রবিবার । জুলাই ১৩, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক আন্তর্জাতিক ৫ জুলাই ২০২৫, ৪:৩৭ অপরাহ্ন
শেয়ার

ট্রাম্পের ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ পাস, তৃতীয় রাজনৈতিক দল গঠনের ডাক দিলেন ইলন মাস্ক


যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক দেশটির দ্বিদলীয় রাজনীতি ভাঙতে ফের তৃতীয় রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরের অপেক্ষায় থাকা বাজেট বিল ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ পাস হওয়ার একদিন পরই মাস্ক এক টুইটে “আমেরিকা পার্টি” গঠনের প্রস্তাব দেন।

স্বাধীনতা দিবসে নিজের মালিকানাধীন প্ল্যাটফর্ম এক্স এ (পূর্বের টুইটার) মাস্ক লেখেন:

“দ্বিদলীয় (বা অনেকের মতে ‘ইউনিপার্টি’) ব্যবস্থার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা চাইলে, এটা ভাবার আদর্শ সময়! ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠন করব?”

খবর আল জাজিরা।

মাস্ক দাবি করেন, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট—এই দুই প্রধান দলই এখন “তাদের মধ্যপন্থী ৮০ শতাংশ জনগণের” মতাদর্শের সঙ্গে আর মেলে না। তিনি এই অংশের প্রতিনিধিত্ব করতেই তৃতীয় শক্তি গঠনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৮০ শতাংশ ‘মধ্যপন্থীর হিসাব অতিরঞ্জিত।

মাস্কের এই রাজনৈতিক পদক্ষেপ আসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত বাজেট বিলের বিরুদ্ধে তার তীব্র বিরোধিতার পরপরই। বৃহস্পতিবার কংগ্রেসে খুবই অল্প ভোটে বিলটি পাস হয়। বিলটিতে রয়েছে:

২০১৭ সালের বিতর্কিত কর ছাড় স্থায়ী করা,

ঋণসীমা ৫ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানো,

অভিবাসন বিরোধী পদক্ষেপে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ,

এবং ব্যয় হ্রাস করতে মেডিকেইড ও SNAP (খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি)-এর বাজেট কমানো।

এই বিল নিয়ে মাস্ক বলেন, “একটি বিল বড় হতে পারে বা সুন্দর হতে পারে, দুইই নয়।”

মাস্ক দাবি করেন, এই বিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ৩.৩ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়াবে এবং অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে। তিনি এক পর্যায়ে বলেন, “এই বিল একটি ‘ঘৃণিত কুশ্রীতা’।” এমনকি তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট চাওয়ার কথাও বলেন এবং ইঙ্গিত দেন যে, ট্রাম্পের সঙ্গে যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের সম্পর্ক রয়েছে—যদিও কোনো প্রমাণ দেননি। পরে সেই পোস্টগুলো মুছে দেন।

এদিকে এসবের প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মাস্ককে “CRAZY” বলে উল্লেখ করেন এবং দাবি করেন, বিলটি ইভি (ইলেকট্রিক ভেহিকল) খাতে সরকারী ভর্তুকি হ্রাস করবে বলেই মাস্ক ক্ষিপ্ত হয়েছেন।

‘আমেরিকা পার্টি’ কি বাস্তবতা পাবে?

মাস্ক বলেন, তিনি চান “৮০% মধ্যপন্থী মানুষের” জন্য একটি দল গড়ে তুলতে, যারা বর্তমান ব্যবস্থায় প্রতিনিধিত্ব পায় না। তিনি এক্স-এ একটি ভোট চালু করেন এবং বলেন,

“‘আমেরিকা পার্টি’ নামটা দারুণ শোনাচ্ছে। এটাই হবে সেই দল—যা আসল আমেরিকাকে প্রতিনিধিত্ব করবে।”

মাস্ক বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি মাত্র ২-৩টি সিনেট আসন ও ৮-১০টি হাউস আসন লক্ষ্য করবেন, যাতে তারা আইন পাসে নিয়ামক ভূমিকা রাখতে পারে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বাস্তবতায় তৃতীয় দল গঠন করা প্রায় অসম্ভব বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন। ইতিহাসে তৃতীয় দলগুলো খুব কমই ভোটে প্রভাব ফেলতে পেরেছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা মূল ধারার প্রার্থীদের ভোট বিভক্ত করেছে।

তবে মাস্কের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ আছে—ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ৩৬১ বিলিয়ন ডলার, যা তাকে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি হিসেবে রেখেছে।

এখন দেখার বিষয়, মাস্কের এই ‘আমেরিকা পার্টি’ বাস্তবে কতটা জনসমর্থন আদায় করতে পারে এবং ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে তার রাজনৈতিক পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়িত হয়।