Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বাংলাদেশের জন্য ঋণের শর্ত কঠিন করল বিশ্বব্যাংক

world-bankগ্রেস পিরিয়ড কমিয়ে আনাসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য প্রদেয় ঋণের শর্ত কঠিন করেছে বিশ্বব্যাংক। এতে গ্রেস পিরিয়ড-পরবর্তী ১০ বছরে বার্ষিক ২ শতাংশের পরিবর্তে ৩ দশমিক ১২৫ শতাংশ হারে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ফলে আগামী অর্থবছর থেকে বাজেটে বৈদেশিক অর্থ পরিশোধের চাপ বাড়বে। সংস্থাটির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) মাধ্যমে ঋণের ক্ষেত্রে এ ধরনের শর্ত আরোপ করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক প্রদত্ত ঋণের ক্ষেত্রে আগে গ্রেস পিরিয়ড ছিল ১০ বছর। গ্রেস পিরিয়ডে কেবল সুদ পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু নতুন শর্তে তা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় বছর। একই সঙ্গে ঋণ পরিশোধের সময়সীমাও ৪০ থেকে কমিয়ে ৩৮ বছর করা হয়েছে। পাশাপাশি গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ার পরের ১০ বছরে যেখানে বার্ষিক ২ শতাংশ হারে মূল ঋণের কিস্তি পরিশোধের সুযোগ ছিল, সেখানে পরিবর্তন এসেছে। এখন থেকে নতুন ঋণের ক্ষেত্রে গ্রেস পিরিয়ড-পরবর্তী ১০ বছরে ৩ দশমিক ১২৫ শতাংশ হারে ঋণ শোধ করতে হবে।

chardike-ad

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা মিশন সূত্রে জানা গেছে, আইডিএ-১৭-এর আওতায় আগামী তিন বছরে সংস্থাটি বাংলাদেশকে (২০১৫-১৭) নতুন শর্তে প্রায় ৪৫০ কোটি ডলার ঋণসহায়তা দেবে। ফলে বাজেটে ঋণ পরিশোধের চাপও বাড়বে। বিশ্বব্যাংক দাবি করছে, ঋণের এ শর্ত অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাংকের বোর্ড অব গভর্নরস সংস্থাটির আর্থিক দিক বিবেচনায় নিয়ে শর্তে পরিবর্তন এনেছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, আগের ঋণগুলো থেকে সংস্থাটির মুনাফা হচ্ছে না। ফলে পরিচালন ব্যয় মোকাবেলায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ কারণে শর্ত কঠিন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা মিশনের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের নীতিমালায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তাতে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে নতুন শর্ত কেবল নতুন ঋণের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।’ তিনি বলেন, ঋণের শর্তে পরিবর্তন আসায় ভবিষ্যতে আরো বেশি ঋণ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

এদিকে এসব শর্ত আরোপের ফলে বাজেটে চাপ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ একদিকে গ্রেস পিরিয়ড যেমন কমে যাচ্ছে, তেমনি বেশি হারে ঋণ পরিশোধও করতে হবে। তাতে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে বাজেটের ওপর হঠাত্ করে চাপ বাড়বে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক ঋণের শর্তে কিছুটা পরিবর্তন এনেছে। তার পরও তুলনামূলক সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে সংস্থাটি। নতুন শর্তের আওতায় নেয়া ঋণের নিট প্রেজেন্ট ভ্যালু অনেক বেশি। এজন্য কোনো সমস্যা হবে না। তাছাড়া ঋণের এসব শর্তের ক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নেই।’

২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে দেয়া ঋণের ক্ষেত্রে গ্রান্ট এলিমেন্ট ছিল প্রায় ৬৮ শতাংশ। আগের তুলনায় শর্ত কঠিন করার কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ছক অনুযায়ী গ্রান্ট এলিমেন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান বলেন, বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে সবচেয়ে সহজ শর্তের ঋণ পেত বাংলাদেশ। তবে মাথাপিছু আয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ায় শর্ত কঠিন করেছে সংস্থাটি। এর আগেই আরেক উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশকে দুই ধরনের ঋণে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

ইআরডির ফরেন এইড বাজেট ও অ্যাকাউন্টস (ফাবা) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের একটি অন্যতম ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিশ্বব্যাংক। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইডিএ মোট ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ৫০০ কোটি ডলারের ৩১টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। অবকাঠামো, মানবসম্পদ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সংস্থাটি বাংলাদেশকে ঋণ দিয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিশ্বব্যাংকের শর্ত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ঋণের ‘ডিগ্রি অব কনসেশনালিটি’ কমে গেছে। এর পরও ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সহজ শর্তের ঋণ বিশ্বব্যাংকের। আমাদের গভর্ন্যান্সে সমস্যা আছে। সেটি দূর করতে পারলে দাতা সংস্থাগুলোর আর্থিক সহযোগিতা আরো বাড়বে।

উল্লেখ্য, চীনের এক্সিম ব্যাংক, ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি), ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি), জার্মানির সহযোগিতা সংস্থা কেএফডব্লিউ ও রাশিয়া উচ্চ সুদে ঋণ দেয়। বিশ্বব্যাংক, জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা), সৌদি ফান্ড, ওপেক ফান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা সংস্থা ইউএসএআইডি, যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা সংস্থা ডিএফআইডি, এশীয় উন্নয়ন তহবিল (এডিএফ) থেকে তুলনামূলক সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া যায়।