Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

কোরিয়ার প্রচলিত দশ কুসংস্কার

পৃথিবীর প্রায় প্রতিটা দেশেই কোন না কোন কুসংস্কার প্রচলিত আছে। পশ্চিমারা যেমন কালো বেড়াল, খোলা ছাতা কিংবা হাত থেকে লবণ পড়ে যাওয়াকে বিপদের আভাস বলে মনে করে তেমনি কোরিয়াতেও নতুন বছরের প্রথম দিনে জুতো লুকিয়ে রাখা, লাল কালিতে নাম না লেখা কিংবা নাম্বার ‘ফোর’ আনলাকি মনে করার মতো অনেক কুসংস্কারের প্রচলিত রয়েছে। কোরিয়ায় প্রচলিত এসব কুসংস্কার এখনো অনেক কোরিয়ান মেনে চলে। কোরিয়ার প্রচলিত দশটি কুসংস্কার নিয়ে লিখেছেন মো. মহিবুল্লাহ।

chardike-ad

আনলাকি ফোর!

আনলাকি থার্টিনের কথা হয়তো অনেক শুনে থাকবেন। কোরিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে থাকলে ‘আনলাকি ফোর’ শব্দযুগলও অপরিচিত ঠেকার কথা নয়। এখানে দুর্ভাগ্যের প্রতীক তেরো নয়, চার। খুব সম্ভবত চীন থেকে এমন ধারণার উৎপত্তি। সংখ্যাটাকে কোরিয়ায় এতোটাই ‘দুর্ভাগা’ বিবেচনা করা হয় যে এখানকার অনেক ভবনে ‘ফোর্থ ফ্লোর’ বলে কিছু নেই! বরং চতুর্থ তলাটিকে আলাদা একটি নামে ডাকা হয়, ‘লেভেল এফ’। সংস্কারটির সবচেয়ে বেশী চল রয়েছে হাসপাতালগুলোতে। বলা হয়ে থাকে কোরিয়ান হাসপাতালগুলোয় বেশীরভাগ মৃত্যুই নাকি চার তলায় ঘটে!

বাসা বদলান বৃষ্টির দিনে!
মনে করুন বাসা বদলানোর জন্য মালসামান বাক্সপেটারায় বেঁধে সবেমাত্র ট্রাকে তুলেছেন আর অমনি ঝমঝমিয়ে নামলো বৃষ্টি! কি মেজাজটাই বিগড়ে গেল? তবে শুনুন কোরিয়ান বচন বলছে সে বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটায় রয়েছে আপনার জন্যে সৌভাগ্য, আশীর্বাদ আর সম্পদের অপার সম্ভাবনা! রাতারাতি কোটিপতিও বনে যেতে পারেন! কোরিয়ায় বাসা বদলানোর আগে তাই আবহাওয়ার পূর্বাভাসটা দেখে নিন! দেখেদশুনে পুরোদুস্তুর কোন বাদলা দিনেই।

‘অপয়া’ লাল কালি
কোরিয়াতে অলক্ষুণে হচ্ছে লাল কালি। এখানে কারও মৃত্যুর পর পারবারিক রেজিস্ট্রি বইয়ে ও শেষকৃত্যের ব্যানারে মৃতের নাম লিখা হয় লাল কালিতে। কোরিয়ানরা বিশ্বাস করে এই লাল কালি সকল প্রকার অশুভ শক্তির হাত থেকে মৃতদেহকে রক্ষা করে। কিন্তু কোন জীবিত ব্যক্তির নাম লাল কালিতে লিখলে নাকি ঠিক উল্টোটা ঘটে! অদূর ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য খুব খারাপ কিছু অপেক্ষা করে। এমনকি তাঁর মৃত্যুও হতে পারে! সুতরাং কোরিয়াতে যদি কোন চুক্তি স্বাক্ষর করতে যান, চিঠি লিখেন অথবা পরীক্ষার নম্বরপত্র তৈরি করতে বসেন, লাল কালিটা অবশ্যই দূরে সরিয়ে রাখুন!

লুকিয়ে রাখুন জুতো!
কোরিয়ায় অদ্ভুতুড়ে সংস্কারগুলোর অন্যতম একটি হচ্ছে নতুন বছরের প্রথম রাতে নিজেদের জুতো লুকিয়ে রাখা! কোরিয়ানরা বিশ্বাস করে ওই রাতে নাকি এক ভূত নেমে আসে পছন্দের জুতোর খোঁজে! যদি কারও জুতোজোড়া ভূত ভদ্রলোকের পছন্দ হয়ে যায় তবে নাকি তিনি সেগুলো সঙ্গে করে নিয়েও যান! তা বিনিময়ে তো জুতোর মালিককে একটা ভালো বছরের আশীর্বাদ অন্তত করে যাবে? অথচ কাণ্ড শুনুন, জুতো হারানো ব্যক্তিটির নাকি বছরটা মোটেও ভালো যায় না! এরপর থেকে নববর্ষের রাতে জুতোটুতো সামলে রাখবেন কিন্তু!

nail-cutting

নখ কেটো না রাতের আধারে!

