বুধবার । ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫
এস এম সুমন খেলা ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২৭ অপরাহ্ন
শেয়ার

বিসিবি নির্বাচন: ক্রিকেট নাকি ক্ষমতার লড়াই!


BCB Election

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নির্বাচনকে ঘিরে চলমান নাটকীয়তা প্রতিদিন নতুন মোড় নিচ্ছে। যা আবারও প্রমাণ করছে ক্রিকেট রাজনীতির বাইরে নয়।

সম্প্রতি বিসিবি ২০২৫ সালের বোর্ড অব ডিরেক্টরস নির্বাচনের জন্য তিন সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে, যে নির্বাচন অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই কমিশন বোর্ডের সংবিধান ও নিয়মাবলির আলোকে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন ও চূড়ান্ত করার দায়িত্বে থাকবে।

বহুল প্রত্যাশিত বিসিবি নির্বাচনটি এক রাজনৈতিক যুদ্ধ হতে চলেছে সরকার সমর্থিত বর্তমান বোর্ড সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সঙ্গে বিএনপি সমর্থিত তামিম ইকবালের মধ্যে। যদিও এই সমর্থন প্রকাশ্য ঘোষিত নয় তারপরও ব্যাপারটা ক্রিকেটপাড়ায় অনেকটাই প্রকাশিত।

বিএনপি থেকে তামিমকে সভাপতি প্রার্থী করা অনেকটাই চূড়ান্ত। গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে তামিম ইকবাল প্রথমে পরিচালক হিসেবে নির্বাচনী প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছেন। পরিচালক নির্বাচিত হওয়ার পর, পরিচালনা পর্ষদের ভোটে সভাপতি পদ নির্বাচিত হতে হবে। সম্প্রতি বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ নেতা ও বিসিবি’র সাবেক সভাপতি আলী আসগর লবি তামিম ইকবালকে তাদের প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

অন্যদিকে, সরকার সমর্থিত প্রার্থী বিসিবির বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আইসিসি থেকে বিসিবিতে কাজ করতে আসা আমিনুল ইসলামকে স্বল্প মেয়াদের জন্য প্রাথমিকভাবে বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। শুরুতে তিনিও চেয়েছিলেন একটি নির্বাচন দিয়ে নতুন কমিটিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে বিসিবি থেকে বিদায় নেবেন। কিন্তু, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শেষ করতে না পারায় বিসিবি’র নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা বলছেন তিনি।

আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবারের বিসিবি নির্বাচন অনেক বেশি নাটকীয় হতে যাচ্ছে। গত এক দশকে যখন নাজমুল হাসান পাপন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই বিসিবি সভাপতি হয়েছিলেন, তখন তার পেছনে ছিল তৎকালীন সরকার তথা সরকার প্রধান শেখ হাসিনার দৃঢ় রাজনৈতিক সমর্থন।

এবারের নির্বাচন হবে ক্লাবগুলোর শক্তি বনাম প্রশাসনের লড়াই। ক্লাবগুলো, যাদের মধ্যে অনেকেই ব্যবসায়ী ও বিএনপি-সমর্থিত, একটি প্যানেল গঠন করেছে তামিমকে শক্তিশালী করতে। অন্যদিকে, বুলবুলের পক্ষে রয়েছে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সমর্থন।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় অ্যাডহক কমিটি গঠন করেছে। যেগুলোর ওপর সরকারের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। যদি এসব জেলা ও বিভাগীয় কাউন্সিলররা বোর্ডে পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ক্লাবগুলোর সঙ্গে মিলে যান, তাহলে নির্বাচনের চিত্র বদলে যেতে পারে।

বিসিবি নির্বাচনে অংশ নেয়া তামিমের এই সিদ্ধান্ত মোটেও অপ্রত্যাশিত নয়। বাংলাদেশে সরকার পরিচালনাকারী রাজনৈতিক দলগুলো সবসময়ই বিসিবির কর্মকাণ্ডে প্রভাব রেখেছে, এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় যদি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তবে আগামী সরকার গঠনের জন্য বিএনপি অনেকটা এগিয়ে থাকবে।

তবে, তামিম ও বুলবুল উভয়ের বোর্ড পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার শর্তে এই নির্বাচন একটি কঠিন লড়াই হতে যাচ্ছে।
২৫ জন পরিচালক বিসিবিতে নির্বাচন করবেন (১২ জন ক্লাব থেকে, ১০ জন বিভাগ ও জেলা থেকে, ২ জন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মনোনীত এবং ১ জন অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধি)।

ক্লাব কোটার কিছু আসন চেয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়েছে বলে গুঞ্জন আছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে সরকারের হস্তক্ষেপ নতুন কিছু নয়। নাজমুল হাসানকে বারবার অনির্বাচিতভাবে সভাপতি করা সেটার বড় প্রমাণ।

বিসিবি নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে হুমকি দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। বিসিবি ইতোমধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে এবং বুলবুলের নিরাপত্তার জন্য গানম্যান চেয়েছে।

এব্যাপারে তামিম ইকবার অবশ্য বুলবুলের অভিযোগের প্রকাশ্য ব্যাখ্যা দাবি করেছেন এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাকে পদত্যাগ করে সমতা নিশ্চিত করতে বলেছেন।

যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সম্প্রতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে ক্রিকেট পাড়ায়।

এছাড়া গত ৭ সেপ্টেম্বর আসিফ মাহমুদ দেশের প্রধান ক্রীড়া সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। বিস্ময়করভাবে ওই সভায় আমিনুল ইসলাম বুলবুলও উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকের পর বিসিবি’র নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে অনেকের মধ্যে। তাই এবারের বিসিবি নির্বাচনে ক্রিকেটের চেয়েও বেশি ক্ষমতার লড়াই দেখা যেতে পারে!

এস এম সুমন: সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক।