দুর্লভ এবং মহান আল্লাহর অশেষ রহমত। তার মা ১১ মাসে হেফজ সম্পন্ন করেছিল। মুহাম্মাদ সেই রেকর্ড ভেঙে ৯ মাসে হাফেজ হয়েছে।”

এই অসাধারণ অর্জনের পেছনে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের অবদান অপরিসীম। মুহাম্মাদ জানায়, “আমি বড় হয়ে একজন হাফেজ, মাওলানা ও মুফতি হতে চাই। আমার জন্য দোয়া করবেন সবাই।”