Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

আগামী মাসে বাড়ছে গ্যাসের দাম

gasগ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব আমলে নিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলটরি কমিশন (বিইআরসি)। প্রস্তাব নিয়ে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে গণশুনানি। শুনানি শেষে গ্যাসের নতুন দাম ঘোষণা করবে কমিশন, আগামী মাস (ফেব্রুয়ারি) থেকে যা কার্যকর হতে পারে। আবাসিক খাতে গ্যাসের দাম সর্বোচ্চ ১২২ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।

বিইআরসি সূত্র জানায়, বিতরণ কোম্পানিগুলো পৃথক প্রস্তাব জমা দিলেও একই হারে মূল্যবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবনায়। আবাসিক খাতে দুই চুলার ক্ষেত্রে দাম ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এক চুলার ক্ষেত্রে প্রস্তাব করা হয়েছে ৮৫০ টাকা। এক চুলার বর্তমান দাম ৪০০ টাকা। আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে যারা মিটার ব্যবহার করেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট (১ হাজার ঘনফুট) গ্যাসের দাম ১৪৬ টাকা ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩৫ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এর পর সবচেয়ে বেশি বাড়ছে ক্যাপটিভ পাওয়ারে ব্যবহূত গ্যাসের দাম। প্রতি ইউনিট ১১৮ টাকা ২৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৪০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে।

chardike-ad

সঞ্চালন চার্জ বাড়াতে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) দেয়া প্রস্তাবের ওপর শুনানি হবে ২ ফেব্রুয়ারি। প্রস্তাবে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে প্রতি ঘনমিটার ৩২ পয়সা হারে সঞ্চালন চার্জ নিচ্ছে জিটিসিএল। ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ চার্জ প্রতি ঘনমিটারে যথাক্রমে ৪৭ পয়সা, ৭৩ পয়সা ও ৭৫ পয়সা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ সঞ্চালন চার্জই জিটিসিএলের আয়ের একমাত্র উত্স।

সবচেয়ে বড় বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রস্তাব নিয়ে শুনানি হবে ৩ ফেব্রুয়ারি। একই দিন বিকালে থাকছে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের প্রস্তাবের ওপর শুনানি। ৪ ফেব্রুয়ারি শুনানি হবে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির। আর জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম ও সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির শুনানি হবে ৫ ফেব্রুয়ারি। গণশুনানিতে অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার প্রতিনিধিদের ২১ জানুয়ারির মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছে।

বিইআরসি সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, কমিশনের নির্দেশনা মেনে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো কমিশনের কাছে পৃথক প্রস্তাব জমা দিয়েছে। গণশুনানির মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা যাচাই-বাছাই করা হবে। এর পরই কমিশন মূল্য নির্ধারণ বিষয়ে ঘোষণা দেবে।

বর্তমানে বিদ্যুেকন্দ্রের জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৭৯ টাকা ৮২ পয়সা। নতুন প্রস্তাবনায় ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৮৪ টাকা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সার কারখানায় ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ বাড়িয়ে ৮০ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১০২ দশমিক ৯৪ শতাংশ বাড়িয়ে ২৪০ টাকা ও শিল্পে ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়িয়ে ২২০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া সিএনজি স্টেশনে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কোম্পানিগুলো। এতে গ্রাহক পর্যায়ে ৩০ টাকার পরিবর্তে প্রতি ঘনমিটারের দাম পড়বে ৪০ টাকা।

পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাব অনুযায়ী বাড়ানো হলেও গ্যাসের মূল্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চেয়ে অনেক কম থাকবে। তাছাড়া আগামীতে প্রতি ইউনিট গ্যাস ১৬ ডলারে আমদানি করা হবে। এ দামে আমদানি করে কোনোভাবেই তা সামান্য মূল্যে বিক্রি করা যায় না। ধীরে ধীরে গ্যাসের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মধ্যে শিল্পে ব্যবহূত গ্যাসের দামে বাংলাদেশ সর্বনিম্নে। গত বছর এক দফা মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব উঠলেও শেষ পর্যন্ত তা স্থগিত করা হয়। অথচ প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ গ্যাস অপচয় হচ্ছে শিল্প খাতে। তাই দাম পুনর্মূল্যায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি থেকে প্রতি ইউনিট গ্যাস গড়ে ৩ ডলারে কেনে সরকার। অথচ শিল্পে গ্যাস সরবরাহ করা হয় প্রতি ইউনিট ২ দশমিক ১৩ ডলারে। অন্যান্য খাতেও নিম্নমূল্যে গ্যাস সরবরাহ করা হয়।

সর্বশেষ ২০০৯ সালের আগস্টে বিইআরসি সব ধরনের গ্যাসের মূল্য ১১ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়ায়। এছাড়া ২০১১ সালে দুই দফা সিএনজির দাম বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার ৩০ টাকা করা হয়। এর পর ২০১২ সালের মে মাসে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে পেট্রোবাংলার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় কমিশন।

প্রসঙ্গত, সারা দেশে আবাসিক গ্রাহক গ্যাস ব্যবহার করেন মোট উৎপাদনের মাত্র ১১ শতাংশ। শিল্পে ব্যবহার হয় ৩৩ শতাংশ (ক্যাপটিভ বিদ্যুত্সহ), বিদ্যুতে ৪২ শতাংশ, সিএনজিতে শতাংশ ৬ ও সার কারখানায় ৭ শতাংশ। বাকি গ্যাস ব্যবহার হয় চা বাগান ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে। বণিকবার্তা।