প্রায় সে ধরনেরই একটা অবস্থা আবার সৃষ্টি হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে। বিগত কয়েক বছরে যারা মুখ খুলে গণতন্ত্রের, স্বাধীনতার, মানবাধিকারের কিংবা নির্বাচনের কথা বলেছেন তাদের অনেকে শহীদ রুমি, আমার বন্ধু সিরাজুদ্দিন হোসেন, জহির রায়হান কিংবা বিবিসির সংবাদদাতা নিজামউদ্দিন আহমেদের মতো গুম ও খুন হয়ে গেছেন। একাত্তরের রাজাকার, আর আল বদরেরা আসত মুখোশ পরে। বিগত ছয় বছরের ছিনতাইকারীরা এসেছে পুলিশের কিংবা র্যাবের ইউনিফর্ম পরে। আপাত দৃষ্টিতে পুরুষহীন বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার ধ্বজাধারীদের ধরিয়ে দিচ্ছে একাত্তরের মতোই ছিঁচকে বিশ্বাসঘাতকেরা সামান্য কিছু টাকার লোভে।
আরো অনেক মিল দেখবেন একাত্তরের সাথে। গোড়ার দিকে হলেও মাঝে মাঝে এখানে- সেখানে অভিযান চালাত পাকিস্তানি সেনারা। সাধারণত দেশের ভেতরে ঢোকার সাহস তাদের ছিল না। মাঝে মাঝে কয়েক ডজন সামরিক যান ভর্তি সৈন্য আর দুই-চারজন বিশ্বাসঘাতক চরকে নিয়ে এরা গেরিলা আক্রমণের মতো করে হামিলা চালিয়ে অতি দ্রুত ঘাঁটিতে ফিরে যেত। হুবহু একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে এখন। রাজধানীর বাইরের বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণহীন। প্রশাসন নিজেই এখন বিপন্ন বোধ করছে। জেলা প্রশাসকেরা বিজিবি প্রার্থনা করে চিঠি লিখে মন্ত্রীদের অস্থির করে তুলেছেন। অত বিজিবি সরকার পাবে কোথায়? সুতরাং আরো ৫০ হাজার গোপালী পুলিশ নিয়োগ করো। পুলিশ বাহিনীর গ্রামাঞ্চলে যাওয়ার সাহস অনেক দিন আগেই চলে গেছে। এখন রাজধানীর বাইরে যেতে হলে অত্যাধুনিক অস্ত্র সজ্জিত পুলিশ র্যাব ও বিজিবি ডজন ডজন গাড়ি ও ভ্যানের কনভয়ে চলাচল করে। বিভিন্ন সময়ে হলিউডের দৌলতে ভিয়েতনাম যুদ্ধের অনেক ফিল্ম দেখেছিলাম। বাংলাদেশের তথাকথিত শান্তিরক্ষী বাহিনীর রাজধানীর বাইরে যাওয়ার দৃশ্য প্রায়ই আমাকে ভিয়েতনামে মার্কিন বাহিনীর কনভয় অভিযানের কথা মনে পড়িয়ে দেয়।
খাসি করে দেয়া পাঁঠা?
এসব ছবিও হয়তো শিগগির আর দেখতে পাবো না। বর্তমানে তারা যা করছে তার প্রস্তুতিস্বরূপ মিডিয়া নামে পাঁঠাটাকে তারা ২০০৯ সালেই খাসি করে দিয়েছিল। হারানো পৌরুষের স্মৃতি মনে করে খাসির দুঃখ হয়, ম্যা-ম্যা করে সে মনের আকুতি প্রকাশ করতে চায়। সেটাও সরকারের উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। মাঝে মাঝেই তারা দুটো-চারটে মিডিয়া-খাসি হত্যা করেছে এবং করছে। যারা খাসি হতে আপত্তি করেছে তাদের পরিণতি হয়েছে ভয়াবহ। সাহসী মাহমুদুর রহমানকে এত দিন বিনা বিচারে আটক রাখা এবং মাঝে মাঝে লোকচক্ষুর অগোচরে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগও প্রবল। এখন হুকুমের গোলাম দুদককে দিয়ে মামলা সাজানো হয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার পত্রিকা আমার দেশের মুদ্রণ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামী টেলিভিশনও বন্ধ আছে। এখন কোপ পড়েছে একুশে টেলিভিশনের ওপর। আমার কেন জানি মনে পড়ছে এককালে এ স্টেশনটি শেখ হাসিনার প্রিয়পাত্র ছিল। ও দিকে টেলিভিশনের টকশোতে কাকে আমন্ত্রণ করা যাবে আর কাকে যাবে না তার একটা অলিখিত তালিকা স্টেশনগুলোকে আগেই দেয়া হয়েছিল। তাতেও সরকারের মনঃস্তুষ্টি হয়নি। টকশোর অতিথিদের বিরুদ্ধে মন্ত্রীদের কুৎসা-নিন্দা বৃষ্টি শুরু হতে দেরি হয়নি।
