Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

নিঃসঙ্গতা

SONY DSCহঠাৎ কোনো কারণে ভেঙে যেতে পারে দাম্পত্য সম্পর্ক। কিংবা প্রয়োজনের তাগিদেও কোনো মেয়েকে একা থাকতে হতে পারে। এমন অবস্থায় অনেকেই ভুগতে পারেন নিঃসঙ্গতায়। নিঃসঙ্গতা যে- কারো জন্যই ক্ষতিকর। তাই সবারই এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরি। এসব নিয়ে লেখাটি তৈরি করেছেন বদরুন নেসা নিপা।

মা-বাবার অমতে শফিককে বিয়ে করেছিলেন সোহানা। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সূত্রে তাদের পরিচয়। শিক্ষাসফরে গিয়ে তাদের প্রেমের সূচনা। সোহানার রক্ষণশীল পরিবার তা কখনোই মেনে নিতে চায়নি। একসময় মা-বাবাকে না জানিয়েই পালিয়ে বিয়ে করেন সোহানা। শফিক একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন আর সোহানা একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন। বিয়ের প্রথম দিনগুলো ভালোই কাটছিল। একসময় চাকরির সুবাদে আমেরিকায় যাওয়ার সুযোগ হয় শফিকের। সব শেষে অশ্রুসিক্ত বিদায় হয় ওদের। প্রথম দিকে প্রায় প্রতিদিনই কথা হতো দু’জনের। একসময় তা মাসে নেমে আসে। কিন্তু মাসের ব্যবধান যখন তিন মাসে গড়ায়, তখনই সন্দেহ দানা বাঁধে। গত বছর সোহানার এক আমেরিকা প্রবাসী আত্মীয় খবর পাঠিয়েছেন, শফিক বিদেশে গিয়ে এক ভারতীয় মেয়েকে বিয়ে করে সংসার পেতেছেন। আগের প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে ব্যবসা করেন। আকাশ ভেঙে পড়ে সোহানার মাথায়। মা-বাবার সাথে সম্পর্ক নেই বিয়ের পর থেকেই। এখন কার কাছে যাবেন। কিছুতেই বিশ্বাস হয় না এসব কথা। আশায় আশায় দিন কাটে। একদিন না একদিন ঠিকই ফিরে আসবে শফিক।

chardike-ad

ফারিয়া আর তিতাস একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। ক্লাসে গ্রুপ স্টাডির সুবাদে দু’জনই বেশ অন্তরঙ্গ হয়ে যান। একসময় তা প্রেমে রূপ নেয়। দু’জনের অবাধ ঘোরাফেরা একসময় খুব স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। স্বাভাবিকভাবেই কাসের সবাই ওদের সম্পর্কটা জেনে যায়। দু’জন দু’জনকে নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। এ বছরের শুরুর দিকে হঠাৎই তিতাস ক্রেডিট ট্রান্সফার করে অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। কিন্তু তিতাসের চলে যাওয়ার পর ফারিয়া আর কিছুতেই তার বন্ধুদের ফিরে পান না। সবাই কেমন জানি এড়িয়ে চলেন তাকে। শত চেষ্টা করেও পড়াশোনায় স্বাভাবিক হতে পারেন না ফারিয়া। ভীষণ একাকী লাগে নিজেকে।

এই দু’টি ঘটনা আমাদের সমাজ থেকেই নেয়া। একটা সময় ছিল, যখন মানুষের আত্মিক সম্পর্কগুলো ছিল অনেকটা শক্ত, পারস্পরিক আস্থাবোধে পরিপূর্ণ। বলা বাহুল্য, আধুনিক সভ্যতা আজ অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের বিশ্বাসে ফাটল ধরিয়েছে। সম্পর্কগুলো হয়ে যাচ্ছে ফিকে। ফলে নিঃসঙ্গ মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। মনোবিজ্ঞানী সেলিনা খান বলেন, আমি এমন অনেক রোগী পেয়েছি, যারা এমনকি প্রিয় মানুষের বিরহে আত্মহত্যার কথা ভাবে এবং তাদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যাই বেশি। এমনিতেই আমাদের সমাজের মেয়েরা ইউরোপের মেয়েদের তুলনায় সামাজিকভাবে অনেকটা পিছিয়ে। এরা পুরুষের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল।

