Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু

ovijanশুরু হয়েছে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান। গতকাল দিবাগত মধ্যরাত থেকে দেশের ১৯টি জেলায় একযোগে এ অভিযান শুরু হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ অন্য জেলাগুলোতে যৌথবাহিনী নামবে আজ। ইতিপূর্বে শুধু দুটি জেলাতে যৌথ বাহিনীর এই বিশেষ অভিযান শুরু হয়। অভিযানে অংশ নিচ্ছে র‌্যাব, পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সদস্যরা। অভিযানের প্রধান টার্গেট চলমান রাজনৈতিক নাশকতায় জড়িত এবং এর মদদদাতারা। অভিযানের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরবরাহ করা তালিকা ধরে যৌথ বাহিনী গ্রেফতার চালাবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে আনতে যৌথ বাহিনীর এই বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। পুরো অভিযানের তদারকি করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে গতকাল পুলিশ সদর দফতরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়। রাতে শেষ বৈঠকে অভিযানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পুলিশ সুপারদের কাছে বিশেষ নোট পাঠানো হয়।

chardike-ad

সরকারি সূত্রগুলো বলছে, অবরোধের নামে রাজনৈতিক সহিংসতা আর বরদাশত করা হবে না। সহিংসতা বন্ধে প্রয়োজনে যত কঠোর হতে হয়, ঠিক ততই কঠোর হবে সরকার। সরকারের এই মেসেজ ইতিমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পৌঁছানো হয়েছে। পুলিশের পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, অন্যান্য অভিযান থেকে ভিন্ন ও কঠোর এই অভিযানে গ্রেফতারের তালিকায় বিএনপি-জামায়াতের মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা রয়েছেন। তালিকায় আরও রয়েছে পেশাদার অপরাধীদের নাম।

অভিযান শুরু হওয়া ১৯ জেলার মধ্যে একটি জেলার পুলিশ সুপার গত রাতে জানান, সব প্রস্তুতি শেষ করে মধ্যরাত থেকে অভিযান শুরু হয়েছে। এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে সাতক্ষীরাসহ সন্ত্রাসকবলিত বেশ কয়েকটি জেলায় জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব মোকাবিলায় সরকার যৌথ বাহিনীর অভিযান চালায়। পরে ওইসব জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। ওই সাফল্য কাজে লাগাতেই ফের যৌথ অভিযানের এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং জয়পুরহাটে যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু হয়েছে দুই দিন আগেই। সাতক্ষীরাসহ সন্ত্রাসকবলিত জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত ১৯ জেলার প্রতি এবারও বিশেষ নজরদারি রয়েছে। দুই দিন আগেই এই জেলাগুলোতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার তাই করা হবে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে নাশকতাকারী, ইন্ধনদাতা এবং তাদের অর্থের জোগানদাতাদের একটি বড় তালিকা এসেছে। ওই তালিকা ধরেই অভিযান পরিচালিত হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। তালিকায় বিএনপি-জামায়াত, ছাত্রদল, যুবদল, ছাত্রশিবির, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং শ্রমিক দলের জেলা, উপজেলা এবং থানা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নাম রয়েছে। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রয়েছে পুরনো নাশকতার একাধিক মামলা।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাশকতাকারীদের গ্রেফতারে অভিযানটি যে কঠোর হবে তা বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাব প্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এদিকে বিএনপি-জামায়াতসহ ২০-দলীয় জোটের টানা অবরোধ-হরতালে দেশজুড়ে জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর অব্যাহত রয়েছে। এতে গতকাল পর্যন্ত অন্তত ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। দুর্বৃত্তদের অব্যাহত আগুন-বোমাসহ হামলায় পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেটসহ কয়েকশ নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন অনেকেই। টানা অবরোধ-হরতালে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ঢাকা, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বগুড়া, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, সিলেট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নাজুক।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সাঁড়াশি অভিযানের পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতের চলমান আন্দোলন রুখতে ঢাকাসহ স্পর্শকাতর ২২ জেলায় ৪৯ প্লাটুন অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ আনসার বাহিনীর সদস্য চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে। ইতিমধ্যে অধিকাংশ স্পর্শকাতর জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীসহ স্পর্শকাতর জেলাগুলোতে বাড়তি সতর্কতার পাশাপাশি মোতায়েন করা হচ্ছে র‌্যাব ও পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য। অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি ছাড়াও এসব জেলায় সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে। আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত রাজধানী ঢাকাকে নিরাপদ রাখতেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। রাজধানী ও আশপাশের জেলাগুলোতে যৌথবাহিনী নামছে আজ রাতেই।