সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের হিড়িক পড়েছে। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে দু’টি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। এগুলোর সুরাহা করার আগেই আরো একটি নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রথম বিজ্ঞপ্তিটির আবেদনকারীদের দরখাস্ত গত পরশু পর্যন্ত বাছাই শেষ হয়নি। এদের নিয়োগে লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষার তারিখও ঘোষণা করা হয়নি। এরই মধ্যে ‘সহকারী শিক্ষক’ পদে আরেকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষক অধিদফতর (ডিপিই)। তাতে ১৬ হাজার নতুন ‘সহকারী শিক্ষক’ নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ওই দু’টি বিজ্ঞপ্তির বাইরে আরো ১৫ হাজার ‘সহকারী শিক্ষক’ নিয়োগের জন্য কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রধান শিক্ষকসহ আরো প্রায় ৫০ হাজারের মতো সহকারী শিক্ষক চলতি বছর নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
গত পাঁচ বছরে এখানে নতুন নিয়োগ দেয়া হয়েছে প্রায় এক লাখ শিক্ষক। এদের সবাই ‘সহকারী শিক্ষক’। গত বছর (২০১৩ সালের শুরুতে) ২৬ হাজার ১৯৩টি রেজিস্টার্ড প্রাইমারি,কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এনজিও পরিচালিত আনন্দ স্কুলকে জাতীয়করণের আওতায় আনা হয়েছে। এসব স্কুলে কর্মরত এক লাখ তিন হাজার ৮৪৫ জন শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়েছে। এর বাইরে ইউএনডিপির পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্পের আওতায় তিন পার্বত্য জেলায় প্রতিষ্ঠিত ২২৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের আওতায় আনতে চাপ দিয়ে যাচ্ছে দাতা সংস্থাটি। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এখানে কর্মরত সহস্রাধিক শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা আগামী জানুয়ারি থেকে সরকারকেই বহন করতে হবে। যদিও এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত এবং অনুমোদন কোনোটিই এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
গত ১৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপিত কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়, বিগত পাঁচ বছরে প্রায় এক লাখ শিক্ষক নিয়োগ করা হয় এবং আগামী কয়েক বছরে আরো লক্ষাধিক শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
ডিপিই সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে ডিপিই ১৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তাতে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সহকারী শিক্ষক পদের দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তির পর যে দরখাস্ত জমা পড়েছে তা এখন পর্যন্ত বাছাইয়ের কাজও শেষ হয়নি। আবেদনকারীদের লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। কবে হবে তারও কোনো ঘোষণা বা সম্ভাব্য তারিখ জানানো হয়নি। এ নিয়ে আবেদনকারীরাও রয়েছেন প্রতীক্ষায়।
ঐ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের দু’মাস যেতে না যেতেই গত ১০ ডিসেম্বর আরেকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে ডিপিইর তরফ থেকে। তাতে আরো ১৬ হাজার ‘সহকারী শিক’ নিয়োগদানের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছে। এ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগ্রহী প্রার্থীরা ১৩ ডিসেম্বর থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে (http://dpe.teletalk.com.bd এবং www.dpe.gov.bd) আবেদন করতে পারবেন। আবেদন ফি জমা দিতে হবে টেলিটক মোবাইল থেকে এসএমএসের মাধ্যমে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তৃতীয় প্রাথমিক শিা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীর জন্য অস্থায়ীভাবে এই শিক নিয়োগ দেয়া হবে। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান বাদে বাংলাদেশের ৬১ জেলার ৩৭ হাজার ৬৭২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসব শিকের নিয়োগ হবে। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীর জন্য এর আগেও সরকার দুই দফা শিক নিয়োগ দিয়েছে। সবশেষ গত ৬ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় প্রাক-প্রাথমিক শিার জন্য সহকারী শিক পদে ছয় হাজার ৯৩৩ জনকে নিয়োগ দিয়ে তাদের যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়। ২০১১ শিাবর্ষ থেকেই দেশের সব সরকারি বিদ্যালয়ে ‘শিশু শ্রেণী’ নামে প্রাক-প্রাথমিক শিা চালু বাধ্যতামূলক করা হয়। এখানে এসব শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (বিদ্যালয়) সন্তোষকুমার অধিকারী বলেন, দাতাদের অর্থায়নে পরিচালিত পিইডিপি-৩ অধীনে সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে এ জন্যই আগেরটির কার্যক্রম শেষ করার আগেই নতুন বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়েছে। অন্যথায় দাতাদের প্রশ্নের মুখে পড়ার আশঙ্কা ছিল।
এ দিকে মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ অন্যান্য কারণে শিক্ষকদের ছুটির সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় তার জন্য ১৫ হাজারের মতো ‘পুলভুক্ত’ সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগের জন্য লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে তার ফলও প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু ‘পুলভুক্ত শিক্ষক’দের ব্যাপারে অর্থ ও জনপ্রশাসনের আপত্তির কারণে তাদের নিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তারা আদৌ নিয়োগ পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় খোদ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘পুল শিক্ষক’দের নিয়োগপ্রক্রিয়া ও মেধা যাচাইয়ের জন্য লিখিত পরীক্ষাটি হয়েছিল অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে। এখানে যাদের বাছাই করা হয়েছিল তা এ যাবত নিয়োগকৃতদের মধ্যে অত্যন্ত স্বচ্ছ ও নিখুঁত ছিল। কিন্তু তাদের নিয়োগ নিয়েই এখন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং গত বছর জাতীয়করণকৃত রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৬০ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন লাখ ৫৪ হাজার শিক্ষক রয়েছেন। এ ছাড়া গত পাঁচ বছরে নিয়োগ দেয়া হয়েছে আরো প্রায় এক লাখ সহকারী শিক্ষক। ফলে আগামী কিছু দিনের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।