এই উপমহাদেশের মেয়েরা জীবনসঙ্গী হিসেবে একজনকেই চিন্তা করতে বেশি ভালোবাসেন। এমনকি ভালোবাসার মানুষটিকে সব সময় আগলে রাখার একটা অপ্রকাশিত মানসিকতা কাজ করে তাদের মনে। ঠিক একই কারণে আমাদের দেশের পুরুষেরা যেহেতু সামাজিকভাবে বেশি মেলামেশায় অভ্যস্ত, তাই অতি সহজেই ভুলে যেতে পারেন প্রিয় মানুষটিকে। খুঁজে নিতে পারেন নিঃসঙ্গতা কাটানোর অন্য কোনো সহজ উপায়। আমাদের সমাজের মেয়েরা প্রধানত দুই ধরনের নিঃসঙ্গতায় ভোগেন। সামাজিক নিঃসঙ্গতা, অপরটি আবেগী নিঃসঙ্গতা। সামাজিক নিঃসঙ্গতা, যা তাদের সামাজিক চলাফেরার অভাবে হয় আর আবেগী নিঃসঙ্গতা, যা সাধারণত ঘনিষ্ঠ আবেগঘন সম্পর্কের অভাবে হয়। কখনো তা প্রিয়জনের দীর্ঘ বিরহেও হতে পারে। নিঃসঙ্গতা খুবই ক্ষতিকর একটি বিষয়। কারো পথ চেয়ে দিন গোনা জীবনের সুন্দর মুহূর্তগুলোর অপচয় ছাড়া কিছু নয়। নিঃসঙ্গতায় ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় মানুষের শক্তি-সামর্থ্য, কাজে মন বসে না, ভালো লাগে না মানুষের সংস্পর্শ। মানসিক অবসাদের সুযোগে শরীরে ভর করে দুরারোগ্য রোগব্যাধি। কখনো কখনো মানুষ নেয় আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত। সুতরাং এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সবার জন্যই জরুরি। নিঃসঙ্গতা প্রকট হলে দেরি না করে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে সমাজ বিজ্ঞানী নাসরীন জাহান বলেন, ‘আমাদের সমাজে অনেক তরুণ-তরুণীই আজকাল একা বসবাস করছেন। কাজ বা লেখাপড়ার কারণে অনেককেই পরিবার বা প্রিয়জন থেকে দূরে থাকতে হয়। প্রকৃতপক্ষে জীবনের চাপ মানুষকে ভালো সম্পর্ক তৈরিতে যথেষ্ট সময় দেয় না। আমাদের সমাজের মেয়েদের অন্যতম একটি অভ্যাস হচ্ছে, ভালোবাসার মানুষকে পেলে তারা জগতের অন্য সবাইকে ভুলে যান। একসময়ের বন্ধুবান্ধবকেও সময় দেন না। এতে করে পরবর্তী নিঃসঙ্গ সময়ে পুরনো বন্ধুরা স্বাভাবিকভাবে তাকে মেনে নিতে চান না। পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগের বিষয়টিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত পরিবারের সদস্যরা কখনো ছেলেমেয়ের অমঙ্গল চান না। এ কারণেই পরিবারের অমতে বিয়ে করার অর্থ হচ্ছে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। দাম্পত্য জীবন সব সময় সমান যায় না। তখন যেকোনো কষ্টে আর পরিবারকে পাশে পাওয়া যায় না।’ আজকাল আমাদের দেশে মহিলাদের বিভিন্ন সমস্যায় পরামর্শ দিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও সাহায্য নেয়া যায়। এ ছাড়া টিভি চ্যানেল ও সংবাদপত্র, ম্যাগাজিনে এসব সমস্যার সমাধানে পরামর্শ দেয়া হয়। এসবের মাধ্যমে ইচ্ছে করলেই সহজে সাহায্য নিতে পারেন। সমস্যা প্রকট হলে দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াই ভালো। নয়াদিগন্ত।