রাতে নখ কাটার ‘কুফল’ সম্পর্কে বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে হয়তো অনেকেই শুনে থাকবেন। কুসংস্কারটা কিন্তু কোরিয়া মুলুকেও প্রচলিত আছে! প্রাচীন কিছু কোরিয়ান প্রবচন বলে রাতে নখ কাটলে নাকি কাটা নখগুলো ইঁদুরে খেয়ে ফেলে! ব্যাপারটা এ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকলে দুশ্চিন্তার কিছু ছিল না। অথচ কোরীয়রা বলে হতচ্ছাড়া ইঁদুর নাকি মানুষে রূপান্তরিত হয়ে আপনার রূপ ধরে বসতে পারে! তাতেই কি ক্ষান্তি দেবে সে? আপনার আত্মাটাও নাকি চুরি করে…আর ভয় দেখিয়ে কাজ নেই! নখ বড় হয়ে গেলে দিনের আলোতেই সময় করে কেটে নেবেন!

চুল ধুতে মানা!
কোরিয়ানদের বিশ্বাস অনুসারে নতুন বছরের প্রথম দিন চুল ধুলে নাকি ধোয়া পানির সাথে সে বছর আপনার ভাগ্যে ভালো যা কিছু ছিল সব চলে যাবে! সংস্কার যদি মানতেই চান তবে জেনে রাখুন চুলে পানি লাগানো যাবে না কোন পরীক্ষার আগেও…যা কিছু জ্ঞান মগজে ঢুকিয়েছেন সব কিন্তু ধুয়েমুছে মাথা ‘পরিষ্কার’ হয়ে যাবে!

ঘড়ি কোন ‘উপহার’ নয়!
বন্ধুর জন্মদিনে কি উপহার দেবেন তাই ভেবে জেরবার হচ্ছেন? না আপনাকে কোন বিশেষ রাস্তা বাতলে দিচ্ছি না…বলছি কেবল ‘ঘড়ি’টাকে সম্ভাব্য বিকল্পের বাইরে রাখুন। চীনা সংস্কার বলে উপহার হিসেবে ঘড়ি দিলে নাকি সে ঘড়ির কাঁটা ঘুরে ঘুরে উপহার পাওয়া ব্যক্তিটির মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আনে!

স্বপ্নে মরে গেছেন? বেশ করেছেন!
স্বপ্নে নিজের মৃত্যু দেখে ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছেন? কখন কি দুর্ঘটনা উড়ে এসে সাধের জীবনটা না কেড়ে নিয়ে যায়? আপনার জন্যে সান্ত্বনা হতে পারে কোরিয়ান এক সংস্কার! ঘুমে নিজেকে মরতে দেখার মানে নাকি অদূর ভবিষ্যতে কপাল খুলে যাওয়ার ইংগিত! তবে আর ঘুম থেকে উঠতে ভয় পাচ্ছেন কেন? খুশী মনে জেগে উঠুন আর দারুণ কিছুর জন্য অপেক্ষা করুণ!

সাবানেই সৌভাগ্য!
কোরিয়ান বন্ধু নতুন বাসায় উঠে ঘরোয়া আয়োজনে দাওয়াত করেছে, কিছু তো নিয়ে যেতে হয়! বলছি কি অতো সাতপাঁচ না ভেবে কাপড় ধোয়ার ক’টা সাবান নিয়ে নিশ্চিন্তে চলে যান! না না মোটেও মশকরা হচ্ছে না! দেখবেন অন্যদের দামী দামী সব উপঢৌকনের চেয়ে বাড়ির কর্তা-কর্ত্রী আপনার দেয়া সাবানই বেশী পছন্দ করেছে! কোরিয়ানদের যে বিশ্বাস, সাবান ফেনার বুদবুদে সৌভাগ্য নাকি উপচে পড়ে নতুন বাড়িতে!

লাকি নাম্বার!
ব্যক্তিগতভাবে সবারই কিছু ‘পয়া সংখ্যা’ থাকে। কোরিয়ায় যখন আছেন তখন আপনার প্রিয় সংখ্যাগুলোর তালিকায় ৩, ৭ আর ৮ যোগ করে নিন। সুফলটা বলতে পারছি না তবে শোনা যায় কোরিয়ান অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের বিয়ের দিন তারিখে ৮ সংখ্যাটা রাখার চেষ্টা করেন। কিংবা প্রেম করবেন? একটু দেখেশুনে বয়সে ৩ কিংবা ৭ বছরের ব্যবধান আছে এমন কাউকে খুঁজে বের করুন! কোরিয়ানরা বলে এ দুই ব্যবধানের যুগলরা নাকি যাকে বলে একেবারে ‘সোনায় সোহাগা’!