সরকারের জানাই ছিল তাদের নির্বাচন চুরি, গণতন্ত্র চুরি ও স্বাধীনতা চুরির বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান ঘটবেই। তার আগেই সম্প্রচার বিধির নামে মিডিয়া নামক খাসিটার চার পায়ে দড়ি বেঁধে দেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে আবার টেলিভিশন স্টেশন মালিক ও সাংবাদিকদের সচিবালয়ে ডেকে পাঁচ মন্ত্রী একযোগে দলাইমলাই করেছেন। মনে রাখতে হবে যে মালিকপক্ষগুলোর মাথা নানা কারণেই সরকারের কাছে বাঁধা। এরা সাধারণত বিভিন্ন শিল্প-গ্রুপের মালিক। সরকারের অনেক নুন খেয়েছেন এরা, ভবিষ্যতেও খেতে হবে। হয়তো সরকারের চোখের সামনে গুরুতর অন্যায় কেউ কেউ করেছেন অতীতে, সরকার অপত্য স্নেহে ক্ষমা করে দিয়েছে। এখন মাটিতে টেনে দেয়া লাইনের একচুল এ দিক-ও দিক পা দিলে অনেক দড়িতে এক সাথে টান পড়বে। আবার টেবিলের তলা দিয়ে ডান হাত-বাঁ হাতের কারবার তো হরহামেশাই হচ্ছে। দুই-তিন মাস আগে এ রকম একটা গুজব শুনেছিলাম। সত্য-মিথ্যা বলতে পারব না। তবে একজন তথাকথিত বামপন্থী মিডিয়া ব্যক্তিত্বের রাতারাতি ১৮০ ডিগ্রি মোড় ফেরা লক্ষ করেছি।
বিদেশীদের চোখে ঠুলি বাঁধা?
বাংলাদেশে এখন বলতে গেলে একমাত্র ঘটনা নিরপেক্ষ নির্বাচন আর গণতন্ত্রের দাবিতে অবরোধ আন্দোলন। সেটা সরকারের জন্য দুঃসংবাদ, কেননা দেশে অবরোধ চলছে শুনে ধীরে ধীরে আরো মানুষ অবরোধে শরিক হচ্ছে। সুতরাং এ খবর প্রচার করা যাবে না। সুখবর কোনটাকে বলবেন তাহলে? মন্ত্রীদের কেউ কেউ বলেছেন, অবরোধ সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। পরিস্থিতি কয়েক দিনের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবেন বলে আশ্বাস বিভিন্ন মন্ত্রী তিন সপ্তাহ ধরে দিয়ে চলেছেন। এমনকি কেউ এ দেশে আছেন যিনি মন্ত্রীদের আশ্বাসে বিশ্বাস করেন? সে খবর আপনি কী করে প্রচার করতে পারেন, কেননা অন্য কোনো মন্ত্রী বলেছেন, অবরোধ-টবরোধ কিচ্ছু হচ্ছে না, ওসব একদম বাজে কথা!
অনেক ব্যাপারের উল্লেখ করে ফেললাম। এগুলো অবশ্যই খবর। এগুলোর যেকোনোটা প্রকাশ করতে হলে অবশ্যই মেনে নিতে হবে যে বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্রের দাবিতে একটা অবরোধ এবং সেই সাথে মাঝে মাঝে হরতাল চলছে। এবং আরো মেনে নিতে হবে যে প্রায় চার সপ্তাহ থেকে গ্রেফতার, গুম, হত্যা, নির্যাতন ইত্যাদি চালিয়েও সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। সুতরাং মিডিয়াকর্মী যদি বর্তমান বাংলাদেশ সম্বন্ধে কোনো সংবাদই প্রচার না করেন তাহলেই শুধু মন্ত্রীদের হুকুম মেনে চলা তাদের পক্ষে সম্ভব হতে পারে।
লাশের রাজনীতির নতুন মাত্রা
শুধু বিশ্বসমাজই নয়, দেশের ভেতরের যেসব মহলের ওপর সরকারের নির্ভরশীলতা অত্যধিক তারাও এখন সরকারকে সংলাপে বসে সমঝোতায় আসতে এবং সবার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে পরামর্শ দিচ্ছে। অস্বীকার করার উপায় নেই ব্যবসায়ী সমাজের উদার অর্থ ও অন্যান্য সাহায্য বিগত ছয় বছরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির বিরাট একটা খুঁটি ছিল। ২০০৬ সালের অক্টোবরের লগি-লাঠি-বৈঠার আন্দোলনের সময় থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে জানাজানি হয়ে গেছে যে জনতা ভাড়া করতে, সে জনতাকে যথাস্থানে নিয়ে যেতে বাস ও ট্রাক ভাড়া বাবদ বহু কোটি টাকা ব্যবসায়ীসমাজ আওয়ামী লীগকে দিয়েছে। সব দেশেই ব্যবসায়ীসমাজ সরকারের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখতে চায়। কিন্তু গণবিরোধী সরকারকে সমর্থন দেয়ার বেলায় তারা হুঁশিয়ার থাকে। সারা দেশের মানুষ যখন গণতন্ত্র চেয়েছেন, গণতন্ত্র না দিলে সরকারকে উৎখাত করতে চেয়েছেন, তখন ব্যবসায়ীসমাজ গণবিরোধী অবস্থান নিয়েছে, কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করে গণবিরোধী সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে। ব্যবসায়ীসমাজের কান্নাকাটিতে এখন দেশের মানুষের মন গলবে কি?
