Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অবরোধে ব্যবসা-বাণিজ্য বিপর্যস্ত

চলতি বছরের শুরুতেই হরতাল আর অবরোধের কবলে দেশ। গত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের সহিংস রাজনীতিতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে চরম বিপর্যয় নেমে আসে। পরবর্তী বছর ২০১৪ সালে এ বিপর্যয় অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল।

কিন্তু, নতুন বছর ২০১৫ সালে আবারো সেই পুরানো চেহারায় দেশের রাজনীতি। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেমেছে ধস। ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে সরকার ও বিরোধী দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে কার্যত অচল হয়ে পড়েtakaছে সারাদেশ।

chardike-ad

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অবরোধের প্রভাবে এরই মধ্যে ভোগ্যপণ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। সারদেশে ঠিকমতো পণ্য পৌঁছায়নি। অনেক স্থানের উদ্যোক্তারা ট্রাকের অভাবে ঢাকায় পণ্য ও কাঁচামাল পাঠাতে পারেননি।

এ বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হেলাল উদ্দিন শীর্ষ নিউজকে বলেন, এদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা নতুন কিছু নয়। তবে এ ধরনের লাগাতার কর্মসূচি ব্যাবসায়ীদের জন্য হুমকিস্বরূপ।

তিনি আরো বলেন, দেশ যখন উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে এ ধরনের কর্মসূচি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে।

গত বছর ব্যবসায়ীদের সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স (ডিসিসিআই) হরতালের ক্ষতি সম্পর্কে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বছরে ৪০ দিন হরতাল হলে ৬৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। প্রতিদিন গড়ে ক্ষতি হয় ১৬০০ কোটি টাকা।

ডিসিসিআই’র পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তৈরি পোশাক খাতে একদিনের হরতালে ৩৬০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। রাজস্ব ক্ষতি হয় ২৫০ কোটি টাকা। ক্ষুদ্র ব্যবসা ও পাইকারি বাজার, শপিং মল, শো-রুমের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০০ কোটি টাকা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা।

এছাড়া পরিসংখ্যানে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ক্ষতির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১৫ কোটি টাকা। পর্যটন শিল্পের ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা। স্টিল মিলস, সিরামিক, সিমেন্ট, রড, এডিবল অয়েল, কাগজসহ সব উৎপাদনকারী কারখানার একদিনের হরতালে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১০০ কোটি টাকা। অপরদিকে একদিনের হরতালে শিক্ষা খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা। তবে পাঠদান হতে বিরত শিক্ষার্থীদের ক্ষতির পরিমাণ কোন সংখ্যা দিয়েই হিসাবযোগ্য না।

পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, একদিনের হরতালে তাদের ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ১১০ কোটি টাকা। হরতালের কারণে ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে তাদের ক্ষতি হয়েছে ৮০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। শুধু ১৯৯৯ সালেই ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রতি বছরে ক্ষতি হয়েছে ৮ হাজার ৩৮ কোটি টাকা।

সংগঠনের সহ-সভাপতি মো. শহিদুল্লাহ আজীম শীর্ষ নিউজকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের রফতানি খাতে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতায় আমরা বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হই। তা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারো রাজনৈতিক অঙ্গন গরম হয়ে উঠেছে। এতে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কারণ, একদিনের হরতালেই আমাদের আড়াই’শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এছাড়া হরতাল বা সহিংসতায় বায়াররা অর্ডার ফেরত নিয়ে চলে যায়। ফলে রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৮০ দিনে দেশে মোট ৫৫টি হরতাল-অবরোধ হয়েছে। এই সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষতি হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। সিপিডি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে একদিনের হরতালে ক্ষতি হয় ৮৯১ কোটি টাকা।

শীর্ষ নিউজের এই প্রতিবেদকের কথা হয় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধের মত সহিংস কর্মসূচি দেশের অর্থনীতিতে স্বল্পমেয়াদী ও মধ্যমেয়াদী দুই ধরনেরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যাহত হবে। দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

তিনি আরো বলেন, দেশের এই অস্থিতিশীল রাজনীতির কারণে বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস পাবে। এছাড়া সামগ্রিক বিনিয়োগও বাধাপ্রাপ্ত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির স্বার্থে এ সময় তিনি সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলার আহবান জানান। শীর্ষনিউজ।