Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি কর্মীদের প্রধান সমস্যা কাফালা পদ্ধতি

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের প্রধান সমস্যা কাফালা পদ্ধতি। বিদেশি কর্মীদের জন্য তার কফিলই (জামিনদার) নানা সসম্যা সৃষ্টি করছে। এদের কারণে কর্মীরা ভালো চাকরির অফার পেয়েও যেতে পারছেন না। অনেক সময়ে এই জামিনদারের কাছেই কাগজপত্র রেখে পালিয়ে গিয়ে ওই কর্মী অবৈধ হয়ে যান।

জনশক্তি রপ্তানি খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, ষাট বছরের  বেশি সময় ধরে বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান ও লেবাননে কাফালা পদ্ধতি চালু রয়েছে। এই পদ্ধতিতে একজন কফিল বা জামিনদার তার নির্দিষ্ট আয় ও পরিবারের সদস্যদের ওপর ভিত্তি করে ৮ জন কর্মী নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা প্রত্যেক কর্মীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে টাকা পান। অর্থাত্ তিনিই মধ্যস্বত্ব ভোগী হয়ে যান। এছাড়াও ওই কর্মী সেই দেশে যে কাজই করুক না কেন তার থেকে একটা উপার্জনের অংশও কফিল পাবেন। কঠিন শর্ত থাকায় অনেক সময় কফিলরা পাসপোর্ট ফেরত দেন না। কর্মীদের চাকরির অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হতে হয়। পারিবারিক কাজে নিয়োগ পাওয়া কর্মী তথা গৃহপরিচারিকা ও গাড়ির চালকদের জন্য কোনো আইন না থাকায় নিয়োগকর্তারা তাদের বেলা বেশি স্বেচ্ছাচারিতা চালান । এই পদ্ধতির কারণে কর্মী তার মালিকের কাছে আবদ্ধ থাকেন। কর্মী বেশি সুযোগ পেলেও অন্য জায়গায় চাকরি করতে পারেন না। পাসপোর্ট কফিলের কাছে থাকায় অনেক সময় পালিয়ে গেলেও কফিল তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেন। কর্মী তখন অবৈধ হয়ে যান। এসব দেশে অনেক ভালো কফিলও রয়েছেন, যারা কর্মীর সঙ্গে ভালো আচরণ করেন। তবে এর সংখ্যা অনেক কম।

chardike-ad

modernকাফালা পদ্ধতির পরিবর্তন জরুরি উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী বর্তমানকে বলেন, কাফালা পদ্ধতির পরিবর্তন নিয়ে গত বছর বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উত্থাপিত বেশ কিছু সুপারিশ পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের কাছে উত্থাপন করা হয়েছিল। এতে কর্মী নিয়োগ নিয়োগকর্তার হাতে নয়, বরং তা মন্ত্রণালয়ের হাতে ছেড়ে দেয়ার কথা বলা হয়। একই সঙ্গে  দূতাবাসকে ফ্রি আইনি সহায়তা দেয়ার কথা বলা হয়। এছাড়া এ বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপাক্ষিক ফোরামও গড়ে তোলারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

ড. তাসনিম সিদ্দিকী জানান, জামিনদারের মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদি শ্রম অভিবাসন ‘কাফালা’ পদ্ধতির পরিবর্তনে জর্ডানে ২০০৩ সালে এবং ২০০৯ সালে লেবাননে স্ট্যান্ডার্ড চুক্তি হয়েছে। বিষয়টি চাইলে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ অনুসরণ করতে পারে।

এছাড়া গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে নয় দেশের মন্ত্রী থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক করেছেন। এতে কফিলের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকের বরাত দিয়ে অধ্যাপক তাসনিম বলেন, কর্মী গ্রহণকারী দেশগুলো বলেছে  তাদের  চাহিদা ও যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মী পাঠাতে হবে। ফ্রি ভিসায় যেসব দেশ থেকে লোক যায় তারাই কাফালা পদ্ধতির সমস্যায় বেশি পড়েন। কোম্পানি ভিসায় গেলে এই  সমস্যায় পড়তে হয় না। যেহেতু বাংলাদেশের কর্মীরা ফ্রি ভিসায় বেশি যাচ্ছেন, তাই তাদের সমস্যাই বেশি।

এ ব্যাপারে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) এক পরিচালক বর্তমানকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে কর্মী গ্রহণকারীদেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন ফোরামে এই দাবিগুলো উত্থাপন করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে এটি  ভবিষ্যতে ঠিক হয়ে যাবে।  দৈনিক বর্তমান।