সেই ব্যবসায়ীসমাজও এখন করজোড়ে সরকারের কাছে কাকুতি-মিনতি করছে, বলছে, ‘দয়া করে এবার সংলাপে বসুন, নইলে আমরা সর্বহারা হয়ে যাব।’ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে লাঠালাঠি করতে গিয়ে তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা সরকার আগেই হারিয়েছে। পাঁচ লাখ বিদেশী ম্যানেজার আমদানি করে গার্মেন্ট শিল্পের বারোটা আগেই বাজিয়ে দেয়া হয়েছে। মালিকেরা বলছেন, অবরোধ আর হরতালের কারণে বিদেশী বায়াররা ৪০ শতাংশ অর্ডার ইতোমধ্যেই বাতিল করে দিয়েছেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট হোসেন খালেদ গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার বলেছেন, অবরোধের প্রথম ১৬ দিনে তাদের লোকসান হয়েছে ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ডিসিসিআই এখন বলছে, বিএনপি ও ২০ দলের সাথে সংলাপই সঙ্কট নিরসনের একমাত্র পন্থা। মাত্র সেদিন সুজন একই পরামর্শ দিয়েছে, সম্পাদকেরা তথ্যমন্ত্রীকেও বলেছেন একই কথা, দেশী ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টসহ সব বিদেশী সাহায্যদাতা এবং ব্যবসায়িক অংশীদার সরকার ও সংস্থা বরাবরই এই একই কথা বলেছে। দেশে একজন ব্যক্তি কারো পরামর্শই শুনতে রাজি নন বলেই বাংলাদেশ অতলে তলিয়ে যেতে বসেছে।
খালেদা জিয়ার স্বামীকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছে। খালেদার অস্তিত্ব বিলোপেরও কোনো চেষ্টার ত্রুটি রাখা হয়নি। খালেদাকে তার বাড়ি এবং চার দশকের সংসার থেকে উৎখাত করা হয়েছে, রাজনৈতিক মামলা সাজিয়ে তার ছেলেদের নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে, ইট আর বালুর ট্রাক দিয়ে তাকে ভাড়া বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া হয়নি, চার সপ্তাহ ধরে নিজের কার্যালয়ে প্রায়-শরণার্থী জীবন যাপন করতে তিনি বাধ্য হচ্ছেন। একের পর এক বেশুমার মিথ্যা মামলা সাজানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে। তাকে নির্মূল করে দেয়ার নির্দেশের প্রতীক্ষা করছেন নারায়ণগঞ্জের গডফাদার শামীম ওসমান। সরকারের মন্ত্রীরা অনর্গল তাকে গ্রেফতার করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। তার মানসিক স্বাস্থ্য নষ্ট করাই যে সরকারের উদ্দেশ্য তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ঠিক এরকম পরিস্থিতিতে তার ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা গেছেন মালয়েশিয়ায়। মায়ের সীমাহীন ভোগান্তি যে তার মৃত্যু ত্বরান্বিত করেনি কে বলবে? এই আকস্মিক বজ্রপাতে খালেদা জিয়ার মনের অবস্থা কেমন হতে পারে সরকারের মন্ত্রীরা ছাড়া অন্য সবাই তা বুঝবেন। সঙ্গত কারণেই তার চিকিৎসক সিডেটিভ ইনজেকশন দিয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সে খবর প্রধানমন্ত্রীর অজানা থাকার কথা নয়। খালেদার কার্যালয়ের সব খবর বিদ্যুৎ গতিতে তার কানে পৌঁছে যায়। বেছে বেছে ওই সময়টাতেই তিনি সমবেদনা জানাতে খালেদার কার্যালয়ে গেলেন। খালেদার উপদেষ্টা-সহায়কদের কি উচিত ছিল ওই অবস্থায় তার ঘুম ভাঙিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সামনে হাজির করা? প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীরা কোরাস জুড়ে দিলেন ঘুমন্ত খালেদা জিয়া জাগ্রত প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করেছেন। হাতে-পায়ে দড়ি বাঁধা, আর আগেই খাসি করা মিডিয়া ‘অপমান, অপমান’ বলে চিৎকার জুড়ে দিলো। হাসিনার রাজনৈতিক জীবনে কি এমন একটিও দিন ছিল যে দিন তিনি খালেদাকে অপমান করার চেষ্টা করেননি?
