মিয়ানমার সরকারের মুসলিম নিধন কর্মসূচির আওতায় এবার যুক্ত হয়েছে নতুন নিপীড়ন কৌশল। মুসলিম অধ্যুষিত আরাকান রাজ্যে গত দুবছর ধরে ব্যাপক হত্যা, লুটপাট, আগুন দিয়ে বাড়িঘর পুড়িয়ে দেবার পর এখন শুরু হয়েছে সরকারী বাহিনীর অপহরণ ও গুপ্ত হত্যা।
চলতি মাসের প্রথম দু’সপ্তাহে মুসলিম অধ্যুষিত মংডু জেলার উত্তর ও দক্ষিণ এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড ও পুলিশ অন্তত: ৩৫ জন রোহিঙ্গা মুসলমান নাগরিককে ধরে নিয়ে যায়। এদের মধ্যে ১৫ জনকে মংডু জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তাছাড়া পুলিশ হেফাজতে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে যাদের লাশ পরে নদী, জঙ্গল বা রাস্তার ধারে পাওয়া গেছে।
সীমান্তের ওপার থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, গত ১৪ অক্টোবর মংডু দক্ষিণে শিতাপুরিক্ষা গ্রাম থেকে চার জন মৌলভীকে গ্রেপ্তার করে চোখ বন্ধ করে নিয়ে যায় সরকারী বাহিনীর সদস্যরা। আজ পর্যন্ত তাদের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় মুসলমান নাগরিকরা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভয় দেখিয়ে বাঙ্গালি হিসেবে পরিচয় দিতে বাধ্য করার জন্য এসব গ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ড চালানো হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচার নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মংডুর বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আমিনুল্লাহ। তিনি জানান তাদের লোকদের ধরে নিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে, নারীদের উপর নির্যাতন চলছে, মসজিদ-মাদ্রাসা বন্ধ। বজার ঘাটে যেতে পাছে না তারা। মিয়ানমার সরকারের নির্যাতন থেকে তদের বাঁচাবার জন্য জন্য আমিনুল্লাহ বিশ্ববাসীর প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ সহ বিশ্ব সমাজের প্রতি অনুরূপ আবেদন জানিয়েছেন রোহিঙ্গা এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের সাধারণ সম্পাদক জনাব জমীর উদ্দীন।
উল্লেখ্য, মিয়ানমার সরকার ১৯৮২ সালে তাদের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে সেদেশে বংশানুক্রমে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়। এর পর থেকে বাঙ্গালি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে।
এভাবে সরকারি মদদে পরিচালিত জাতিগত সহিংসতার শিকার হয়ে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু নিহত হয়। মুসলমানদের গ্রামগুলিতে হত্যা, লুট-পাট, আগুন দিয়ে ঘরবাড়ী পুড়িয়ে দেয়ার কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলমান জীবন বাঁচাতে অন্য দেশে পালিয়ে যায়। অনেকে পালাতে গিয়ে সাগরে ডুবে মারা যায় ।
আজ জাতিসংঘের কাছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের পরিচয়- “বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী” হিসেবে। রেডিও তেহরান।