জাতির জননী, গণতন্ত্রের জননী
পরলোকগত কোকোর দাফন নিয়েও পরস্পর বিরোধী প্রচারণার অবধি ছিল না। কেউ যেন এক মন্ত্রীর মাথায় ঢুকিয়েছিল আওয়ামী লীগ কোকোর দাফনে অংশ নিলে খালেদাকে শাস্তি দেয়া হবে। পরে সে আইডিয়া পরিত্যক্ত হলো। শহীদ জেনারেল ও রাষ্ট্রপতি জিয়ার ছেলে হিসেবে সামরিক গোরস্থানে সমাহিত হওয়ার অধিকার কোকোর ছিল। সরকার সেখান থেকেও তাকে ‘নির্বাসিত’ করেছে। লন্ডনে কোকোর গায়েবানা নামাজে জানাজায় তারেক রহমান তার অতি আদরের ভাই সম্বন্ধে কিছু বললে তা প্রকাশ না করার নির্দেশ আগে থেকেই মিডিয়া-খাসিকে দেয়া হলো। এ দিকে দেশের কোথায় গাড়ি পুড়েছে, কোথায় পুড়েছে বাস এবং সেটা যে সরকারের লোকেরাই করেনি তার নিশ্চয়তা কী। এসবের জন্য খালেদাকে ‘হুকুমের আসামি’ করা হচ্ছে। এবং মন্ত্রীরা তার গ্রেফতার নিয়ে এমন জল্পনা-কল্পনা শুরু করলেন যে কানে তালা ধরে গেল। পুলিশ, র্যাব আর বিজিবিতে ইউনিফর্ম পরা আওয়ামী লীগ ঠ্যাঙাড়েরাও যোগ দিলেন সে জল্পনায়। খালেদার মাথা খারাপ করার চেষ্টা করতে গিয়ে মন্ত্রীদেরই যেন মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা গলাকাটা মুরগির মতো অর্থহীন নাচানাচি করছেন।
আসলে এই মন্ত্রী ও ইউনিফর্মধারী আওয়ামী লীগ নেতারা আজো খালেদা জিয়ার আসল পরিচয় জানতে পারেননি। তার স্বামী বাকশালী স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি জিয়া খুন হলেন সেজন্য। স্বামীর অসমাপ্ত কাজ কাঁধে তুলে নিলেন খালেদা। দৃঢ় হাতে বিএনপির হাল চেপে ধরলেন। সামরিক স্বৈরতন্ত্র আমদানি করে বাধা সৃষ্টি করা হলো। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব স্বৈরতন্ত্রকে জিইয়ে রেখে গণতন্ত্রে উত্তরণ নয় বছর বিলম্বিত করলেন। খালেদা জিয়া হাল ছেড়ে দেননি। শত ভয়-ভীতি ও চোখ-রাঙানোকে উপেক্ষা করে তিনি স্বৈরতন্ত্রকে টেনে নামালেন, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনলেন। বিগত ছয় বছরের নির্যাতন-নিপীড়নের কথা তো আগেই বললাম।
এক ছেলে সাত বছর ধরে নির্বাসিত। সাত বছরেরই নির্বাসনের পর অন্য ছেলে এখন মৃত, সদ্য সমাহিত। তার নিজের বিরুদ্ধে অজস্র সাজানো মামলা। অহরহ তাকে গ্রেফতারের, হত্যার ভয় দেখানো হচ্ছে। শোকে-দুঃখে খালেদা জিয়া মৃতকল্প। এখন কী করবেন তিনি? গণতন্ত্রের আন্দোলন ছেড়ে দিয়ে তসবিহ হাতে দিন কাটাবেন? ক্ষেপেছেন? জাতি তাকে নেতৃত্ব দিয়েছে, গণতন্ত্রের জননী আখ্যা দিয়েছে। অর্ধমৃত হলেও মৃত তো তিনি নন। সুতরাং মাঝ নদীতে হাল ছেড়ে দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। খালেদা জিয়া শোক ঝেড়ে ফেলে আবার উঠে দাঁড়াবেন, স্বামীর অসমাপ্ত কাজ নতুন করে সমাপন করবেন। শত হলেও তিনি জাতির ও গণতন্ত্রের জননী।
(লন্ডন, ২৭.০১.১৫)
সিরাজুর রহমান: বিবিসিখ্যাত প্রবীণ সাংবাদিক